পুলিশ নয়, গোহত্যা নিয়েই এখন চিন্তা বেশি যোগীর!

গোহত্যার অভিযোগে বুলন্দশহরের চিঙ্গারওয়াতি থেকে তিন কিমি দূরে নয়াবংশ গ্রামের সাত জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করে তদন্তে নেমেছে পুলিশও। এই সাত সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে গোহত্যার অভিযোগ দায়ের করেছেন হিংসায় মূল অভিযুক্ত বজরং দলের নেতা যোগেশ রাজ।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বুলন্দশহর শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৯
Share:

চাপের মুখে যোগী আদিত্যনাথ।—ফাইল চিত্র।

বুলন্দশহর জ্বললেও তিনি নিষ্ক্রিয়— এমন অভিযোগ উঠেছিল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে। সেই চাপের মুখে মঙ্গলবার রাতে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। কিন্তু তাতে সমালোচনা বাড়ল বৈ কমল না। কারণ, বৈঠকে হিংসা এবং পুলিশ ইনস্পেক্টর সুবোধকুমার সিংহ এবং যুবক সুমিতকুমার সিংহের হত্যা নিয়ে নীরবই থাকলেন তিনি। বরং গোহত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিলেন। তবে কাল যোগী সুবোধকুমারের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন।

Advertisement

গোহত্যার অভিযোগে বুলন্দশহরের চিঙ্গারওয়াতি থেকে তিন কিমি দূরে নয়াবংশ গ্রামের সাত জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করে তদন্তে নেমেছে পুলিশও। এই সাত সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে গোহত্যার অভিযোগ দায়ের করেছেন হিংসায় মূল অভিযুক্ত বজরং দলের নেতা যোগেশ রাজ। এদের মধ্যে এক জনের বয়স ১০ এবং এক জনের বয়স ১২। ফলে তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, যোগেশের অভিযোগ কেন এত গুরুত্ব পাচ্ছে?

সোমবার সকালে বুলন্দশহরে ২৫টি গবাদি পশুর দেহ উদ্ধার ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। গোহত্যার গুজব ছড়িয়ে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি পথে নামলে ছড়ায় হিংসা। খুন হন সুবোধ ও সুমিত। এই ঘটনায় গোহত্যা এবং হিংসার ঘটনা নিয়ে দু’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যোগেশ সোমবার থেকে ফেরার। তাঁকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে বজরং দল। যদিও দলীয় নেতৃত্বের বিশ্বাস, তিনি নির্দোষ। বুধবার ভিডিয়ো প্রকাশ করে যোগেশও দাবি করেছে, ঘটনাস্থলে সে ছিল না। কিন্তু পুলিশের দেওয়া ফুটেজে তাকে দেখা গিয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: হিন্দুত্বের ছক মোদীর, খোঁচা যোগীকেও

এ হেন যোগেশের অভিযোগের উপরে ভিত্তি করে মঙ্গলবার নয়াবংশ গ্রামে হানা দেয় পুলিশ। বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চলে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির দুই পড়ুয়াকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তিন-চার ঘণ্টা পরে অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয়। এফআইআর-এ নাম রয়েছে সরফুদ্দিন এবং পারভেজের। সরফুদ্দিনের ভাই মহম্মদ হুসেনের দাবি, ভুল করে সরফুদ্দিনের নাম এফআইআর-এ থেকে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘২৯ নভেম্বর থেকে সরফুদ্দিন বাইরে ছিলেন। গত কাল তিনি গ্রামে ফেরেন।’’ ঘটনার দিন গ্রামে ছিলেন না পারভেজও। এ ছাড়া গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত সুদাইফ চৌধুরি কোনও দিনই এই গ্রামে থাকতেন না। এফআইআর-এ নাম থাকা ইলিয়াস এবং শরাফত— দু’জনেই বহু দিন আগে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছেন।

বুলন্দশহরের হিংসার পিছনে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন উত্তরপ্রদেশের ডিজি ও পি সিংহ। কেন? তিনি বলেন, ‘‘কেন বাবরি ধ্বংসের বর্ষপূর্তির তিন দিন আগে এই কাণ্ড ঘটল, তা খতিয়ে দেখতে হবে।’’ বস্তুত রাজ্য পুলিশ যে প্রাথমিক তদন্ত-রিপোর্ট দিয়েছে, তা থেকে উঠে এসেছে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন। যেমন গোহত্যার গুজব ছড়ানোর জন্য সোমবার কেন বাছা হল? সে দিন ১০ লক্ষ মুসলমান নমাজের জন্য বুলন্দশহরে জড়ো হয়েছিলেন। ফলে এ দিন গোলমাল পাকালে সংঘর্ষের সম্ভাবনা যে বেশি ছিল, তা স্পষ্ট।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, গবাদি পশুদের মেরে আখের খেতে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশেরই একাংশ বলছে, গোহত্যার গুজব ছড়াতে এই কথা প্রচার করা হয়। এ ছাড়া, দিনক্ষণ সময় মেনে বজরং দল, আরএসএস, বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা কী করে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেলেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন