মৃতের সংরক্ষিত শুক্রাণু থেকে সন্তান, চলছে বিতর্ক

একমাত্র ছেলের মৃত্যুর দু’বছর পরে তাঁর সংরক্ষিত শুক্রাণু থেকে সারোগেসি-র মাধ্যমে যমজ নাতি-নাতনি পেয়েছেন মহারাষ্ট্রের পুণের এক দম্পতি। অথচ, গত অগস্টে মৃত ২২ বছরের এক যুবকের শুক্রাণু সংরক্ষণ করার জন্য উত্তর-পশ্চিম দিল্লি-সংলগ্ন জৌন্তি গ্রামের বাবা-মায়ের আবেদন নাকচ করেছে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস)। 

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:১১
Share:

প্রথমেশের যমজ সন্তান। নিজস্ব চিত্র

পরিস্থিতি এক, আবেদনও একই। তবে নির্দিষ্ট আইন না থাকায় পৃথক ফল পেলেন দুই প্রবীণ দম্পতি।

Advertisement

একমাত্র ছেলের মৃত্যুর দু’বছর পরে তাঁর সংরক্ষিত শুক্রাণু থেকে সারোগেসি-র মাধ্যমে যমজ নাতি-নাতনি পেয়েছেন মহারাষ্ট্রের পুণের এক দম্পতি। অথচ, গত অগস্টে মৃত ২২ বছরের এক যুবকের শুক্রাণু সংরক্ষণ করার জন্য উত্তর-পশ্চিম দিল্লি-সংলগ্ন জৌন্তি গ্রামের বাবা-মায়ের আবেদন নাকচ করেছে দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস)।

কৃত্রিম ভাবে গর্ভধারণ প্রক্রিয়ায় জড়িত চিকিৎসক, চিকিৎসা কর্মীদের যুক্তি, একই দেশে ব্যক্তি ও পরিবার-বিশেষে অধিকার ভিন্ন হতে পারে না। ২০০৩ সালে দেশের ‘অ্যাসিসটেড রিপ্রোডাকটিভ টেকনোলজি’ সেন্টারগুলির কাজে নজরদারি চালানোর উদ্দেশে ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর) একটি কমিটি তৈরি করেছিল। কিন্তু মাঝপথে কমিটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ‘সারোগেসি রেগুলেশন বিল ২০১৬’-ও আলোর মুখ দেখেনি এখনও পর্যন্ত। ফলে দেশে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় গর্ভধারণ এবং সারোগেসির বিভিন্ন নিয়ম চলছে। কেউ সুবিধা পাচ্ছেন, আবার কেউ বঞ্চিত হচ্ছেন।

Advertisement

পুণের রাজশ্রী ও নারায়ণ পাটিলের একমাত্র ছেলে, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার প্রথমেশ কর্মসূত্রে জার্মানিতে থাকতেন। সেখানেই ২০১৩ সালে ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে। টেলিফোনে পুণে থেকে রাজশ্রী বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিলেন, স্টেজ ফোর। কেমোথেরাপি চালুর আগে প্রথমেশের শুক্রাণু ওর অনুমতি নিয়ে জার্মানিতেই সংরক্ষণ করা হল। ও অবিবাহিত ছিল।’’ এর পর ভারতে এসে আরও তিন বছর বেঁচেছিলেন প্রথমেশ। মারা যান ২০১৬ সালের অক্টোবরে, ২৭ বছর বয়সে। রাজশ্রী বলেন, ‘‘কিছুতেই ওকে ছাড়া বাঁচতে পারছিলাম না। তাই নিয়মকানুন মেনে ওর শুক্রাণু জার্মানি থেকে পুণেতে নিয়ে আসি। চিকিৎসক সুপ্রিয়া পুরানিকের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং তাঁকে বলি, প্রথমেশের আত্মা আমার কাছে আছে, কিন্তু একটা দেহ আমার চাই। ওর শুক্রাণু থেকে নাতি বা নাতনি পেলে সেই দেহ আমার কাছে আসবে।’’

ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ সুপ্রিয়ার কথায়, ‘‘দেশে এ ব্যাপারে কোনও আইন এখনও নেই। তাই আমি প্রথমেশের লিখিত অনুমতিকেই গ্রাহ্য করি। তা ছাড়া, যখন সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান জন্মের প্রক্রিয়ায় ব্যাঙ্ক থেকে শুক্রাণু বা ডিম্বাণু নেওয়া হয়, তখন তো আমরা জানি না যে দাতা বা দাত্রী জীবিত রয়েছেন কিনা। তা হলে মৃত্যুর পরে কারও সন্তান হতে আপত্তি কোথায়?’’

প্রথমেশের সংরক্ষিত শুক্রাণুর সঙ্গে ডিম্বাণু-ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ডিম্বাণুর কৃত্রিম ভাবে মিলন ঘটিয়ে তৈরি ভ্রূণ প্রতিস্থাপিত হয় প্রথমেশের ৩৮ বছর বয়সি এক মাসির গর্ভে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি দু’টি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। একটি মেয়ে এবং একটি ছেলে।

তা হলে এইমস কেন অনুরূপ আবেদন গ্রাহ্য করল না? এইমসের এক মুখপাত্রের কথায়, ‘‘শুক্রাণু ব্যাঙ্কিং-এর নির্দেশিকা ও প্রোটোকল রয়েছে। কিন্তু মস্তিষ্কের মৃত্যু হওয়া কোনও মানুষের দেহ থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করে, সারোগেসির মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেওয়ার কোনও আইন ভারতে নেই। আমরা আইনি ঝুঁকি নিতে চাইনি।’’

২০০৩ সালে আইসিএমআর-এর গঠিত কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কাছে এক দম্পতি চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। ভদ্রলোক দুর্ঘটনায় আচমকা মারা যান। তাঁর শুক্রাণু আমাদের কাছে সংরক্ষিত ছিল। মৃত্যুর ৬ মাস পরে তাঁর স্ত্রী ওই সংরক্ষিত শুক্রাণু থেকে আইভিএফ প্রক্রিয়ায় সন্তান চান। সেটাই করা হয়েছিল। তবে অবিলম্বে দেশে এই সংক্রান্ত আইন পাশ হওয়া উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন