India cross brazil

ফের নতুন সংক্রমণ ৯০ হাজারের বেশি, দেশে ৪২ লক্ষ ছাড়াল আক্রান্তের সংখ্যা

দৈনিক নতুন সংক্রমণে মহারাষ্ট্রের অবস্থা উদ্বেগজনক। উদ্বেগ বাড়াচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্নাটকও।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১০:৫৮
Share:

গত কয়েক দিনে ভারতে যে ভাবে নতুন সংক্রমণ বাড়ছে, তা গোটা করোনাকালে বিশ্বের কোনও দেশে হয়নি। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

৭৮, ৮৩, ৮৩, ৮৬, ৯০, ৯০ হাজার— গত ক’দিন ধরে এ ভাবে বাড়তে বাড়তে ৪২ লক্ষ ছাড়াল দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা। এই বৃদ্ধির জেরে ব্রাজিলকে পিছনে ফেলে বিশ্বের করোনা আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল ভারত। মোট ৬২ লক্ষ আক্রান্ত নিয়ে সামনে শুধু আমেরিকা।

Advertisement

বিগত কয়েক দিন ধরেই বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় দৈনিক সংক্রমণে শীর্ষে থাকছে ভারত। গত কয়েক দিনে ভারতে যে ভাবে নতুন সংক্রমণ বাড়ছে, তা গোটা করোনাকালে বিশ্বের কোনও দেশে হয়নি। আজও সেই প্রবণতার অন্যথা হল না। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৯০ হাজার ৮০২ জন নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। ওই সময়ের মধ্যে আমেরিকা ও ব্রাজিলে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৩০ হাজার ৫১৩ ও ১৪ হাজার ৫২১ জন।

৯০ হাজার বৃদ্ধির জেরে দেশে মোট আক্রান্ত হলেন ৪২ লক্ষ ৪ হাজার ৬১৩ জন। প্রথম স্থানে থাকা আমেরিকাতে মোট আক্রান্ত ৬২ লক্ষ ৭৬ হাজার। তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে ৪১ লক্ষ ৩৭ হাজার। চতুর্থ স্থানে থাকা রাশিয়াতে সংখ্যাটা এই তিনটি দেশের তুলনায় অনেকটাই কম (১০ লক্ষ ২২ হাজার)। ৬ লক্ষ ৮৩ হাজার আক্রান্ত নিয়ে পঞ্চমে পেরু ও ৬ লক্ষ ৬৬ হাজার আক্রান্ত নিয়ে ষষ্ঠে কলম্বিয়া। সপ্তম স্থানে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাতে মোট আক্রান্ত ৬ লক্ষ ৩৮ হাজার। মৃত্যু তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকলেও মোট আক্রান্তের নিরিখে অষ্টম মেক্সিকো (৬.৩৪ লক্ষ)। এর পর রয়েছে স্পেন, আর্জেন্টিনা, চিলি। এই তিনট দেশে মোট আক্রান্ত ৪ লক্ষের ঘরে। তিন লক্ষের ঘরে রয়েছে ইরান, ব্রিটেন, ফ্রান্স, বাংলাদেশ, সৌদি আরব। তিন লক্ষের নীচে রয়েছে পাকিস্তান, তুরস্ক, ইটালি, ইরাক, জার্মানি।

Advertisement

দৈনিক আক্রান্ত বৃদ্ধিতে প্রথম সারিতে রয়েছে মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশে ও কর্নাটক। গত কয়েক দিন ধরেই গড়ে ২০ হাজার দৈনিক সংক্রমণ হচ্ছে মহারাষ্ট্রে। আজ সেই সংখ্যাটা ২৩ হাজার। অন্ধ্রপ্রদেশেও চিত্রটা একইরকম। গত এক মাস ধরে সেখানে রোজ ১০ হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। অগস্টে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকার পর সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই কর্নাটকে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। ৯ হাজারের উপরে উঠেছে সেখানকার দৈনিক সংক্রমণ। তুলনায় তামিলনাড়ু কিছুটা আশা জাগাচ্ছে। অগস্টের শেষ থেকেই সেখানে দৈনিক সংক্রমণ ছ’হাজারের কম হচ্ছে। দিল্লির দৈনিক সংক্রমণ গত মাসে নেমেছিল এক হাজারের গণ্ডিতে। গত ক’দিনে তা আবার বেড়েছে। এখন প্রায় তিন হাজার জন রোজ আক্রান্ত হচ্ছেন সেখানে। উত্তরপ্রদেশে দৈনিক আক্রান্ত রোজই সাড়ে ছ’হাজারে পৌঁছে যাচ্ছে। তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে দৈনিক আক্রান্ত অনেক দিন ধরেই একই গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকছে। কিন্তু তেলঙ্গানা, ওড়িশা, অসম, কেরলে, হরিয়ানা, প়ঞ্জাব ও ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যে দৈনিক আক্রান্ত বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তার কারণ রয়েছে। কারণ, আজ থেকে দেশের বেশ কিছউ শহরে চালু হল মেট্রো পরিষেবা। আগামী দিনে কিছু ট্রেন পরিষেবাও চালু করার কথা ঘোষণা করেছে ভারতীয় রেল। আনলক পর্বে দেশে লকডাউনের কড়াকড়ি নেই। মুক্তমঞ্চ, পাব, শপিংমলও খুলে গিয়েছে। এর মধ্যেই দৈনিক সংক্রমণের লাফিয়ে বৃদ্ধি উদ্বেগ বাড়াবে বই কমাবে না।

মৃত্যুর সংখ্যায় স্পেন, ফ্রান্স, ইটালি, ব্রিটেন, মেক্সিকোর মতো দেশকে ভারত পিছনে ফেলে বিশ্বের তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা আমেরিকা ও ব্রাজিলের তুলনায় ভারতে মোট মৃত্যু অনেক কম। পাশাপাশি ওই সব দেশগুলির তুলনায় ভারতে মৃত্যুর হারও অনেকটাই কম। যদিও বিগত কয়েক দিন ধরেই দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা অন্যান্য দেশকে পিছনে ফেলছে ভারত। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার জেরে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ১৬ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট ৭১ হাজার ৬৪২ জনের প্রাণ কাড়ল করোনাভাইরাস। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মারা গিয়েছেন সাড়ে ২৬ হাজার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তামিলনাড়ুতে মোট মৃত ৭ হাজার ৮৩৬। তৃতীয় স্থানে থাকা কর্নাটকে মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ৩৯৩। দেশের রাজধানীতে সংখ্যাটা সাড়ে ৪ হাজার ছাড়িয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশে (৪,৪১৭), উত্তরপ্রদেশ (৩,৯২০), পশ্চিমবঙ্গ (৩,৫৬২) ও গুজরাত (৩,১০৫) মৃত্যু তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে। পঞ্জাব (১,৮৬২), মধ্যপ্রদেশ (১,৫৭২), রাজস্থানে (১,১৩৭) মোট মৃত্যু এক হাজার ছাড়িয়ে বেড়ে চলেছে। এর পর তালিকায় রয়েছে তেলঙ্গানা, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, ছত্তীসগঢ়, গোয়া-র মতো রাজ্যগুলি।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যার মধ্যেই আশার আলো কোভিড রোগীদের সুস্থ হয়ে ওঠা। দেশে সুস্থ হয়ে ওঠার হারও যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। এখনও পর্যন্ত দেশে মোট ৩২ লক্ষ ৫০ হাজার ৪২৯ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হয়েছেন। অর্থাৎ দেশে মোট আক্রান্তের ৭৭.৩১ শতাংশই সুস্থ হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সুস্থ হয়েছেন ৬৯ হাজার ৫৬৪ জন।

প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ৭-৮ শতাংশে বন্দি থাকার পর আজ তা ফের ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেল। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সংক্রমণ হার বেড়ে হয়েছে ১২.৬১ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ৭ লক্ষ ২০ হাজার ৩৬২ জনের। যা গত পাঁচ দিনের তুলনায় অনেক কম।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। )

কোভিডে আক্রান্ত ও মৃত্যু— দু’টি তালিকাতেই শুরু থেকে শীর্ষে মহারাষ্ট্র। সেখানে মোট আক্রান্ত ৯ লক্ষ ছাড়িয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অন্ধ্রপ্রদেশে মোট আক্রান্ত পাঁচ লক্ষ ছুঁইছুঁই। তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্ত চার লক্ষ ৬৩ হাজার ৪৮০। চতুর্থ স্থানে থাকা কর্নাটকে মোট সংক্রমিত চার লক্ষ ছুঁইছুঁই। উত্তরপ্রদেশেও সংখ্যাটা আড়াই লক্ষ ছাড়িয়েছে। দিল্লিতে ১লক্ষ ৯১ হাজার। পশ্চিমবঙ্গে ১ লক্ষ ৮০ হাজার। বিহারে ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ও তেলঙ্গানাতে ১ লক্ষ ৪২ হাজার। অসম ও ওড়িশাতে মোট আক্রান্ত ১ লক্ষ ২৫ হাজার করে। গুজরাতেও মোট আক্রান্ত এক লক্ষ ছাড়িয়েছে।

রাজস্থানে মোট আক্রান্তের সংখ্যাটা ৯১ হাজার ছুঁতে চলেছে। কেরলে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৮৮ হাজার। হরিয়ানা ও মধ্যপ্রদেশে মোট আক্রান্ত পেরিয়েছে ৭০ হাজার। পঞ্জাবে ৬৩ হাজার, ঝাড়খণ্ডে ৫১ হাজার, জম্মু ও কাশ্মীরে মোট আক্রান্ত ৪৫ হাজার। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে, ছত্তীসগঢ়, উত্তরাখণ্ড, গোয়া, ত্রিপুরা। মণিপুর, হিমাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশের মতো রাজ্যে মোট আক্রান্ত ১০ হাজারের কম।

পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণ বেশ কিছু দিন ধরে তিন হাজারের নীচে ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় তা তিন হাজার পেরিয়েছে (৩,০৮৭)। এ নিয়ে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৭৮৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫২ জনের। করোনার কবলে এ রাজ্যে এখনও অবধি প্রাণ হারিয়েছেন ৩ হাজার ৫৬২ জন।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন