Ravenshaw University's Film Festival

সত্যজিতের ‘পথের পাঁচালী’ নিয়ে আপত্তি গেরুয়া শিবিরের, ওড়িশায় কোপ চলচ্চিত্র উৎসবে

ওড়িশার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম সোসাইটির অভিযোগ, সমকামী-রূপান্তরকামী সম্পর্ক এবং কবীরকে নিয়ে বানানো দু’টি তথ্যচিত্র নিয়ে গেরুয়া-শিবিরের ঘনিষ্ঠ পড়ুয়ারা আপত্তি তুলেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৩ ০৬:০৩
Share:

‘পথের পাঁচালী’ নিয়ে আপত্তি গেরুয়া শিবিরের। ফাইল চিত্র।

সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ দিয়ে কটকের র‌্যাভেনশ বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ শুরু হওয়ার কথা ছিল তিন দিনের একটি চলচ্চিত্র উৎসব। কিন্তু শুরুর আগেই উদ্যোক্তাদের প্রেক্ষাগৃহ থেকে বার করে দিয়ে উৎসব বন্ধের অভিযোগ উঠল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি শুভা নায়েক আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘ওঁরা আদৌ ছবিগুলি দেখেননি। সত্যজিৎকেও ছাড়ছেন না। এঁদের দাবি, ‘পথের পাঁচালী’-তে দারিদ্রকে গৌরবান্বিত করা হয়েছে আর ‘চারুলতা’-য় পরিবারের মধ্যে অবৈধ যৌন সম্পর্কের ইঙ্গিত রয়েছে। এমনকি ‘পাঁচালী’-র ইংরেজি বানান দেখিয়ে এক জন বলেছেন, ছবিতে ‘পাঞ্চালী’ অর্থাৎ দ্রৌপদীর সমালোচনা করা হয়েছে, যা হাস্যকর ছাড়া কিছু নয়!’’

শুধু সত্যজিতের ছবি নয়, ওড়িশার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম সোসাইটির অভিযোগ, সমকামী-রূপান্তরকামী সম্পর্ক এবং কবীরকে নিয়ে বানানো দু’টি তথ্যচিত্র নিয়েও গেরুয়া-শিবিরের ঘনিষ্ঠ পড়ুয়ারা আপত্তি তুলেছেন। কর্তৃপক্ষ উদ্যোক্তাদের জানিয়েছেন, ওই দু’টি ছবিতে ‘বিতর্কিত বিষয়’ রয়েছে বলে অভিযোগ জমা পড়েছে। সেগুলি বাদ দিয়েই উৎসব করতে হবে। শুভা বলেন, ‘‘আর কোনও পথ খোলা না থাকায় ওই দু’টি তথ্যচিত্রকে বাদ রেখেই আগামিকাল আমরা চলচ্চিত্র উৎসব শুরু করব। ‘পথের পাঁচালী’ দিয়েই উৎসব শুরু হবে।’’

যদিও এর পরেও গেরুয়া শিবিরের হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। গেরুয়া-ঘনিষ্ঠেরা পুলিশেও গিয়েছেন বলে তাঁরা জানান। মূলত যে দু’টি ছবি নিয়ে আপত্তি তোলা হয়, তার একটি শবনম ভিরমানি পরিচালিত ‘হাদ আনহাদ’। রামকে নিয়ে কবীরের ভাবনা ধরা হয়েছে এই তথ্যচিত্রে। অন্যটি দেবলীনা মজুমদার পরিচালিত ‘গে ইন্ডিয়া ম্যাট্রিমনি’। দেবলীনা আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘আমি স্তম্ভিত। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রেরা মিলে চলচ্চিত্র উৎসব করতে চাইছিলেন। যে ভাবে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হল, তা উদ্বেগজনক। ছাত্রেরা আমাকে বিমানের টিকিট কেটে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু আজ ওঁরা জানালেন, আমি যেন কোনও ভাবেই ওখানে না যাই। তা হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।’’

শুভা জানান, সত্যজিৎ রায়ের একগুচ্ছ ছবি (‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’, ‘অপুর সংসার’, ‘চারুলতা’, ‘কাপুরুষ’, ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ ও ‘গণশত্রু’), সমসাময়িক কিছু তথ্যচিত্র ও কাহিনিচিত্র নিয়ে তাঁরা উৎসবটি সাজিয়েছিলেন। গত রাতে দু’জন পড়ুয়া এসে তাঁকে বলেন, ‘হাদ আনহাদ’ এবং ‘গে ইন্ডিয়া ম্যাট্রিমনি’-র সেন্সরের শংসাপত্র নেই। তিনি জানান, দু’টি ছবিরই সেন্সরের ছাড়পত্র আছে এবং ‘গে ইন্ডিয়া ম্যাট্রিমনি’-র প্রযোজক খোদ ফিল্মস ডিভিশন। আজ সকাল ১০টা নাগাদ তাঁরা যখন উৎসব শুরুর তোড়জোড় করছেন, তখন প্রেক্ষাগৃহের কর্মীরা এসে পড়ুয়াদের বার করে দিয়ে সেটি তালাবন্ধ করে দেন। ওই কর্মীরা ‘কর্তৃপক্ষের নির্দেশের’ কথা বলায় উদ্যোক্তারা উপাচার্যের কাছে যান। তিনি কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তখন উদ্যোক্তারা উপাচার্যের দফতরের বাইরে ধর্নায় বসেন। এর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিষদের সঙ্গে উপাচার্যের বৈঠকের পরে জানিয়ে দেওয়া হয়, অশান্তির আশঙ্কা থাকায় চলচ্চিত্র উৎসব বাতিল করা হচ্ছে। সেই কথা শুনে বিক্ষোভর আঁচ আরও বাড়ে। তখন সন্ধ্যায় আরও একটি বৈঠকের পরে উদ্যোক্তাদের ওই দু’টি তথ্যচিত্র বাদ দিয়ে উৎসব করার শর্ত দেওয়া হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন