Coronavirus in India

করোনা-যোদ্ধাদের আকাশ-কুসুম অভিবাদনে কাঁটা বর্মবস্ত্র

দেশ জোড়া এই ‘মেগা’ পরিকল্পনায় রবিবার সকালে দিল্লি-সহ বহু শহরের আকাশ চিরে উড়ল যুদ্ধবিমান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২০ ০৫:৩৯
Share:

করোনা-যোদ্ধাদের অভিবাদন। নৌসেনার হেলিকপ্টার থেকে মুম্বইয়ের আইএনএইচএস অশ্বিনীর উপরে পুষ্পবৃষ্টি। রবিবার। ছবি: পিটিআই।

সেনাবাহিনীর তরফ থেকে করোনা-যোদ্ধাদের অভিবাদন। সারা দেশের হয়ে।

Advertisement

দেশ জোড়া এই ‘মেগা’ পরিকল্পনায় রবিবার সকালে দিল্লি-সহ বহু শহরের আকাশ চিরে উড়ল যুদ্ধবিমান। হাসপাতালের উপরে পুষ্পবৃষ্টি করল হেলিকপ্টার। যুদ্ধজাহাজে জ্বলে উঠল আলো। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও যাঁরা অতিমারির সঙ্গে লড়ছেন রোজ, সেই ডাক্তার, নার্স-সহ সমস্ত করোনা-যোদ্ধার সম্মানে বেজে উঠল আর্মি-ব্যান্ড। তবু প্রশ্ন উঠল, এ সব না-করে ডাক্তারদের হাতে যথেষ্ট বর্মবস্ত্র বা পিপিই কিট পৌঁছনো জরুরি ছিল না কি?

অনেক হাসপাতালের সামনে এ দিন ফুলের পাপড়ি মাথায় নিয়ে আকাশযানের দিকে হাত নাড়লেন ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিছু জায়গায় হাততালি দিলেন পুলিশরাও। চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়তকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি দিল ডাক্তারদের একটি সংগঠন। খোদ প্রধানমন্ত্রীর টুইট, “যাঁরা সামনে দাঁড়িয়ে সাহসের সঙ্গে করোনার মোকাবিলা করছেন, তাঁদের অভিবাদন। প্রতিরক্ষা বাহিনীর তরফ থেকে দারুণ সৌজন্য।” প্রশংসায় পঞ্চমুখ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ মন্ত্রিসভায় তাঁর সহকর্মীরা। অথচ সমস্ত কিছুর পরেও সমালোচনার ঢেউ আছড়ে পড়ল সোশ্যাল মিডিয়ায়। হাততালি, থালা বাজানো, মোমবাতি জ্বালানোর পরে এ বার পুষ্পবৃষ্টি। কার্টুনে প্রশ্ন— যে নিরন্ন মানুষটি খালি থালা হাতে রাস্তায় বসে, আকাশ-কুসুমে তাঁর খিদে মিটবে তো?

Advertisement

আরও পড়ুন: জমিতে পা নেই, লকডাউনে তাই নীতি-তোতলামোয় ভুগছে সরকার

আরও পড়ুন: পিপিই কিট নিয়ে খবর, জিজ্ঞাসাবাদ সাংবাদিককে

জেএনইউয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক জয়তী ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “লজ্জাজনক এবং বিস্ময়কর। যে দেশে ডাক্তারদের হাতে চিকিৎসার পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নেই, সুরক্ষার যথেষ্ট পোশাক নেই, রোজ কাজ যাচ্ছে অগুনতি মানুষের, আধপেটা খেয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন বহু জন, সেখানে এই বিলাসিতা ভাবাও কষ্টকর।” তাঁর প্রশ্ন, ঠিক কত কোটি টাকা খরচ হল এই ‘মেগা শোয়ের’ জন্য? দেশের এ মাথা থেকে ও মাথা যুদ্ধবিমান ওড়ানো সরকারের লজ্জা হল না বাড়িফেরতা পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে রেলের টিকিটের দাম চাইতে?

ডাক্তার থেকে পুলিশ— প্রাণ হাতে করে রোজ করোনার সঙ্গে যাঁদের লড়াই, তাঁরা যে সবার তরফ থেকে অভিবাদনের যোগ্য, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন অগ্রাধিকারে। পিপিই কিট আগে না ফুল? এক ডাক্তারের কথায়, “যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে পা বাড়ানো সৈনিক আগে হাতে ভাল বন্দুক চায়। ফুল বা হাততালি নয়!” তেমনই শ্রমিক সংগঠনগুলিরও অভিযোগ, কাজ হারানো কর্মীদের জন্য ত্রাণের দেখা নেই। রেশন পাচ্ছেন না গরিবেরা। সে সব পিছনে ঠেলে ফুল ফেলতে আকাশে চক্কর কাটছে কপ্টার। প্রশ্ন, খালি পেটে ব্যান্ডের বাঁশি ভাল লাগে?

করোনার এই কঠিন সময়েও সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরায় সেনা। হাজারো কাজ দেশেও। তার মধ্যে সেনাকে এ ভাবে ‘রাজনৈতিক ভাবমূর্তি’ উজ্জ্বল করতে ব্যবহার করা উচিত কি না, উঠছে সেই প্রশ্ন। নৌবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান অরুণ প্রকাশের ক্ষোভ, “যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইত্যাদিতে সীমিত সামর্থ্য মাথায় রাখলে, বাহিনীকে জনসাধারণের জন্য আরও ভাল ভাবে কাজে লাগানো যেত। কিন্তু বিমান ওড়ানো আর পুষ্পবৃষ্টিই যদি তাদের ভাল ভাবে ব্যবহারের জায়গা হয়, তবে তা-ই হোক।” কেন্দ্র যদিও আগাগোড়া বোঝাতে চেয়েছে, এই সিদ্ধান্ত একান্তই সেনাবাহিনীর।


(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement