—প্রতীকী চিত্র।
দলীয় রীতি মেনে পার্টি ক্লাস হওয়ার রেওয়াজ আছে তাদের। কিন্তু শুধু তাতে কুলোচ্ছে না! কেরলে আরএসএস এবং বিজেপি-র মোকাবিলায় এখন টানা কয়েক দিন ধরে কর্মশালা করতে হচ্ছে দুই কমিউনিস্ট পার্টিকে!
কেরল, ত্রিপুরার মতো বাম-শাসিত রাজ্যগুলির দিকে এখন বিশেষ নজর দিয়েছে গেরুয়া শিবির। কেরলে লক্ষ্য আগামী লোকসভা ভোট, ত্রিপুরায় তারও আগে বিধানসভা ভোট। দুই রাজ্যের মধ্যে কেরলই দু’পক্ষের সংঘর্ষে বেশি রক্তাক্ত। হানাহানিতে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে দুই শিবিরেরই। এই পরিস্থিতিতে মতাদর্শগত ভাবে হিন্দুত্ব ব্রিগেডের মোকাবিলার লক্ষ্যে জেলায় জেলায় বিশেষ শিবির করে নেতা-কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সিপিএম এবং সিপিআই। পিনারাই বিজয়নের সরকারে সিপিআই এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক।
কেরলে গত ৩ অক্টোবর থেকে রবিবার পর্যন্ত ‘জনরক্ষা যাত্রা’য় নেমেছিল বিজেপি। দলের সভাপতি অমিত শাহ, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ থেকে শুরু করে এক ঝাঁক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সেই যাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন। তবে তার পরেও সে রাজ্যে ভেঙ্গারা বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি পেয়েছে চতুর্থ স্থান। আর জয়ী মুসলিম লিগের সঙ্গে দ্বিতীয় সিপিএমের ব্যবধান কমে এসেছে। এই ঘটনায় ঈষৎ উজ্জীবিত বাম শিবির। তারা এ বার কর্মশালা-সহ আরও নানা কর্মসূচি বাড়াতে চলেছে।
আরও পড়ুন:বিরোধী জোট চান ভিএস-আইজ্যাকেরাও
সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক সুধাকর রেড্ডির কথায়, ‘‘কেরলে রক্তাক্ত সংঘর্ষ হচ্ছে মূলত আরএসএসের সঙ্গে সিপিএমের। কিন্তু কমিউনিস্ট মতাদর্শকেই প্রতিপক্ষ হিসাবে চিহ্নিত করেছে আরএসএস। আমরা নিয়মিত যে সব ক্লাস করে থাকি কর্মীদের জন্য, এই পরিস্থিতিতে সেগুলোই আরও বাড়িয়েছি।’’ সিপিআইয়ের শীর্ষ নেতৃত্ব ঘুরে ঘুরে ওই ধরনের কর্মশালায় যোগ দিচ্ছেন। রেড্ডি বলছেন, ‘‘আমি নিজেও আবার যাচ্ছি ২৮ অক্টোবর।’’
একই কৌশল নিয়েছে সিপিএমও। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের রেখে টানা ৬-৭ দিনের কর্মশালা আয়োজন করছে তারাও। জাতীয় স্তরে সিপিএমের বিরুদ্ধে আরএসএস এবং বিজেপি যা প্রচার করছে, তার জবাব দেওয়ার কৌশলও বাতলে দেওয়া হচ্ছে সেখানে। সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য এম এ বেবির বক্তব্য, ‘‘আমাদের হাতিয়ার আমাদের মতাদর্শই। আমাদের হাতিয়ারেই আমরা শান দিচ্ছি!’’ দল থেকে বহিষ্কারের আগে সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় একটি সর্বভারতীয় চ্যানেলে সাক্ষৎকারে দাবি করেছিলেন, আরএসএসের সঙ্গে জন্য লড়ার জন্য কেরলের কিছু জেলায় শিক্ষা শিবিরের আড়ালে অস্ত্রশস্ত্রের প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। সিপিএম এবং সিপিআই নেতৃত্ব অবশ্য এমন দাবিকে ‘প্রলাপ’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন।
প্রশিক্ষণ শিবিরে দুই বাম দলই পরামর্শ দিচ্ছে, শুধু ধর্মীয় প্রচারের জবাব দিয়ে সঙ্ঘ বা বিজেপি-র মোকাবিলা হবে না। সাধারণ মানুষের জীবন ও অর্থনীতিতে বাম ও গেরুয়া শিবির কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে, সেই তুলনামূলক আলোচনাকে চর্চায় আনতে হবে। সেইমতোই বিজয়ন বা মানিক সরকারের ‘সাফল্য’ বেশি করে সামনে আনা হচ্ছে।