Coronavirus in India

করোনা যুদ্ধের মূল্যায়নে অখুশি রাজ্য

সংক্রমিত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে কারা এসেছে তা খুঁজে বার করতে যে মডেল কেরল সরকার তৈরি করেছে, তা যথেষ্ট দৃষ্টান্তমূলক বলে মনে করে নীতি আয়োগ। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৪৩
Share:

ছবি: পিটিআই।

করোনা সংক্রমণের গোড়ার দিন থেকে তা রোখার প্রশ্নে রাজ্যগুলি কোন কোন ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ করেছে তা নিয়ে একটি সার্বিক রিপোর্ট প্রকাশ করল নীতি আয়োগ। ওই রিপোর্টে জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা শাখায় জনগোষ্ঠীর উপরে নজরদারি এবং চিকিৎসা সামগ্রীর উৎপাদন ও তার সুষ্ঠু বিতরণ খাতে ভাল কাজ করার স্বীকৃতি পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। তবে ডিজিটাল স্বাস্থ্য, সুসংহত ব্যবস্থাপনা, পরিযায়ী শ্রমিকদের ব্যবস্থাপনার মতো বাকি পাঁচটি শাখায় একটিতেও স্থান হয়নি পশ্চিমবঙ্গের। রাজ্যের পক্ষ থেকে পাঠানো রিপোর্টের পাশাপাশি ইন্টারনেটে পাওয়া বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে যে ভাবে রাজ্যগুলির মূল্যায়ন করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

Advertisement

নীতি আয়োগের রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনা কালে সুসংহত ভাবে নজরদারি চালানোর কাজে অনেক রাজ্যের মতোই ভাল কাজ করেছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্য প্রশাসন করোনা সংক্রমিতদের খুঁজতে যে বিশেষ উদ্যোগ নেয়, তার প্রশংসা করেছে নীতি আয়োগ। বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে অন্য কোনও শারীরিক অসুস্থতার কারণে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য যারা এসেছেন তাদের জ্বর, সর্দি কাশির মতো উপসর্গ না থাকা সত্ত্বেও করোনা পরীক্ষা করেছে রাজ্য প্রশাসন। নীতি আয়োগের মতে, মূলত, সংক্রমণ কতটা ছড়িয়েছে এবং রাজ্য সরকারের কী ধরনের প্রস্তুতির প্রয়োজন তা বুঝতেই ওই পদক্ষেপ করা হয়েছিল। এ ছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই কিটের চাহিদা মেটাতে রাজ্য সরকার ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট হ্যান্ডলুম উইভারস কোপার্রেটিভ’ সঙ্গে হাত মিলিয়ে কিট উৎপাদন শুরু করে। এ ছাড়াও রাজ্য সরকার যে তিন কোটি মাস্ক সংগ্রহ করেছিল, তা স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, পুর ও দমকলকর্মী ছাড়াও পড়ুয়া ও একশো দিনের কাজ করা মজদুরদের হাতে তুলে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তা-ও সময়োচিত বলেই মনে করে আয়োগ। এই দু’টি ক্ষেত্র ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে নীতি আয়োগের রিপোর্টে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ পশ্চিমবঙ্গ। সেখানে আদর্শ কনটেনেমেন্ট জোন গড়া, স্বাস্থ্য কর্মীদর দক্ষতা বৃদ্ধি ও তাদের উন্নয়ন, দক্ষ প্রশাসন, ডিজিটাল স্বাস্থ্য, পরিযায়ী শ্রমিকদের উন্নয়ন মতো একাধিক ক্ষেত্রে ভাল কাজ করায় প্রশংসিত হয়েছে যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য। বিভিন্ন ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশের মতোই স্থান করে নিয়েছে কেরলও। বিশেষ করে সংক্রমিত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে কারা এসেছে তা খুঁজে বার করতে যে মডেল কেরল সরকার তৈরি করেছে, তা যথেষ্ট দৃষ্টান্তমূলক বলে মনে করে নীতি আয়োগ।

পশ্চিমবঙ্গের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রের রিপোর্টে কী বলা হল, তা দিয়ে কিছু বিচার হয় না। নিরপেক্ষ মাপকাঠিতে কোভিড নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমবঙ্গের কাজের প্রশংসা করতেই হবে।’’ নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে তিনি জানান, হাসপাতালে বেডের অভাবে রোগীর সংখ্যা উপচে পড়েছে এমন কী কেউ দেখাতে পারবে? কেউ করোনা পজ়িটিভ হলে সাধারণত আধ ঘণ্টার মধ্যে তিনি ফোন পাচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হলে বাড়িতে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হচ্ছে। সুস্থ হওয়ার পরে অ্যাম্বুল্যান্সে করে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। করোনায় আসল ওষুধ হল অক্সিজেন। তার জন্য হাসপাতালগুলিতে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের পরিকাঠামো গড়া হয়েছে। হোম আইসোলেশনের রোগীরা যাতে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকেন তা নিশ্চিত করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, ‘‘করোনা নিয়ন্ত্রণে এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে পশ্চিমবঙ্গ প্রথমের সারিতে রয়েছে। সরকারও খরচের প্রশ্নে কোথাও খামতি রাখেনি। কিন্তু আমরা দুয়োরানি হয়েই থেকে যাব!’’

Advertisement

আরও পড়ুন: টিকার অগ্রগতি দেখতে কাল তিন শহরে মোদী

রিপোর্ট ঘিরে প্রশ্ন ওঠায় নীতি আয়োগের যুক্তি, গত জুলাই মাসে প্রতিটি রাজ্যের কাছে একট ই-মেল পাঠানো হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, রাজ্যগুলি যদি মনে করে এমন কোনও পদক্ষেপ যা তাদের করোনা সংক্রমণ রোখার প্রশ্নে সাহায্য করছে, তা হলে সেই বিষয়ে যেন নীতি আয়োগকে বিস্তারিত ভাবে জানানো হয়। রাজ্যগুলির কাছে নিজেদের কাজের খতিয়ান তুলে ধরার সুযোগ ছিল। সেই সঙ্গে নীতি আয়োগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কি-ওয়ার্ডের সাহায্যে বিভিন্ন রাজ্যের ওয়েবসাইটে করোনা সম্পর্কিত কোনও কেস স্টাডি রয়েছে কি না, তা খোঁজা হয়। নীতি আয়োগের মতে, যে কেস স্টাডি বা ঘটনাগুলি ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলিই মূল্যায়নের জন্য বিবেচিত হয়েছে।

আরও পড়ুন: ২৬/১১ বার্ষিকীতে পাকিস্তানকে নিশানা মোদীর

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন