coronavirus

করোনার এই অন্ধকারে আলোর রেখা পড়ছে যে সব জায়গা থেকে

শুধু ব্যক্তিজীবন নয়, দেশ জুড়ে করোনার দুর্গম অন্ধকারে আলো ফেলায় প্রয়াসী নানা উদ্যোগী প্রতিষ্ঠান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০ ১৮:৪৩
Share:

করোনার সময় এ ভাবেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সহ-নাগরিকরা। ছবি: পিটিআই।

শারীরিক দূরত্ব থাকুক। কিন্তু এখন সময় সামাজিক বন্ধনের।

Advertisement

বিশ্বজোড়া লকডাউন। বিদেশ থেকে এসে নিজের বাড়িতে বহু মানুষ এখন কোয়রান্টিনে। চোদ্দো দিনের গৃহবন্দিত্বের মধ্যেও এই জীবনকে তাঁরা নানা ভাবে তুলে ধরছেন। বালিগঞ্জ নিবাসী
শিল্পোদ্যগী উজ্জ্বল সিংহ যেমন বললেন, “আমাদের পুজোর ঘর এখন নাগালের বাইরে। সেখানে আমেরিকা ফেরত আমার দুই পুত্র রিশিথ আর ঋত্বিক কোয়রান্টিনে আছে। দুই পুত্রই পুজো করছে।”

উজ্জ্বল সিংহের মা চিত্রিতা আর স্ত্রী জয়িতা গত ন’দিন ধরে ঠাকুরঘরে যেতে পারছেন না। পুজো করছেন দুই ছেলে। আগের প্রজন্মের হাত হয়ে এই পুজোর ভার যেন তুলে নিয়েছে এই প্রজন্ম। শুধু তাই নয়, পুজো হয়ে গেলে যেন এ প্রজন্মের ভাবনাচিন্তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই হোয়াটসঅ্যাপে ছবি পৌঁছে যাচ্ছে, ‘পুজো ইজ ডান।’

Advertisement

আরও পড়ুন: করোনায় আক্রান্ত বিলেতফেরত ছেলে, ঘুরে বেড়ালেন ডিএসপি বাবা

এত দিন যা হয়নি এ বার তা হচ্ছে।

বহহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত মধুরিমা অফিসের কাজে জার্মানি গিয়েছিলেন। তড়িঘড়ি তাঁকে দেশে ফিরতে হয়। গত আট দিন তিনি বাড়ির একতলার গেস্ট রুমে নিজেকে গৃহবন্দি করেছেন। “বাড়ির পরিচারিকারাও ছুটিতে। আমার বর বাসন মাজা থেকে ঘর ঝাঁট দেওয়া, খাবার তৈরি করে আমায় খাবার পৌঁছে দিয়ে যাওয়া অবধি সব কাজ নিজে করছে। চার বছরের বিবাহিত জীবনে ওকে কোনও দিন জল ঢেলে খেতে দেখিনি!” বিস্মিত মধুরিমা।

নিজের এলাকায় বরাবর বদরাগী লোক হিসেবে পরিচিত সঞ্জয় ঘোষকে কেউ পছন্দ করতেন না। কিন্তু আজ ভবানীপুর বস্তির কিছু মানুষের কাছে তিনি ‘ভগবান’। ওই এলাকার কালুয়া সিংহ বললেন, “আমার এখন রোজগার নেই। গাড়ি ধুয়ে পয়সা। এখন গাড়ি নেই। টাকাও নেই। রাস্তায় থাকি। ভাইরাসের সময় থেকে ঘোষবাবুর বাড়িতে রোজ আমাদের কয়েক জনের জন্য দু’বেলা রান্না হচ্ছে। আমরা আর না খেতে পেয়ে মরব না।”

ওড়িশায় আটকে আছেন অনিন্দিতা বসু। কলকাতার লেক গার্ডেনসের বাড়িতে তাঁর ছেলেমেয়ে ও স্বামী। “করোনা আমার ঘরের অনুভূতিটাই বদলে দিল। আগে ভাবতাম কলকাতা, ওই বিছানা, ঘর, ওটাই আমার। এখন ওড়িশার এই বাড়িটাই আমার বাড়ি হয়ে উঠছে।” আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন অনিন্দিতা।

আরও পড়ুন: আকাশে অশনিসঙ্কেত, মার্চে কর্মীদের মাইনে কাটার ঘোষণা গোএয়ার-এর

শুধু ব্যক্তিজীবন নয়, দেশ জুড়ে করোনার দুর্গম অন্ধকারে আলো ফেলায় প্রয়াসী নানা উদ্যোগী প্রতিষ্ঠান। কাশ্মীরের একটি বইয়ের দোকান যেমন অঞ্চলের কোয়রান্টিন সেন্টারের জন্য এক হাজার বই বিতরণ করেছে। অন্য দিকে, দার্জিলিংয়ের বিখ্যাত ‘গ্লেনারিজ’ বিভিন্ন শেল্টার হোমে রুটি বিলি করেছে। শুধু তাই নয়, ‘গ্লেনারিজ’ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানিয়েছে, ‘সব কিছু বিনামূল্যেই দেব আমরা। কোনও চার্জ লাগবে না।’ এই বক্তব্যে তারা বলেছে, ‘আমাদের দোকানে এলে দূরত্ব বজায় রাখবেন’। এগিয়ে আসছেন সাধারণ মানুষ। পটনার রাকেশ চৌধুরী নিজের এলাকায় বিনামূল্যে বিলি করেছেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার। সংবাদসংস্থা এএনআই-কে তিনি বলেন, “বিশ্বের মানুষ করোনার সঙ্গে লড়াই করছে। আমার লড়াইটা এই রকম।” দিল্লির বাসিন্দাদের অনেকে আবার সাফাইকর্মীদের চা খাইয়ে এই কঠিন সময়ে তাঁদের পরিশ্রমকে কুর্ণিশ জানাচ্ছেন।

করোনার মারণ থাবা যতই দূরে ঠেলতে চাক, মানুষ যেন আরও বেঁধে বেঁধে রাখছে নিজেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন