উত্তরপ্রদেশে দলিত, মুসলিম জোটেই উদ্বিগ্ন বিজেপি

উত্তরপ্রদেশে দলিত ও মুসলমান— এই দুই সম্প্রদায় নিজেদের আক্রান্ত বলে মনে করে যে ভাবে একত্রিত হচ্ছে, তাতে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব উদ্বিগ্ন। বিএসপি নেত্রী মায়াবতী এই দুই সম্প্রদায়কে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে ইতিমধ্যেই সক্রিয় হয়েছেন।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৬ ০৪:২৪
Share:

উত্তরপ্রদেশে দলিত ও মুসলমান— এই দুই সম্প্রদায় নিজেদের আক্রান্ত বলে মনে করে যে ভাবে একত্রিত হচ্ছে, তাতে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব উদ্বিগ্ন। বিএসপি নেত্রী মায়াবতী এই দুই সম্প্রদায়কে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে ইতিমধ্যেই সক্রিয় হয়েছেন। আজ উত্তরপ্রদেশের ৩ সংখ্যালঘু কংগ্রেস বিধায়ক ও এক সমাজবাদী পার্টি বিধায়ক মায়াবতীর দলে যোগ দিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশে দলিত ভোট শতকরা ২২ ভাগ। আর মুসলমান ভোট ১৫ থেকে ১৬ ভাগ।

Advertisement

গুজরাতে দলিতদের নিগ্রহের ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিপুল ভাবে প্রচারিত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত ও দলের সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে আলোচনা করেই দলিতদের পক্ষে পর পর দু’দিন যে ভাবে সরব হয়েছেন, তা অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল। এ নিয়ে বিজেপির এক শীর্ষ নেতার ব্যাখ্যা, গুজরাতে যখন ঘটনাটি ঘটে সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী প্রতিক্রিয়া জানাননি। অতীতে দাদরি নিয়েও প্রধানমন্ত্রীকে তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া দিতে দেখা যায়নি। প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতার একটি স্টাইল থাকে। চাপের কাছে সঙ্গে সঙ্গে নতিস্বীকার করা মোদীর স্টাইল নয়। কারণ ঘটনার পরেই প্রতিক্রিয়া জানালে অনেক সময় প্রতিক্রিয়ার ফাঁদে পড়তে হয়। বিষয়টি আরও গুরুত্ব পেয়ে যায়। তাই এ বারও প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি উপেক্ষা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে যে ভাবে মোদী মুখ খোলেন তাতে দলের রণনীতি অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে বলেই মনে করছেন ওই নেতা। তাঁর কথায়, ‘‘অমিত শাহ গো-রক্ষক সংগঠনগুলিকে কাজে লাগিয়ে, দলিত বিরোধিতাকে মূলধন করে উচ্চবর্ণের হিন্দু ভোটকে সুসংহত করার রণকৌশল নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দল ও সংগঠনের পরিস্থিতি আমূল বদলে দিয়েছে।’’

এক দিকে যেমন মোহন ভাগবতের নির্দেশে আরএসএসের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন, অন্য দিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উত্তরপ্রদেশের মাঝারি সারির বেশ কিছু নেতা কিন্তু এখনও মনে করছেন, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ও অন্য নানা কারণে অখিলেশ যাদবের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ায় মায়াবতী দলিত ও মুসলমান ভোটকে অনেকটাই এককাট্টা করে ফেলেছেন। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির উচিত দলিত ভোটের পিছনে না গিয়ে বরং গো-রক্ষাকে প্রচারের হাতিয়ার করে উত্তরপ্রদেশের ২০ শতাংশ উচ্চবর্ণের ভোটকে ছিনিয়ে নেওয়া।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশে উচ্চবর্ণের ভোট কুড়ি% হলেও, দলিত ভোট ২২%। সংখ্যালঘু ভোট ১৬%। আবার ওবিসি ভোটের মধ্যে শতকরা ১৪ ভাগ যাদব ভোট। বাকি অ-যাদব ওবিসি ভোট, যাতে রয়েছে লোধ, কুর্মি, কইরি, মাল্লারা। উচ্চবর্ণের সঙ্গে এই ভোট পাওয়ার চেষ্টা করলে বিজেপি ভাল ফল করবে বলেই মত দলের। তবে দলিত ভোটের কী হবে, তা নিয়ে দলেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। ওই ভোটের ১৪% জাতভ ভোট। এ ছাড়া রয়েছে পাসোয়ান, পাসি, খাটিক, ভাঙ্গি ভোট। যে ভোট বিজেপির পাওয়া উচিত বলেই মত দলের।

২২ অগস্ট মায়াবতীর প্রথম জনসভা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মেরঠে। মরিয়া বিজেপি মায়াবতীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইলেও, মায়াবতী ভোটের আগে কংগ্রেস-বিজেপি কারও সঙ্গেই বোঝাপড়া করতে উৎসাহী নন। বরং মুলায়ম-অখিলেশ বিরোধী ঝড় তুলে সরকার গঠন করতেই সচেষ্ট তিনি। আর মুসলিম ভোট কাছে টানার লক্ষ্যে অন্যান্য বারের তুলনায় বিজেপি এ বার মায়াবতীর কাছে অনেক বেশি অচ্ছুত। বরং উত্তরাখণ্ডে টালমাটাল পরিস্থিতিতে সরকার গঠনের সময় মায়াবতীর ২ বিধায়ক কংগ্রেসকে সমর্থন করেছিল। কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য আহমেদ পটেল কিন্তু তাঁর সতীর্থ রাজ্যসভার সাংসদ মায়াবতী ও তাঁর প্রধান সেনাপতি সতীশ মিশ্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেছেন। নির্বাচনে কংগ্রেসের কৌশল মায়াবতীকে সঙ্গে রাখা। এই কারণে কংগ্রেসের বিধায়কেরা মায়াবতীর দলে যোগ দিলেও, কংগ্রেস কিন্তু মায়াবতীর জনসভাকে সফল করতে যথেষ্ট উৎসাহী।

এই অবস্থায় ঠিক হয়েছে, সংসদ অধিবেশন শেষে উত্তরপ্রদেশের রণকৌশল ঠিক করতে সঙ্ঘের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বিজেপি নেতারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন