National News

টাইম ম্যাগাজিনে মোদীকে ‘ডিভাইডার ইন চিফ’ বলেই কি কেন্দ্রের রোষে লেখক?

আতিশের বাবা সলমন তাসির ছিলেন পাকিস্তানি ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক। মা ভারতীয় সাংবাদিক তাভলিন সিংহ। আতিশের এই পাকিস্তানী যোগ গোপন করার অভিযোগই এনেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৯ ১১:১০
Share:

আতিশ তাসির। —ফাইল চিত্র

ভারতের ‘ডিভাইডার ইন চিফ’— লোকসভা নির্বাচনের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে লেখা টাইম ম্যাগাজিনের এই কভার স্টোরিই কি কাল হল আতিস তাসিরের? বছর আটত্রিশের এই লেখকের ‘ওভারসিজ সিটিজেনস অব ইন্ডিয়া’ বা ‘ওসিআই’ কার্ড (বর্তমানে যার নাম পার্সন অব ইন্ডিয়ান অরিজিন বা পিআইও) বাতিল হওয়ার পরে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে। বৃহস্পতিবারই আতিশের প্রবাসী ভারতীয় নাগরিকের তকমা কেড়ে নিয়েছে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। কেন্দ্রের যুক্তি, আতিশের বাবা যে পাকিস্তানি, সেই তথ্য লুকিয়েছেন তিনি। যদিও নানা মহলে গুঞ্জন এতটাই তীব্র হয় যে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, টাইম ম্যাগাজিনের ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে এই সিদ্ধান্তের কোনও সম্পর্ক নেই।

Advertisement

বিতর্ক অবশ্য এখানেই থামেনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের মুখপাত্র বসুধা গুপ্ত টুইটারে দাবি করেন, ‘ওসিআই/পিআইও সংক্রান্ত বিতর্কের জবাব দেওয়া বা অভিযোগ জানানোর জন্য তাসিরকে সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনওটাই করেননি।’ কিন্তু এই তথ্য মিথ্যে বলে কিছুক্ষণের মধ্যেই টুইটারে দাবি করেন লেখক। একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘এটা অসত্য। কনসাল জেনারেল আমার জবাব যে পেয়েছেন, এটা তার প্রাপ্তি স্বীকারের প্রমাণ। জবাব দেওয়ার জন্য আমাকে ২১ দিন নয়, ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রক (কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক) থেকে আমি এখনও কোনও কিছু শুনিনি।’ জন্মসূত্রে ব্রিটিশ নাগরিক আতিশের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের পথে যেতে পারেন তিনি।

আতিশের বাবা সলমন তাসির ছিলেন পাকিস্তানি ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক। মা ভারতীয় সাংবাদিক তভলিন সিংহ। আতিশের এই পাকিস্তানি যোগ গোপন করার অভিযোগই এনেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। বৃহস্পতিবার বসুধা গুপ্ত পর পর টুইটারে জানান, ‘আতিশের প্রয়াত বাবা যে পাকিস্তানের নাগরিক, আবেদনপত্রে সেই বিষয়টি গোপন করেছিলেন তিনি। তাঁকে জবাব দেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি তা দিতে পারেননি। তাই ১৯৫৫ সালের ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী আতিশ আলি তাসির ওসিআই কার্ড পাওয়ার অযোগ্য। স্পষ্ট ভাবেই তাঁর দেওয়া মূল তথ্য মেলেনি এবং তিনি তথ্য গোপন করেছেন।’

Advertisement

আরও পডু়ন: গভীর নিম্নচাপ থেকে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হল বুলবুল, অভিমুখ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দিকে

দেশের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকরা এই ‘ওভারসিজ ইন্ডিয়ান সিটিজেন’ বা ওসিআই কার্ড পাওয়ার যোগ্য। এ ছাড়া প্রায় একই রকম আইন ছিল ‘পার্সন অব ইন্ডিয়ান অরিজিন’-এর ক্ষেত্রে। ২০১৫ সালে এই দু’টির সংযুক্তিকরণ করে কেন্দ্র। সেই আইনেই ২০১৫ পর্যন্ত ওসিআই এবং তার পর থেকে পিআইও কার্ড ছিল আতিশের। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তাঁর সেই অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার পরেই নানা মহলে শুরু হয় বিতর্ক। প্রশ্ন ওঠে, টাইম ম্যাগাজিনের ওই প্রতিবেদনের জন্যই কেন্দ্রের বিরাগভাজন হয়েছিলেন আতিশ। তার জেরেই কি এই সিদ্ধান্ত মোদী সরকারের।

এ বছরের লোকসভার ভোটগ্রহণ শেষে এবং ফল ঘোষণার আগে টাইম ম্যাগাজিনের আন্তর্জাতিক সংস্করণের কভার স্টোরি ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে। আতিশ তাসিরের ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ভারতের ‘ডিভাইডার ইন চিফ’। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র আগে কখনও এতটা বিভক্ত হয়নি। তার মধ্যে গণপিটুনি, উত্তরপ্রদেশের কুর্সিতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যোগী আদিত্যনাথকে বসানো, মালেগাঁও বিস্ফোরণে অভিযুক্ত সাধ্বী প্রজ্ঞাকে প্রার্থী করার মতো বিজেপির একাধিক সিদ্ধান্তের সমালোচনাও ছিল। এই প্রশ্নও তোলা হয়েছিল, ভারত কি আরও পাঁচ বছর এই সরকারকে সহ্য করতে পারবে?

টাইম ম্যাগাজিনের সেই কভার পেজ। —ফাইল চিত্র

সেই সময়ই বিজেপি এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। নরেন্দ্র মোদীকে বদনাম করতেই এই ধরনের প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন দলের নেতারা। লেখকের পাকিস্তানি যোগ তুলে তাঁদের বক্তব্য ছিল, এর পিছনে ‘পাকিস্তানের অ্যাজেন্ডা’ কাজ করেছে। পরে মোদীও বলেছিলেন, টাইম ম্যাগাজিন বিদেশি। লেখকও তাঁর পাকিস্তানি ব্যবসায়ী পরিবারের যোগের কথা স্বীকার করেছেন। লেখকের বিশ্বাসযোগ্যতা কতটা, এটাই তার প্রমাণ।

আরও পডু়ন: সরকার অনিশ্চিতই মহারাষ্ট্রে, হোটেলবন্দি শিবসেনারা

এ বার সেই আতিশের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, ওই প্রতিবেদনের খেসারতই আতিশকে দিতে হল কি না। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বক্তব্য, এটি পুরোপুরি ভুল ব্যাখ্যা। এর কোনও ভিত্তি নেই।

কিন্তু তাতেও বিতর্ক থামেনি। কংগ্রেস নেতা শশী তারুর তোপ দেগেছেন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। লেখকের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর টুইট, ‘সরকারি মুখপাত্র মিথ্যে কথা বলছেন, এটা বেদনাদায়ক।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন