১৪ প্রাণ যাওয়ার পরে নড়ল টনক

আমেরিকা থেকে বেড়াতে এসেছিলেন ভারতী এবং তাঁর দুই ভাইপো ধৈর্য এবং বিশ্ব লালাণি। সে দিন পরিবারের সঙ্গে হইচই করতেই ওই রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন। আগুন ছড়িয়ে পড়ায় সবাই প্রাণ বাঁচাতে পালাতে শুরু করেন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

মুম্বই শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৪
Share:

অভিযান: অগ্নিকাণ্ডে ১৪টি প্রাণ খোয়ানোর পরে নড়ে বসল পুরসভা। শনিবার মুম্বইয়ে ভাঙা হচ্ছে রেস্তোরাঁর বেআইনি অংশ। ছবি: পিটিআই।

বিপর্যয়ের পরে ৪৮ ঘণ্টা কাটতে চলল। এখনও মাঝেমধ্যেই ডুকরে উঠছেন ভারতী দোশি। বলছেন, ‘‘বোন তো কখনও কোথাও বেরোত না। সে দিন আমিই বেরোনোর জন্য জোর করেছিলাম। তাই ও এসেছিল।’’

Advertisement

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ভয়াল আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে মুম্বইয়ের লোয়ার প্যারেল এলাকার কমলা মিলস কম্পাউন্ডের রুফটপ রেস্তোরাঁ ‘ওয়ান অ্যাবাভ’। ওই আগুন কেড়ে নিয়েছে ভারতীর বোন প্রমীলা ও দুই ভাইপো-সহ ১৪টি প্রাণ।

আমেরিকা থেকে বেড়াতে এসেছিলেন ভারতী এবং তাঁর দুই ভাইপো ধৈর্য এবং বিশ্ব লালাণি। সে দিন পরিবারের সঙ্গে হইচই করতেই ওই রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলেন। আগুন ছড়িয়ে পড়ায় সবাই প্রাণ বাঁচাতে পালাতে শুরু করেন। ভারতীর বোন প্রমীলা ভিতরেই রয়ে গিয়েছিলেন। তাঁকে ও পরিবারের অন্যদের বাঁচাতে গিয়েছিলেন ধৈর্য আর বিশ্ব। প্রমীলার সঙ্গে তাঁরাও মারা যান।

Advertisement

বৃহস্পতিবারের অগ্নিকাণ্ডের পরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে মুম্বইয়ের ঘিঞ্জি এলাকায় তৈরি বহুতল ও সেগুলির সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। বহুদিন ধরেই অভিযোগ, এলাকায় যে বিল্ডিংগুলি রয়েছে, তাতে আগুন নেভানো ও সুরক্ষা ব্যবস্থা ঠিক মতো নেই। তা সত্ত্বেও ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছে তারা।

আইনের ফাঁক গলে কারা এ ভাবে পার পেয়েছে, লোয়ার প্যারেলের অগ্নিকাণ্ডের পরে তা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। তার পরেই নড়েচড়ে বসেছে বৃহন্মুম্বই পুরসভা (বিএমসি)। পুর কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, কোন কোন হোটেল-রেস্তোরাঁ বেআইনি, তা জানতে একটি দল গঠন করা হয়েছে। আজ সকাল থেকেই ওই এলাকায় বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে শুরু হয়েছে অভিযান। তার মধ্যে একাধিক রেস্তোরাঁর অংশও রয়েছে। এখনও পর্যন্ত লোয়ার প্যারেল এলাকার ছ’টি রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছে বিএমসি। পাশাপাশি, অন্ধেরীর কিছু রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ভাঙা হয়েছে বেআইনি অংশ।

‘ওয়ান অ্যাবাভ’-এ ওই দিন আগুন ঠিক কী কারণে লেগেছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। দমকল অফিসারেরা জানিয়েছেন, শর্ট সার্কিট না বারটেন্ডারদের আগুন নিয়ে খেলা, নাকি হুঁকোয় ব্যবহৃত কয়লা থেকে আগুন লেগেছে— তা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন। ওই রেস্তোরাঁয় অনেক ত্রিপল রাখা ছিল। যার জেরে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

অগ্নিকাণ্ডের পরে গত কাল আবার বিতর্ক বাধিয়েছেন বিজেপির অভিনেত্রী-সাংসদ হেমা মালিনী। তিনি জানান, পুলিশ নিজের কাজ ঠিক ভাবেই করছে। কিন্তু মুম্বই শহরে জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে।
আর যার জেরে এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটছে।

তবে এই দুর্ঘটনায় বর্ষশেষের আনন্দ কিছুটা হলেও ম্লান বাণিজ্যনগরীতে! বন্ধ রাখা হয়েছে বহু রেস্তোরাঁই। ফলে অনেকেই খানাপিনার পরিকল্পনা বাতিল করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন