হুদহুদের আশঙ্কায় আগাম প্রস্তুতি ভুবনেশ্বরে। ছবি: পিটিআই।
এত দিন ছিল বার্তাবাহক। এ বার সে নিজেই খবর হয়ে উঠেছে। তার গতিবিধিতে রীতিমতো অশনি সঙ্কেত দেখছে ভারতের পূর্ব উপকূলের বিরাট অংশ। কারণ, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিয়ে ওড়িশা উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে হরকরা পাখি হুদহুদ।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সাম্প্রতিকতম ঘূর্ণিঝড়টির এই নামকরণ করেছে ওমান। সেখানকার স্থানীয় ভাষায় ‘হুদহুদ’ হল এক ধরনের পাখি, যাকে কি না খবর আদান-প্রদানের কাজে ব্যবহার করা হতো। আমাদের দেশে পায়রা বা বাজ পাখির মতো। সেই বাজের পরাক্রম নিয়েই হুদহুদ এখন আন্দামান থেকে ওড়িশা-অন্ধ্র উপকূল পর্যন্ত দীর্ঘ সাগরপথ পাড়ি দিতে ব্যস্ত। তটভূমিতে আছড়ে পড়ে বিপর্যয় ঘটানোর লক্ষ্যে।
হুদহুদ এখন ঠিক কোথায়?
হাওয়া অফিসের খবর, বুধবার রাতে তার অবস্থান ছিল আন্দামানের কাছাকাছি। রাতারাতি পশ্চিম উত্তর-পশ্চিম দিকে অনেকটা এগিয়ে বৃহস্পতিবার সকালেই তা পৌঁছে গিয়েছে ওড়িশার গোপালপুরের সাড়ে সাতশো কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে। এক রাতের মধ্যে শক্তিও বাড়িয়ে নিয়েছে বিস্তর। ঘূর্ণিঝড় (বায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০-১০০ কিলোমিটার) থেকে পরিণত হয়েছে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে (গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার)। এ দিকে বায়ুর তীব্রতার সঙ্গে ঝড়-কেন্দ্রের ভরও বেড়েছে। ফলে স্থলভূমির দিকে তার চলনের গতি কমেছে। অর্থাৎ, সাগরবক্ষে আরও বেশি সময় কাটিয়ে, আরও বেশি জলীয় বাষ্প টেনে তেজ বাড়ানোর মওকা পেয়ে যাচ্ছে হুদহুদ।
আর এতেই কপালে ভাঁজ পড়ছে আবহবিদদের। প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে অন্ধ্র-ওড়িশা প্রশাসন। কেন?
দিল্লির মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, শক্তি বাড়িয়ে আজ, শুক্রবার সকালের মধ্যে হুদহুদ অতি-প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে (বায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০-১৫৫ কিলোমিটার) রূপান্তরিত হবে। দুর্দম শক্তি নিয়ে ধীরে ধীরে এগোতে থাকবে ওড়িশা-অন্ধ্র উপকূলের দিকে। ঘূর্ণিঝড়ের বর্তমান অভিমুখ ও তার কেন্দ্রস্থিত বায়ুর গতিবেগ বিচার করে আবহ-বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক অনুমান, রবিবার সকালের মধ্যে অতি-প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের চেহারাতেই হুদহুদ ডাঙায় ঢুকবে। এবং তার সম্ভাব্য আঘাতস্থল, উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তম উপকূলের আশপাশ।
ফলে অন্ধ্র-ওড়িশা তটে বিপর্যয়ের সমূহ সম্ভাবনা। যার মোকাবিলায় ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে জোরকদমে। পশ্চিমবঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কী রকম?
এ রাজ্যের ক্ষেত্রে আবহবিদেরা আপাতত বিশেষ উদ্বেগের কিছু দেখছেন না। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের বক্তব্য, এ দিন বিকেল পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের যা অভিমুখ, তাতে পশ্চিমবঙ্গের দুশ্চিন্তা তেমন নেই। তবে সপ্তাহশেষে দিঘা-শঙ্করপুরে ঝোড়ো হাওয়া বইবে, সমুদ্র কিছুটা উত্তাল হবে। শনিবার বিকেলের পরে দুই মেদিনীপুর ও দুই ২৪ পরগনায় ভারী বৃষ্টি নামতে পারে। আবহবিদেরা অবশ্য এ-ও জানিয়ে রেখেছেন, অন্ধ্র উপকূল পেরিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি দিশা বদলে ওড়িশায় ঢুকে পড়লে পশ্চিমবঙ্গের কিছুটা বিপদ আছে। সে ক্ষেত্রে এখানে ঝোড়ো বাতাস তীব্রতর হবে, সঙ্গে তেজ বাড়বে বৃষ্টির। “ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে ঝড় যত এগোবে, এ রাজ্যের উপকূলের পরিস্থিতি তত ঘোরালো হবে।” মন্তব্য এক আবহবিদের।
যদিও তেমন আশঙ্কা এই মুহূর্তে আলিপুর দেখতে পাচ্ছে না। আবহবিদেরা অবশ্য জানাচ্ছেন, ঘূর্ণিঝড় শেষমেশ ঠিক কোথায় গিয়ে আছড়ে পড়বে, কিংবা স্থলভূমিতে প্রবেশের মুহূর্তে তার তীব্রতা কত থাকবে এ সব নির্ভর করে প্রাকৃতিক বিবিধ কারণের উপরে। তার একটার সামান্য অদল-বদল হলেই ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ কিংবা শক্তিমাত্রা বদলে যেতে পারে। তাই হুদহুদ তটভূমির খুব কাছাকাছি না-আসা পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয় যে, সে ঠিক কোথায় আঘাত হানবে।
শনিবার দুপুর কাটলে সেটা বোঝা যেতে পারে।