কোভিড-আক্রান্তদের জন্য রক্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশেষ রক্তদান শিবিরে। শনিবার নয়াদিল্লিতে। পিটিআই
করোনা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে রাজধানী দিল্লি ও সংলগ্ন নয়ডা ও গুরুগ্রামের। উত্তরোত্তর বাড়ছে সংক্রমণ। ব্যস্ততা বাড়ছে শ্মশানঘাটগুলিতেও। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজধানীতে এখনই লকডাউনের সম্ভাবনা খারিজ করে দিলেও, দিল্লি সংলগ্ন উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানার সীমানা ফের বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছে দিল্লি প্রশাসন। সংক্রমণ ঠেকাতে দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশের সীমানায় যাত্রীদের পরীক্ষা করা শুরু করেছে যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসন।
এ যাবৎ করোনা সংক্রমণের তিনটি ঢেউ ধাক্কা দিয়েছে দিল্লিকে। প্রথম দু’টি ধাক্কা সামলে নিলেও, তৃতীয় ধাক্কায় বিপর্যস্ত রাজধানী। গতকাল শুধু দিল্লিতে ৬,৬০৮ জন ব্যক্তি নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন ১১৮ জন। পরিস্থিতি সামলাতে এখনই লকডাউনের কথা না ভাবলেও, গোটা দিল্লিতে বেড়েছে কন্টেনমেন্ট জোনের সংখ্যা। বৃহস্পতিবার গোটা দিল্লিতে ৪৫০১টি কন্টেনমেন্ট জোন থাকলেও, শুক্রবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫৬০। আজ আরও দেড় ডজনের কাছাকাছি কন্টেনমেন্ট জোন বাড়ানো হয়েছে।
সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা এক ধাক্কায় বেড়ে যাওয়ায় দিল্লির হাসপাতালগুলিতে এখন আইসিইউ বেড বাড়ন্ত। এই সমস্যা মেটাতে দিল্লিকে বাড়তি বেড দিয়ে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছিল কেন্দ্র। আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, দিল্লির বিভিন্ন কেন্দ্রীয় হাসপাতালগুলিতে ২০৫টি আইসিইউ বেড বাড়ানো হয়েছে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে রেলকে। সূত্রের মতে, গোটা দেশে রেলের যে প্রায় হাজার খানেক কামরাকে হাসপাতালের শয্যা তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলি প্রয়োজনে দিল্লিতে আনার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বাড়ানো হয়েছে পরীক্ষাও। বিশেষ করে আরটি পিসিআর পরীক্ষা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক টুইট করে জানিয়েছে, অমিত শাহের নির্দেশে আইসিএমআর পরীক্ষার সংখ্যা দিনে গড়ে ২৭ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩৭,২০০ করেছে। অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় যাঁরা নেগেটিভ হচ্ছেন অথচ সর্দি-কাশির উপসর্গ রয়েছে, তাঁদের আরটি পিসিআর পরীক্ষা করানোর উপরে জোর দেওয়া হয়েছে।
দিল্লি প্রশাসন সূত্রের মতে, গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকেই রাজধানীর কোভিড পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে। ফি দিন রোগীর সংখ্যা প্রথমে পাঁচ হাজার ও পরে ছয় হাজার পেরিয়ে যায়। পর্যালোচনায় দেখা গিয়েছে তার একটি বড় কারণ হল, সর্দি-কাশির লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা না করানো। যে কারণে গতকাল দিল্লির সমস্ত আবাসন, ঘরে-ঘরে গিয়ে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। দিল্লির স্বাস্থ্যকর্তাদের ওই সমীক্ষার কাজে কেন্দ্রের নির্দেশে সাহায্য করছে দিল্লি পুলিশ। দ্বিতীয় একটি বড় কারণ হল উপসর্গহীন সংক্রমিত ব্যক্তি বা সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের অনেকেই নিয়ম ভেঙে বাড়ির বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বাজারে যাচ্ছেন। যাচ্ছেন কাজেও। ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত গতিতে। সেই কারণে দিল্লি সরকার আজ নির্দেশিকা জারি করে স্বাস্থ্য কর্তাদের এ ধরনের রোগীদের বাড়িতে আচমকা নজরদারি করতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে সংক্রমিত রোগীদের সংস্পর্শে কারা এসেছেন, তাঁদেরও চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে।
সংক্রমণ ঠেকাতে দিল্লির সঙ্গে ট্রেন ও বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার একটি প্রস্তাব নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছিল মহারাষ্ট্র সরকার। রাজধানী দিল্লি ও বাণিজ্য নগরী মুম্বইয়ের মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হলে ফের অর্থনৈতিক কাঠামোয় দাক্কা লাগতে পারে, ওই আশঙ্কায় এখনই সে ধরনের কোনও কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।