ইদ ও দুর্গাপুজো-সহ মহোৎসবের মরসুম সমাগত। এরই মধ্যে ১ অক্টোবর থেকে পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশে পণ্য পরিবহণে ‘চাক্কা জ্যাম’-এর ডাক দিয়েছে ‘অল ইন্ডিয়া মোটর ট্রান্সপোর্ট কংগ্রেস’ বা এআইএমটি। তাদের মূল দাবি, জাতীয় সড়কে টোল আদায়ের ব্যবস্থা তুলে দিতে হবে। আছে ‘পুলিশি জুলুম’ বন্ধ করা এবং সড়ক-সুরক্ষার বন্দোবস্ত করার দাবিও।
উৎসবের মধ্যে ট্রাক-সহ যাবতীয় পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধ রাখার এই আন্দোলনে যে-সব রাজ্য সব থেকে সঙ্কটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাংলা তার অন্যতম। যান ধর্মঘটের আহ্বায়ক সংগঠন এআইএমটি-র কর্তাদের দাবি, প্রস্তাবিত আন্দোলনে গোটা দেশে পণ্যবাহী প্রায় ৯০ লক্ষ গাড়ি চলবে না। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেই গাড়ির সংখ্যা প্রায় পাঁচ লক্ষ। সব স্তব্ধ হবে।
কলকাতা হয়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চলে দৈনিক প্রায় ১০ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক যায়। আবার ডিম, মাছ, সব্জি, মশলা প্রভৃতি নিয়ে দক্ষিণের বিভিন্ন রাজ্য থেকে কলকাতায় আসে বেশ কয়েক হাজার ট্রাক। যানবাহনে পণ্য বহনের এই বিপুল স্রোত থমকে যাবে জেনেও আন্দোলনের ডাক কেন?
এআইএমটি-র শরিক ক্যালকাটা গুডস ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের তরফে রাজা রায় শুক্রবার কলকাতায় এ কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘আমরা টোল বন্দোবস্ত তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। সাধারণ মানুষ সঙ্কটে পড়বেন ভেবেই এত দিন চরম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমরা অনেক অপেক্ষা করেছি। কিন্তু প্রশাসনের নানা স্তরে বহু আবেদন করেও ফল হয়নি। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়াতেই চাক্কা জ্যামের ডাক দিতে হল।’’ রাজাবাবুর অভিযোগ, টোলই একমাত্র সমস্যা নয়। সড়কে পদে পদে নিরাপত্তার অভাব। তার উপরে পুলিশি জুলুমে তাঁদের পক্ষে পণ্য পরিবহণের কাজ চালানোই মুশকিল হয়ে উঠেছে। নিরাপত্তার দাবি এবং পুলিশি উপদ্রবের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোটাও তাঁদের লক্ষ্য।
টোল আদায়ে সমস্যাটা কোথায়?
এআইএমটি-র টোল কমিটির চেয়ারম্যান জি আর ষণ্মুগাপ্পার দাবি, ‘‘জোকা আইআইএম-এর সঙ্গে একটি পরিবহণ সংস্থা যৌথ সমীক্ষায় দেখেছে, গোটা দেশের বিভিন্ন জাতীয় সড়কে টোলের লাইনে দাঁড়ানো, শ্রমদিবস নষ্ট, দূষণ, দুর্নীতি প্রভৃতি কারণে ফি-বছর ব্যবসায়ীদের প্রচুর টাকা গচ্চা যায়। আমরা টোলের এই বিপুল ভার বহন করব কেন?’’
কিন্তু টোল না-দিলে নতুন নতুন রাস্তা তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিপুল অর্থ আসবে কোথা থেকে?
‘‘পথকর, গাড়ির লাইসেন্স, ডিজেলের উপরে সেস-সহ নানা খাতে সরকার এমনিতেই আমাদের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ নিচ্ছে। এর উপরে রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত টাকা দিতেও রাজি আছি আমরা। কিন্তু টোল গেট আমাদের কাছে অত্যাচারের সামিল হয়ে উঠেছে,’’ বললেন এআইএমটি-র সভাপতি ভীম ওয়াধওয়া।
তবে জাতীয় সড়ক উন্নয়ন অথরিটি (এনএইচএআই)-র দাবি, সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অনেক দেশেই টোল ব্যবস্থা আছে। এ দেশেও প্রশাসন ও পরিবহণ সংগঠনগুলোর বিভিন্ন স্তরে কথা বলে টোল পদ্ধতি কার্যকর হয়। চালু হয় বৈদ্যুতিন ব্যবস্থা (ই-টোলিং)। কিন্তু ট্রাক সংগঠনের প্রশ্ন, নতুন রাস্তা তৈরির খরচ উঠে আসার পরেও যে-হারে টোল নেওয়া হচ্ছে, সেটা অত্যন্ত বেশি। এত টাকা যাচ্ছে কোথায়? প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে এর জবাব মিলছে না।
সম্প্রতি আয় থেকে সরাসরি কর কেটে নেওয়ার (টিডিএস) যে-সিদ্ধান্ত হয়েছে, তারও প্রতিবাদে সরব হয়েছেন ট্রাক সংগঠনের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, কর তো দেওয়া হয়ই। তা সত্ত্বেও ২০১৫ সালে আর্থিক আইনের ১৯৪সি ধারা সংশোধন করে সরাসরি কর কেটে নেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। ওই সংশোধনী প্রত্যাহারের দাবিও জানান তাঁরা।