Coronavirus in India

দ্বিতীয় বার সংক্রমণ, দাবি তেলঙ্গানার

দ্বিতীয় করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনার কথা গোড়ায় মানতে রাজি ছিলেন না দেশের স্বাস্থ্য কর্তারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২০ ০৫:০৩
Share:

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সংক্রমণ হার ৮.১৫ শতাংশ। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

চিন, দক্ষিণ কোরিয়ার পর হংকং-এ আগেই পাওয়া গিয়েছিল একই ব্যক্তির দ্বিতীয় বার করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর। এ বার এ দেশেও দ্বিতীয় সংক্রমণের তথ্য সামনে এল তেলঙ্গানা রাজ্য থেকে। ওই রাজ্যে দুই ব্যক্তি স্বল্প দিনের ব্যবধানে ফের করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন সে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্র।

Advertisement

তবে দ্বিতীয় করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনার কথা গোড়ায় মানতে রাজি ছিলেন না দেশের স্বাস্থ্য কর্তারা। কিন্তু সম্প্রতি হংকং-এর একটি ঘটনার পরে দ্বিতীয় বার সংক্রমণের তত্ত্ব মেনে নেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের প্রধান বলরাম ভার্গব। গত কাল তিনি দাবি করেন, বিদেশে ঘটলেও দেশে এখনও দ্বিতীয় বার সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু তেলঙ্গানার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ই রাজেন্দ্র আজ জানান, তাঁদের রাজ্যে দুই ব্যক্তি পুনরায় করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। বিষয়টি কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়েছে, তেলঙ্গনা সরকার ওই নমুনা নতুন করে পরীক্ষা করে দেখছে। খতিয়ে দেখতে হবে, ওই ব্যক্তিরা কত দিন আগে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার সময়ে ওই ব্যক্তিদের কোভিড পরীক্ষা হয়েছিল কি না। তাতে ওই ব্যক্তিরা নেগেটিভ এসেছিলেন কি না। একই সঙ্গে করোনার নতুন প্রজাতির ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভারতে যে করোনার ভাইরাসগুলি পাওয়া গিয়েছে, তাদের কোনওটি মিউটেশন বা পরিবর্তনের মাধ্যমে চরিত্র বদল করার কারণেই কি দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ? তা-ও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

সংক্রমণ কমার লক্ষণ নেই গোটা দেশেই। আজ সংক্রমণ রুখতে না পারার ব্যর্থতায় প্রয়োজনে এক পক্ষকাল টানা লকডাউনের পরামর্শ দিল ইলাহাবাদ হাইকোর্ট। অগস্ট মাসের গোড়া থেকেই দৈনিক প্রায় চার হাজার ব্যক্তি সংক্রমিত হচ্ছেন উত্তরপ্রদেশে। আজ আদালত নিভৃতবাসের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন সংক্রমণ রুখতে পুরোপুরি ব্যর্থ। বিশেষ করে রাস্তাঘাট, দোকান-বাজারে ভিড় নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় একাধিক শহরে করোনা বেড়েই চলেছে। আদালত জানিয়েছে, পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে সম্পূর্ণ লকডাউন ছাড়া সংক্রমণ আটকানোর উপায় নেই। অনেকেরই মতে, আদালতের ওই সিদ্ধান্তকে হাতিয়ার করে ফের টানা লকডাউনের ঘোষণা করতে পারেন আদিত্যনাথ।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

গোটা দেশের পরিস্থিতিও চিন্তায় রেখেছে কেন্দ্রকে। সংক্রমণের হার কমলেও যে ভাবে রোজ সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য কর্তারা। গত চব্বিশ ঘণ্টায় ৬৭,১৫১ জন সংক্রমিত হওয়ায় দেশে করোনা আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩২,৩৪,৪৭৪ লক্ষ। যার মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২৪,৬৭,৭৫৮ জন। এই মুহূর্তে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ৭,০৭,২৬৭ জন। দেশে মৃত্যুহার দুই শতাংশের নীচে নেমে এলেও গত চব্বিশ ঘন্টায় মারা গিয়েছেন ১০৫৯ জন। ফলে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫৯,৪৪৯ জন। গত এক দিনে পরীক্ষা হয়েছে ৮,২৩,৯৯২টি নমুনার।

আরও পড়ুন: ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী জোটের সলতে পাকানোর চেষ্টা

পরিস্থিতি যা, তাতে একমাত্র প্রতিষেধকেই পরিত্রাণের রাস্তা খুঁজছে মোদী সরকার। তবে তার জন্য ২০২১ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(হু)-র মুখ্য বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন। তিনি আজ বলেন, ‘‘আশা করছি ২০২১ সালের গোড়ায় আমরা কোনও ভাল খবর পাব।’’ তবে প্রতিষেধক আবিষ্কার যতটা চ্যালেঞ্জের, তার থেকেও বড় চ্যালেঞ্জ হল তার সুষ্ঠু বন্টন। সৌম্যা আজ আইআইএম (বেঙ্গালুরু)-র একটি ভার্চুয়াল আলোচনায় বলেন, প্রতিষেধক অল্প পরিমাণে বাজারে ছাড়া হলে তা ধনী রাষ্ট্রের কুক্ষিগত হয়ে পড়বে। তাই প্রতিষেধকের উৎপাদন এবং সেগুলির সম বন্টন করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে তাঁর দাবি, ভারত অনেক ভাল পরিস্থিতিতে রয়েছে। কারণ ভারত প্রতিষেধক উৎপাদনের প্রশ্নে দীর্ঘ সময় ধরেই শীর্ষে। তা ছাড়া এ দেশে একাধিক সংস্থা একক ভাবে বা অন্য সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রতিষেধক উৎপাদনে সক্রিয় রয়েছে।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

এ দেশে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকা কোভিশিল্ড। ওই টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ও তা সফল হলে উৎপাদনের দায়িত্বে রয়েছে সিরাম ইনস্টিটিউট। সিরামের পক্ষ থেকে যে দশটি কেন্দ্র থেকে ওই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে মহারাষ্ট্রের ভারতী বিদ্যাপীঠ ডিমড বিশ্ববিদ্যালয়। ওই সংস্থার পক্ষ থেকে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবীকে টিকা দেওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। তারা সুস্থ ও নীরোগ কি না তা পরীক্ষা করে দেখে তবেই টিকা প্রয়োগ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। দিনক্ষণ এখনও বলা হয়নি।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন