বুলন্দশহরের হত্যাকাণ্ডকে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন ‘দুর্ভাগ্যজনক’। কিন্তু রাজস্থানে বিধানসভা ভোটের প্রচারের শেষ দিনে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক ঢিলে অন্তত দু’টি পাখি মারতে চেয়েছেন। এক দিকে বুলন্দশহরের রাজনৈতিক মেরুকরণের সরাসরি ফায়দা রাজস্থানে নিতে চাইছেন তিনি। অন্য দিকে, উত্তরপ্রদেশের ঘটনাকে ‘আইনশৃঙ্খলার অবনতি’ বলে আখ্যা দিয়ে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে।
উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোট হবে লোকসভার পরে। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের তারিখ, ৬ ডিসেম্বরের পরের দিনই রাজস্থানে ভোট। গো-বলয়ের রাজ্যটিতে মেরুকরণের ফায়দা তুলতে মরিয়া মোদী। উত্তরপ্রদেশে বিজেপি শিবিরের অন্দরে যোগী-বিরোধিতা তীব্র হয়ে উঠেছে। মোদী নিজে প্রথম দিন থেকেই যোগীকে মুখ্যমন্ত্রী করতে চাননি। মনোজ সিন্হার মতো এক জন ভূমিহার নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী করে রাজ্য নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেয়েছিলেন তিনি। যুক্তি ছিল, ভূমিহারেরা উত্তরপ্রদেশে সংখ্যায় খুবই কম। তাই ভূমিহার মুখ্যমন্ত্রী সব সম্প্রদায়কে নিয়ে চলতে পারবেন। কিন্তু সঙ্ঘ পরিবারের চাপে মোদীর এই কৌশল খাটেনি। রাজ্য নেতাদের একাংশের অভিযোগ, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী যত না সন্ন্যাসী, তার চেয়ে বেশি গোরক্ষপুরের ঠাকুর নেতা। এখন ঠাকুরদের আধিপত্য কায়েম হয়েছে পুলিশ প্রশাসনেও। তা ছাড়া, যোগী নাথ সম্প্রদায়ের ‘কানফাট্টাইয়া’ সন্ন্যাসী। অন্য সম্প্রদায় ও অন্য গোষ্ঠীর সন্ন্যাসীদের অনেকেই তাঁর বিরোধী। এবং বহু বিজেপি নেতাই নাকি ২০১৯-এর আগে অন্য কাউকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী করে বড় চমক দেখিয়ে লোকসভা ভোটে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন মোদীকে। এ সব ঘটনাই চাপ সৃষ্টি করেছে যোগীর উপরে।
দাদরির ঘটনা যখন হয়, তখন অখিলেশ যাদব ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি তখন দায় চাপিয়েছিল সমাজবাদী পার্টির উপরে। আবার মুজফ্ফরনগরে যখন জাঠ-মুসলমান সংঘাত হয়, তখনও ভোটের আগে ফায়দা তুলেছে বিজেপি। এখন কেন্দ্র ও উত্তরপ্রদেশ, দু’জায়গাতেই বিজেপি ক্ষমতায়। সঙ্ঘ পরিবারের যদিও প্রশ্ন, যোগী যদি অযোধ্যা-আবেগ এবং এই ধরনের সংঘাতের আবহ তৈরি করে হিন্দুত্ববাদীদের আরও সুসংহত করে ফেলেন, সে ক্ষেত্রে কী ভাবে ভোটের আগে তাঁকে সরানো সম্ভব? তাতে তো বিজেপিরই ক্ষতি!
মোদী আর্জেন্টিনা থেকে ফিরেই আজ সকালে যান জয়পুরে। সেখানে সভায় হিন্দুত্বের পক্ষে সওয়াল করেন। ও দিকে অমিত শাহ বুলন্দশহরের ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলার পাশাপাশিই অভিযোগ করেছেন, ‘‘এ এক গভীর ষড়যন্ত্র বিজেপির বিরুদ্ধে। আমরা এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছি না। কিন্তু বিরোধীরা করছে। উত্তরপ্রদেশে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন হয়েছে। রিপোর্ট এলেই সত্য প্রকাশিত হবে। ঘটনার সঙ্গে যাবতীয় যোগাযোগের অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিজেপি। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের জাতীয় মুখপাত্র বিনোদ বনশল বলেছেন, ‘‘এ ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। আমাদের বদনাম করার জন্য প্রতিপক্ষ এ সব কাজ করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy