রাখবে কারা মারবে কারা, আসলে না নকলে?

নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরে নিরীহ প্রাণীটি এখন রাজনীতির কেন্দ্রে। মোদী-জমানার শুরুতেই যে কারণে অরুণ শৌরি বলেছিলেন, ‘‘বিজেপি সরকার হল আসলে ইউপিএ সরকার, সঙ্গে গরু।’’ গোমাংস রাখার অভিযোগে দেশের নানা প্রান্তে পিটিয়ে মারা হচ্ছে মানুষকে। এই কাজ যাঁরা করছেন, তাঁরা সকলেই নাকি গো-রক্ষক।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৭ ০৪:৪৩
Share:

গরু দুধ দেয়। এখন ভোটও দেয়।

Advertisement

নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরে নিরীহ প্রাণীটি এখন রাজনীতির কেন্দ্রে। মোদী-জমানার শুরুতেই যে কারণে অরুণ শৌরি বলেছিলেন, ‘‘বিজেপি সরকার হল আসলে ইউপিএ সরকার, সঙ্গে গরু।’’ গোমাংস রাখার অভিযোগে দেশের নানা প্রান্তে পিটিয়ে মারা হচ্ছে মানুষকে। এই কাজ যাঁরা করছেন, তাঁরা সকলেই নাকি গো-রক্ষক। প্রতিবাদ হচ্ছে, চোখে জল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সতর্কও করছেন। কিন্তু ঘটনার বিরাম কই?

কারা এই গো-রক্ষক?

Advertisement

‘ভারতীয় গো-রক্ষক দল’ নামে এক সংগঠন চালান পবন পণ্ডিত। অনেক রাজ্যেই তাঁদের সংগঠন। তিনি বলছেন, ‘‘তিন বছর হয়ে গেল, প্রধানমন্ত্রী কখনও বলছেন গো-রক্ষকদের আশি শতাংশ সমাজবিরোধী। কখনও গণপিটুনি দেখে তাঁর বুক ফেটে যাচ্ছে। অথচ সব ক্ষমতা তাঁর হাতে। এখনও পর্যন্ত নিষিদ্ধ হল না একটিও সংগঠন।’’ তা হলে যারা পিটিয়ে লোক মারছে, তারা কারা? পবনের অভিযোগ, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখুন, সব ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের শিকড় রয়েছে আরএসএস-বিশ্ব হিন্দু পরিষদে। আসল গো-রক্ষকেরা কখনও মানুষ খুন করেন না।’’

গো-রক্ষকদের মধ্যে ‘আসল-নকল’ আছে নাকি?

অলওয়ারে গণপিটুনিতে মারা যাওয়ার আগে পেহলু খান বলেছিলেন, তাঁর উপরে হামলাকারীরা ছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দলের লোক। ঝাড়খণ্ডে গণপিটুনিতে প্রৌঢ় আলিমুদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনাতেও জড়িয়েছে বজরং দলের নাম। সেই ঘটনায় বিজেপির স্থানীয় নেতাকে ধরেছে পুলিশ। ওড়িশায় ধরা পড়েছে বজরং দলের দুই সদস্য। আবার গত কাল মহারাষ্ট্রে একটি চ্যানেলের স্টিং অপারেশনে দেখা গিয়েছে, সেখানে টাকার বিনিময়ে গোমাংস নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছেন বজরং দলের নেতারাই।

বজরং দল আসলে বিশ্ব হিন্দু পরিষদেরই যুব সংগঠন। দেশে সাড়ে চারশো গোশালা চালায় তারা। সংগঠনের নেতা মহেন্দ্র রাওয়াত আজ বলেন, ‘‘হতে পারে অভিযুক্তরা কখনও বজরং দলে ছিলেন। এখন অযথা বদনাম করা হচ্ছে। যেমন, ঝাড়খণ্ডের যে এলাকায় ঘটনা ঘটেছে, সেখানে বজরং দলের অফিস অনেক বছর বন্ধ।’’ বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা সুরেন্দ্র জৈনের দাবি, ‘‘গত দশ বছরে পঞ্চাশেরও বেশি পুলিশ ও নিরীহ গো-রক্ষক মারা গিয়েছে গো-ঘাতকের হাতে। গো-রক্ষকেরও নিজেকে বাঁচানোর অধিকার আছে। আসলে গো-মাংস কারবারিদের লবি বদনাম করছে সংগঠনের।’’ কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার অভিযোগ,
‘‘গো-সেবা নয়, রাজনীতি করাটাই বিজেপি-সঙ্ঘ পরিবারের লক্ষ্য। যাতে বাকি বিতর্ক ঢেকে যায়। না হলে রাজস্থান, হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে সরকারি গোশালায় অনাদরে গরু মারা যায়
কী করে ?’’

এরই গত বুধবার সঙ্ঘের সদর দফতরের শহর নাগপুরে সেলিম ইসমাইল শাহ নামে এক ব্যক্তিকে পেটানো হয় গোমাংস নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে। পরে দেখা যায়, সেলিম বিজেপিরই সংখ্যালঘু বিভাগের সদস্য। যা দেখে বিজেপি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এখন প্রশ্ন তুলেছে, এই গো-রক্ষকেরা কারা?

আসল-নকল খুঁজতে গাঁ উজাড় হওয়ারই জোগাড়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন