Coronavirus

টেস্ট বেশি, সংক্রমণের হার কম, দেশের করোনা চিত্রে স্বস্তির ইঙ্গিত?

যদিও এখনই এতটা আশাবাদী হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেও গবেষক-বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২০ ১৭:৫৯
Share:

করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার কমছে, বাড়ছে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা।

টিকা না আসা পর্যন্ত স্বস্তি নেই। বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে গোটা দেশের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে সাময়িক হলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখা যাচ্ছে। গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তির দিকে বটে, কিন্তু সেই তুলনায় টেস্টের সংখ্যা বাড়ছে অনেক বেশি হারে। অর্থাৎ বেশি মানুষের টেস্ট করেও আক্রান্তের সংখ্যা বিরাট ভাবে বাড়ছে না। এই সংক্রমণের হার কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক বলেই মত চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞদের একাংশের। একই সঙ্গে মৃত্যু এবং সুস্থতার হারও আশা জাগানোর মতো। যদিও এখনই এতটা আশাবাদী হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেও গবেষক-বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন। আবার ব্লুমবার্গের হিসেবে ভারতেই সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি।

Advertisement

পরিসংখ্যানে নজর দেওয়া যাক। গত দু’সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যায় নজর দিলে দেখা যাবে, প্রতিদিন সেই সংখ্যা বেড়েছে। গত ১২ জুলাই দেশে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৬,৬৩৭। বাড়তে বাড়তে ২৮ জুলাইয়ে এসে সেই সংখ্যা ৫০ হাজার ছুঁইছুই। তার মধ্যে ২৭ জুলাই সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪৯,৯৩১ জন। আর আজ ২৮ জুলাই সেই সংখ্যা প্রায় ২ হাজার কমে হয়েছে ৪৭,৭০৩। এই হিসেব অবশ্যই আতঙ্কিত হওয়ার মতো। কিন্তু তার মধ্যেও কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে প্রবণতার উপর। শেষ সপ্তাহের বাকি কয়েক দিনেও নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭ হাজার থেকে ৪৯ হাজারের মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। অর্থাৎ সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পায়নি।

তবে কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক প্রতিদিন কোভিড টেস্টের পরিসংখ্যান। বিশেষ করে গত ৪-৫ দিনের পরিসংখ্যান যথেষ্টই আশাব্যাঞ্জক। ১২ জুলাই সারা দেশে করোনা টেস্ট হয়েছিল ২,৮০,১৫১ জনের। ২৮ জুলাই সেই সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এ দিন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী টেস্ট হয়েছে ৫,২৮,০৮২ জনের। বিশেষ করে ২৪ জুলাই থেকে এই টেস্টের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। ২৪ জুলাই টেস্ট হয়েছিল ৩,৫২,৮০১ জনের। ২৫ জুলাই ৪,২০,৮৯৮, ২৬ জুলাই ৪,৪২,২৬৩, ২৭ জুলাই ৫,১৫,৪৭২ জনের টেস্ট হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন টেস্টের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে। কিন্তু তুল্যমূল্য বিচারে নতুন আক্রান্ত সেই হারে বাড়েনি। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, টেস্টের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে, অথচ সংক্রমণবৃদ্ধি সেই হারে বাড়ছে না, বরং একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে ঘোরাফেরা করছে, এই প্রবণতা কিছুটা হলেও পজিটিভ।

Advertisement

আরও পড়ুন: দেশে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৪৭৭০৩ জন, মোট সুস্থ সাড়ে ন’লাখ

‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হারেও স্বস্তিদায়ক ছবি। প্রতিদিন কত সংখ্যক মানুষের টেস্ট হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে কতজনের রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হয় সংক্রমণের হার। ১২ জুলাই থেকে এই সংক্রমণের হার দেখলে বোঝা যাবে, এই দু’সপ্তাহের মধ্যেই এক সময় যেখানে সংক্রমণের হার পৌঁছে গিয়েছিল প্রায় ১৬ শতাংশে, সেখানে ২৮ জুলাই সেই হার নেমে এসেছে ৯ শতাংশে। এমনকি, দু’সপ্তাহ আগে ১২ জুলাইয়েও সংক্রমণের হার ছিল ১০.২২। আর এই দু’সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি হয়েছিল ২০ জুলাই (১৫.৭৯)। ২৪ জুলাই ছিল ১৩.৯৮, ২৫ জুলাই ১১.৬২, ২৬ জুলাই ১১.০০, ২৭ জুলাই ৯.৬৯ এবং ২৮ জুলাই ৯.০৩ ছিল সংক্রমণের হার। অর্থাৎ শেষ সপ্তাহে প্রতিদিন সংক্রমণের হার কমেছে। পরিসংখ্যানবিদ ও মহামারি বিশেষজ্ঞদের কাছে এই প্রবণতাই করোনা-যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি আশা জাগাচ্ছে। যদিও সেই আশা দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না, তা এখনই বলে দেওয়ার মতো সময় হয়নি। তবে এই প্রবণতা বজায় থাকলে তা আশা জাগানোর মতো।

আরও পড়ুন: প্রায় উপসর্গহীন বা সামান্য উপসর্গের করোনা আক্রান্তরা কী করবেন?

আবার আশা জাগাচ্ছে উল্টো দিকের ছবিও। প্রতিদিন আক্রান্ত যেমন বাড়ছে, প্রতিদিন সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাও বাড়ছে। কেমন সেই পরিসংখ্যান? ১২ জুলাই সুস্থতার হার ৬২.৯৩ শতাংশ ছিল। তার পর থেকে লাগাতার বাড়তে বাড়তে ১৭ জুলাই সেই হার পৌঁছে গিয়েছিল ৬৩.৩৩ শতাংশে। ১৮ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত আবার নেমে গিয়েছিল ৬২ শতাংশের ঘরে। ২১ জুলাই থেকে শেষ সপ্তাহে আবার ব্যাপক হারে বেড়ে ২৮ জুলাই এসে সেই হার ৬৪.২৪ শতাংশ। অর্থাৎ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তার চেয়ে বেশি হারে সুস্থ হচ্ছেন মানুষ— এই প্রবণতা বজায় থাকলে এক সময় স্বস্তিদায়ক জায়গায় পৌঁছে যাওয়া যাবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরেই মৃতের সংখ্যা ঘোরাফেরা করছে ৬০০ থেকে ৭০০-র মধ্যে। যদিও তার মধ্যে ২৩ জুলাই এক দিনে মৃত্যু হয়েছিল ১১২৯ জনের। এটা ব্যতিক্রম ধরলে মৃতের সংখ্যায় স্বস্তি না ফিরলেও উদ্বেগ কিছুটা কমেছে, এমনটা বলাই যায়। ১২ জুলাই মৃত্যু হয়েছিল ৫৫১ জনের। ২৪ জুলাই মারা গিয়েছিলেন ৭৪০ জন, ২৫ জুলাই ৭৫৭, ২৬ জুলাই ৭০৫, ২৭ জুলাই ৭০৮ জন। ২৮ জুলাই মৃত্যু হয়েছে ৬৫৪ জনের। এই ক্ষেত্রে অবশ্য এখনও তেমন আশাব্যাঞ্জক জায়গায় পৌঁছনো যায়নি বলেই অনেকের মত। সামান্য হলেও সদর্থকের দিকে পাল্লা ভারী থাকলেও স্বস্তির জায়গায় পৌঁছনোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কিন্তু সামগ্রিক এই ছবিটা কি পুরোটাই স্বস্তির? বিজ্ঞানী-গবেষকরা অবশ্য ততটা আশাবাদী হতে পারছেন না। ব্লুমবার্গের করোনাভাইরাস ট্র্যাকার অনুযায়ী সারা বিশ্বের মধ্যে এখন ভারতেই সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। শুধুমাত্র গত সপ্তাহেই মোট আক্রান্তের ২০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশের সংক্রমণ পরিস্থিতি এখনও ভয়াবহ। আবার সারা বিশ্বে মোট আক্রান্তের নিরিখে ভারত এখনও তৃতীয় স্থানে। আমেরিকা ও ব্রাজিলের পরেই। ফলে সংক্রমণ পরিস্থিতিতে স্বস্তি দেওয়ার মতো জায়গায় রয়েছে, এখনই এমন দাবি করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেই মত বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশের। এই যে সংক্রমণের হার কমতির দিকে, বেশি টেস্টেও কম আক্রান্ত, এই প্রবণতা আবার পাল্টাতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে অনেকের। বিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, প্রবণতা এ সবের বাইরে আম জনতার অবশ্য প্রার্থনা, এই প্রবণতাই যেন বজায় থাকে। তা হলেই করোনার বিরুদ্ধে জয় মিলবে এক দিন।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন