সুনসান রাস্তা। বুধবার পার্থ চক্রবর্তীর তোলা ছবি।
গোষ্ঠী-সংঘর্ষের পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত হলেও এখনও আতঙ্ক কাটেনি জামশেদপুরের বাসিন্দাদের। গত রাত থেকে শুরু হওয়া কার্ফু আজ তিনঘন্টার জন্য শিথিল করা হলেও মূল অকুস্থল, শহরের মানগো এলাকায় কার্ফু শিথিল করা হয়নি। এসএসপি অনুপ টি ম্যাথিউ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। আজ কয়েকটি ছোট ঘটনা ছাড়া বড় কোনও গন্ডগোল হয়নি। পুলিশ রাস্তায় টহল দিচ্ছে।’’
আজ জামশেদপুরের রাস্তায় জেলা পুলিশের সঙ্গে টহল দিয়েছে পটনা ও ভাগলপুর থেকে আসা সিআরপিএফ জওয়ান, ঝাড়খণ্ড আর্মড পুলিশ, কুইক রেসপন্স টিম, র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সকে। মূলত জামশেদপুরের চারটি থানা এলাকা—মানগো, ওলিডিহ, আজাদনগর ও এমজিএম-এ গন্ডগোল সব থেকে বেশি ছড়ায়। এ দিন ওই চত্বরে পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনী টহলদারী চালায়। মানগোর মুন্সি মহল্লায় সকালের দিকে দু’টি বোমা ফাটে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। পুলিশ অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিষ্টুপুর এলাকাতেও দুপুরে দু’টি গোষ্ঠী গন্ডগোল করার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ।
আজও শহরের রাস্তাঘাট ছিল শুনশান। উল্লেখ্য, সোমবার রাতে এক জন মহিলার সঙ্গে অশালীন আচরণের অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মানগো এলাকা। তার জেরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে পর দিন শুরু হয় সংঘর্ষ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মঙ্গলবার দোকানে যখন আগুন লাগানোর সময় প্রথমে পুলিশ নিস্ক্রিয় ছিল। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ শূন্যে গুলি চালায়, কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে, লাঠি চার্জও করে।
আজাদনগর এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, গন্ডগোলের মধ্যে বাচ্চাদের স্কুলবাসও গিয়ে পড়ে। অভিভাবকরা দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন। মানগোর একজন অভিভাবক বলেন, ‘‘স্কুল বাস আসছে না দেখে আমি আমার স্কুটার নিয়ে বাস খুঁজতে বেরোই। মানগোর কিছু দূরে দেখি বাসটা দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তা দিয়ে কিছু যুবক লাঠি নিয়ে দৌড়চ্ছে। বাসের কাছে গিয়ে দেখি বাচ্চারা কান্না জুড়েছে।’’ শুধু স্কুলবাসই নয় সমস্যার মধ্যে পড়ে যান অন্য এলাকার নাইট শোয়ের দর্শকরাও। এ রকমই এক দর্শকের কথায়, ‘‘নাইট শোয়ে আসার সময়েও কার্ফু ছিল না। গন্ডগোলের ততটা আঁচও পাইনি। পরে শুনলাম কার্ফু জারি হয়েছে। বাড়ি ফিরব কী করে? ভাবলাম, সিনেমা হলেই বুঝি রাত কাটাতে হবে। শেষ পর্যন্ত পুলিশই আমাদের বাড়ি পৌছে দেয়।’’
গত কালই জানানো হয়েছিল, আজ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। সিনেমা হল বন্ধ থাকবে। বুধবার পুলিশ জানায়, আগামী কাল, বৃহস্পতিবারও সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বুধবার শহরের সব পেট্রোল পাম্প বন্ধ ছিল। এদিন টাটানগর স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে অনেককেই হেঁটে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। এমনকী শহরের ঢোকার ও বেরনোর প্রায় প্রতিটি রাস্তাই ছিল বন্ধ। একটি রাজনৈতিক সংগঠন ঘটনার প্রতিবাদে আজ জামশেদপুর বন্ধের ডাক দেয়। তবে কার্ফু কবলিত শহরে তার প্রভাব নতুন করে বোঝা যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, কার্ফু শিথিলের সময় বা খুবই জরুরি কাজে যাঁরা বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন, তাঁদের নিজের পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে।
প্রশ্ন উঠেছে, মঙ্গলবার রাতে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারল না কেন? জামশেদপুরের এক পুলিশ কর্তা স্বীকার করেছেন, ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে তাঁদের কিছুটা সময় লেগে গিয়েছিল। ঘটনাস্থলে কম পুলিশ গিয়েছিল। বড় পুলিশ বাহিনী যখন ঘটনাস্থলে পৌছয় তখন তাদের উদ্দেশে ইটবৃষ্টি শুরু হয়। ঘায়েল হন একজন ডিএসপি, একজন ইনস্পেক্টর-সহ ১৪ জন পুলিশ।