পোড়া ঘরে ইয়েচুরি, আহতের পাশে মানিক

খয়েরপুর, মোহনপুর বা মজলিশনগরে বেশ কিছু পার্টি অফিসে আবার শুধু তালা লাগিয়ে বাইরের পতাকাটা বদলে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

খুমলুঙ শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৮ ০৩:৫৩
Share:

তাণ্ডব: নিশানায় এ বার চে গ্যেভারা-ও! ভাঙচুরের পরে দলীয় কার্যালয় ঘুরে দেখছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। শনিবার ত্রিপুরার মান্দাইয়ের শচীন্দ্রনগরে। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী

সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গেলেন হাসপাতালে আহতদের পাশে। দলের সাধারণ সম্পাদক গিয়ে দাঁড়ালেন আক্রান্ত এলাকায় পোড়া পার্টি অফিসে, ভাঙা ঘরের উঠোনে।

Advertisement

বন্ধঘরে বিপর্যয়ের শোকপালন আর ময়না তদন্তে কালক্ষেপ ছেড়ে ত্রিপুরায় দ্রুত ময়দানে নামল বিরোধী সিপিএম! রাজনৈতিক লাইন আর তাত্ত্বিক বিতর্কে ডুবে থাকার চিরকালীন অভিযোগে বিদ্ধ সিপিএমের কোনও সাধারণ সম্পাদক সাম্প্রতিক কালে যা করেননি, সেই রেওয়াজ ভেঙে আক্রান্ত এলাকার কর্মী-সমর্থকদের কাঁধে হাত রাখলেন সীতারাম ইয়েচুরি। আগরতলার হাসপাতালে আহতদের শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে মানিক সরকার বললেন, ‘‘ভেঙে পড়বেন না। চির কাল সবাই জেতে না!’’

বাংলায় পরিবর্তনের পরে সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুরা পথে নামতে গিয়ে তৃণমূলের ঢিল-পাটকেল খেয়েছিলেন। ত্রিপুরায় যে বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদেরই সরকার সিপিএম নেতাদের জন্য নিরাপত্তার বন্দোবস্ত রেখেছিল পুলিশের বেষ্টনী দিয়ে। যা দেখিয়ে বিজেপি নেতারা অন্তত দাবি করতে পারছেন, তাঁরা রাজনীতি আর প্রশাসন গুলিয়ে ফেলেন না!

Advertisement

দলের দুই রাজ্য নেতা মানিক দে ও পবিত্র কর এবং দুই সাংসদ শঙ্করপ্রসাদ দত্ত ও ঝর্ণা দাস বৈদ্যকে সঙ্গে নিয়ে ইয়েচুরি আজ ঘুরে বেড়িয়েছেন খয়েরপুর, মোহনপুর, জিরানিয়া হয়ে খুমলুঙ, মান্দাইয়ের উপজাতি এলাকায়। ব্যবসায়ী বা সন্ত্রস্ত্র গৃহস্থকে আশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কোথাও আবার স্থানীয় বিজেপি নেতা এসে তাঁকে প্রণাম করে গিয়েছেন!

আরও পড়ুন: বেতন কমিশন নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি বিপ্লবদের

খুমলুঙে জাকির হোসেনের বাড়ির সেলাই মেশিন থেকে বাচ্চাদের খেলনা— সবই আছড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে উঠোনে। তাঁর এক পড়শি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘‘ওদের বলেছিলাম, জিতেছো তো তোমরা। তবু ছাড়ল না।’’ শচীন্দ্রনগরে সিপিএমের কার্যালয়ে ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে চে গ্যেভারার ছেঁড়া ছবি বার করে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক কর্মীদের দিয়ে বলেছেন তুলে রাখতে। মান্দাই বাজারে ভেঙে দেওয়া চায়ের দোকানে কিশোর দেববর্মাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন, আবার স্বাভাবিক হবে সব। নতুননগরে মার্ক্সের ভাঙা মূর্তির অবশেষটুকু দেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকেছেন।

খয়েরপুর, মোহনপুর বা মজলিশনগরে বেশ কিছু পার্টি অফিসে আবার শুধু তালা লাগিয়ে বাইরের পতাকাটা বদলে দেওয়া হয়েছে। আক্রান্ত এক অফিসের সামনে দাঁড়িয়েই ইয়েচুরি বলছিলেন, ‘‘হাড় হিম করা এই দৃশ্য গণতন্ত্রের জন্য ভাল নয়। আশা করি, বিজয়ীর শুভবুদ্ধি হবে। হামলা বন্ধ না হলে প্রতিরোধ হবে। ত্রিপুরার মানুষ শান্তি ফেরাতে জানেন।’’ বাংলাতেও তো আপনারা প্রতিরোধ বলতেন! হল কই? ইয়েচুরির জবাব, ‘‘বাংলাও ঘুরে দাঁড়াবে। ত্রিপুরাও!’’

মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব অবশ্য বলছেন, ‘‘প্রশাসন সতর্ক আছে। দিল্লির কমিউনিস্ট বন্ধুদের প্রণাম জানিয়ে বলছি, ত্রিপুরার বদনাম করবেন না!’’ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশের ডিজি এ কে শুক্লও জানিয়েছেন, অশান্তি কড়া হাতে দমন করা হবে। গুজব ছড়ালেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভবিষ্যতে কী হবে, ভবিষ্যৎই জানে। তবে সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্বের পদক্ষেপে নীরবে কোথাও ধরা থাকল এক চিলতে প্রত্যয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন