Marathon Runner

মাথাতে ইটের বোঝাই অনুশীলন! দিল্লির নির্মাণশ্রমিক অংশ নেন ‘হাই অলটিটিউড’ ম্যারাথনে

২০২৮ সালের অলিম্পিক্সে ‘ট্রায়াথলন’-এর জন্য তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রোহিত। দেশের হয়ে তিনি প্রতিনিধিত্ব করতে চান।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:১৮
Share:

স্পিতি ম্যারাথনে অংশগ্রহণকারী রোহিত ( লালরঙা অ্যাথলিট শুট পরা)। ছবি: সংগৃহীত।

মাথায় ইটের বোঝা। তা নিয়েই দৌড়ে চলেছেন বছর বত্রিশের যুবক। মুখে ক্লান্তির রেশমাত্র নেই। চটপট করে একটি বড় পাত্রে ইট ভরছেন, আর মাথায় চাপিয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন মিস্ত্রির কাছে। রোজ সকালে এ ভাবেই দেখা যায় দিল্লির রোহিত কুমারকে। আদতে তিনি বিহারের খাগাড়িয়ার বাসিন্দা। কিন্তু নির্মাণশ্রমিক হিসাবে কাজ করেন দিল্লিতে। নামমাত্র মজুরিতে। তবে রোহিতের আরও একটি পরিচয় রয়েছে। তিনি ‘ম্যারাথন রানার’।

Advertisement

সম্প্রতি লাদাখের স্পিতিতে একটি ম্যারাথন দৌড়ের আয়োজন করা হয়েছিল। ‘হাই অলটিটিউড’ ওই ম্যারাথনে যেখানে দুঁদে দৌড়বিদেরা হিমশিম খান, হাড়কাঁপানো ঠান্ডা আর পাহাড়ি রাস্তায় ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এবং সাফল্যের সঙ্গে সেই প্রতিযোগিতায় রোহিত দৌড় শেষ করায় স্তম্ভিত হয়েছেন ভারতীয় সেনার আধিকারিক থেকে জওয়ানেরাও।

রোহিতের এই ‘পারফরম্যান্স’-এ উচ্ছ্বসিত সেনা। সেনার ‘উত্তর ভারত’-এর তরফে এক্স হ্যান্ডলে লেখা হয়েছে, ‘‘দিল্লির দিনমুজর রোহিত। বয়স মাত্র ৩২। তার না ছিল কোনও স্পনশরশিপ, না ছিল কোনও রেকর্ড করার বাসনাও। শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে দৌড়ে গিয়েছে। ওর এই সাধনা সত্যিই অনুপ্রেরণা জোগায়।’’ অগস্টে স্পিতিতে অনুষ্ঠিত হওয়া সেই ম্যারাথনে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন রোহিত।

Advertisement

এই প্রথম নয়, এখনও পর্যন্ত মোট সাতটি ম্যারথনে স্থান অর্জন করেছেন রোহিত। টাইম্‌স অফ ইন্ডিয়া-কে তিনি জানিয়েছেন, একশোটিরও বেশি ম্যারাথনে অংশ নেওয়া হয়ে গিয়েছে। রোহিতের কথায়, ‘‘আমি এখন দৌড়ের গুণমানের উপর নজর দিচ্ছি। সে কারণেই সেনা আয়োজিত স্পিতি ম্যারাথনে অংশ নিয়েছি। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছি।’’ রোহিতের দৌড়ে মুগ্ধ হয়ে ভারতীয় সেনা তাঁকে সব রকম ভাবে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে। রোহিত বলেন, ‘‘আমাকে আরও একটি ‘হাই অলটিটিউড’ ম্যারাথনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেটি হবে অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াঙে। ভারতীয় সেনা আশ্বাস দিয়েছে, ওই ম্যারাথনে তারা আমার সব খরচ বহন করবে। আশা করছি, এই ম্যারাথনেও কোনও ভাল ফল করব।’’

বর্তমানে মোহিতকে দিনমজুরের কাজ করতে হয় না। কিন্তু ২০১৭ সালে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছিল। নেমে এসেছিল একরাশ হতাশা। ডাক্তারি পড়ার জন্য রাশিয়ার একটি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন রোহিত। সেখানে দু’বছর ছিলেন। কিন্তু কৃষক পরিবারের সন্তান রোহিতের জীবনে আর্থিক সঙ্কট নেমে আসে। মাঝপথেই পড়া ছেড়ে দেশে ফিরতে হয়। কিন্তু দেশে ফিরে কোনও কাজ না পেয়ে শেষে নির্মাণশ্রমিকের কাজ শুরু করেন তিনি।

২০২০ সালে যখন দেশ কোভিড পরিস্থিতি আসে, কাজ চলে যায় রোহিতের। তিনি জানিয়েছেন, সেই সময় মোবাইলে আন্তর্জাতিক ম্যারাথনগুলি খুব ভাল ভাবে নজর রাখতেন। আর সেই ম্যারাথনই তাঁকে এই ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। শুরু হয় নিজেই নিজেকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ। কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার নির্মাণকাজে যোগ দেন রোহিত। কিন্তু তাঁর প্রশিক্ষণ বজায় রেখেছিলেন। তাঁর দিন শুরু হত ভোর সাড়ে ৪টেয়। দৌড়োনোর অনুশীলন করতেন। তার পর সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দিনমজুরের কাজ করতেন। মাথায় ইট নিয়ে কখনও দোতলা, কখনও তিনতলায় উঠতেন। কর্মস্থলে মাথায় ইট নিয়ে দৌড়োতেন। রোহিত জানিয়েছেন, এ ভাবেই তাঁর সহনশীলতা বেড়েছে। সন্ধ্যাবেলায় এক ঘণ্টা সাঁতার কাটতেন। তার পর রাতের রান্না করে খেয়েদেয়ে বিশ্রাম নিতেন। এই ছিল তাঁর দৈনন্দিন রুটিন।

২০২৮ সালের অলিম্পিক্সে ‘ট্রায়াথলন’-এর জন্য তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রোহিত। দেশের হয়ে তিনি প্রতিনিধিত্ব করতে চান। রোহিতের অলিম্পিক্সের স্বপ্ন পূরণ করতে ভারতীয় সেনার তরফে সমস্ত সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement