Coronavirus in India

বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু, উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য মন্ত্রক

বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সরকার অস্বীকার করলেও দেশের কিছু প্রান্তে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২০ ০৩:১২
Share:

ছবি এএফপি।

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যাচ্ছে না। দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা। বাড়ছে প্রাণহানির ঘটনাও। গত দু’মাসে করোনা আক্রান্তের হার প্রায় আড়াই গুণ বেড়েছে। দেশে ১০০ জনের করোনা পরীক্ষা হলে অন্তত ১০ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রমণের হার বৃদ্ধি প্রমাণ করে, দেশে ব্যাপক হারে ছ্ড়াচ্ছে করোনাভাইরাস। মৃত্যুহার অবশ্য কমেছে। কিন্তু তাতেও স্বস্তিতে নেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কারণ, ৬০ বছরের কম বয়সিদের মৃত্যুহার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে আজ করোনা নিয়ে কেন্দ্রকে টুইট-খোঁচা দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। নিজের টুইটার হ্যান্ডলে একটি রেখচিত্র পোস্ট করে তিনি প্রশ্ন তুলছেন, ‘‘কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত ভাল জায়গায়?’’ কংগ্রেস নেতা বলেছেন, রেখচিত্র নিম্নগামী হলে তা আদর্শ হত।

পরে কংগ্রেস সূত্রে বলা হয়, সংক্রমণ বৃদ্ধি প্রমাণ করে, কেন্দ্র কার্যত হাল ছেড়ে দিয়েছে। সরকারের উচিত ছিল আরও পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়ে সংক্রমিত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাঁদের নিভৃতবাসে পাঠানো। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গত কাল দাবি করেছিলেন, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত ভাল জায়গায় রয়েছেন। অনেকের মতে, টুইট করে রাহুল আসলে খোঁচাটা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেই।

Advertisement

আজ দেশে ৩০ হাজারের কাছাকাছি ব্যক্তি নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। পরিসংখ্যান বলছে, গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেশে সংক্রমণের হার ছিল ৪.১৪ শতাংশ। এখন তা ৯.৮ শতাংশে।

আরও পড়ুন: লাগামছাড়া করোনা, এক দিনে পাঁচশো মৃত্যু

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ভারতের মতো জনঘনত্বের দেশে আড়াই গুণ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার অর্থ, আক্রান্তের সার্বিক সংখ্যা বৃদ্ধি। দেশে বিশেষ করে নতুন এলাকা, ছোট শহরে সংক্রমণ দ্রুত গতিতে বাড়ছে বলে স্বীকার করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সরকার অস্বীকার করলেও দেশের কিছু প্রান্তে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে। সংক্রমিতের সংখ্যা বৃদ্ধি তা-ই প্রমাণ করছে। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমিত এলাকাগুলি চিহ্নিত করে নতুন করে বাড়ি বাড়ি ঘুরে পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। ঘরে ঘরে গিয়ে পরীক্ষা না করা হলে সংক্রমণ ঠেকানো রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও পরীক্ষা বাড়ানোর উপরে জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি রাজেশ ভূষণের দাবি, দেশে কোনও এলাকায় স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণ শুরু হলেও, গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়নি। পরীক্ষা বাড়ানোর ফলে পজ়িটিভ রোগী বেশি ধরা পড়ছে।

সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে মৃত্যুর সংখ্যা। গত মাসে এ সময়ে যেখানে গড়ে দু’শো জন করে মারা যাচ্ছিলেন, এখন তা ফি দিন পাঁচ’শোর কাছাকাছি। তবে যে হেতু আক্রান্ত বা পজ়িটিভ রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে, তাই সামগ্রিক ভাবে আগের তুলনায় শতাংশের হিসেবে রোগী মৃত্যুর হার কমেছে বলেই মত স্বাস্থ্য মন্ত্রকের। গত মে মাসে যেখানে দেশে সংক্রমিতদের মধ্যে ৩.২৮ শতাংশ রোগাক্রান্ত মারা যাচ্ছিলেন, জুলাইতে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৬৪ শতাংশে। বর্তমানে বিশ্বে করোনা মৃত্যুর হার গড়ে ৪.৩ শতাংশ।

সংক্রমণের প্রথম পর্বে করোনার শিকার হচ্ছিলেন ষাটোর্ধ্বরাই। কিন্তু কয়েক মাসে দেখা যাচ্ছে, ৪৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সিরাও ক্রমশ এই রোগে প্রাণ হারাচ্ছেন। বর্তমানে প্রায় ৪৫ শতাংশ মৃত ব্যক্তির বয়স ৬০ বছরের নীচে। এমসের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক আশুতোষ বিশ্বাসের মতে, মধ্যবয়সিরাও এখন উচ্চ রক্তচাপ, সুগার, বাড়তি ওজন, কিডনি জনিত সমস্যায় ভুগছেন। ফলে সেই সব ব্যক্তি করোনা সংক্রমিত হলে মৃত্যুর আশঙ্কা অনেক বেড়ে যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন