সপ্তাহান্তের স্কুলে ফিরছে উপত্যকার পড়ুয়ারা

সেই যে এ বছর দু’সপ্তাহের জন্য গরমের ছুটি পড়েছিল, সেই শেষ! তার পর থেকে আর স্কুলের পথে দেখা যায়নি ওদের।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শ্রীনগর শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:১০
Share:

স্কুল খুলছে কাশ্মীরে। পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। ছবি: এএফপি

সেই যে এ বছর দু’সপ্তাহের জন্য গরমের ছুটি পড়েছিল, সেই শেষ! তার পর থেকে আর স্কুলের পথে দেখা যায়নি ওদের।

Advertisement

উপত্যকার অশান্তি, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিক্ষোভ— কয়েক মাস ধরে এ সবই দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল ছোট ছোট চোখগুলো। সেই অশান্তির জেরে স্কুলের পাটও চুকিয়ে দিতে হয়েছিল। সেই থেকে মা-বাবারাও আর ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাননি।

কিন্তু চার মাস পরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি মেনে সপ্তাহান্তে অর্থাৎ শনি ও রবিবার খোলা হচ্ছে বেসরকারি স্কুলগুলি। ফলে নতুন করে ফের স্কুলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে উপত্যকার একঝাঁক খুদে।

Advertisement

গত পয়লা জুলাই দু’সপ্তাহের জন্য গরমের ছুটি পড়েছিল কাশ্মীরের স্কুলগুলিতে। কিন্তু তার পর গত ৮ জুলাই হিজবুল জঙ্গি বুরহান ওয়ানির মৃত্যুকে ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল গোটা উপত্যকা। উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল কাশ্মীরের পরিস্থিতি। তার পর থেকে আর স্বাভাবিক হয়নি উপত্যকার পরিস্থিতি। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ, গোলাগুলি, পাথর ছোড়া, বিক্ষোভ মিছিল— এই সবই উপত্যকার চেনা ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই অশান্তির আশঙ্কাতেই ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন অভিভাবকেরা। ফলে গত চার মাস ধরে আর স্কুলের পথে দেখা যায়নি ছাত্র-ছাত্রীদের।

কিন্তু গত ১৬ নভেম্বর বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ঘোষণা করে, গোটা সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা বিক্ষোভে ছাড় দেওয়া হবে। আর শনি এবং রবিবার গোটা দিন বন্ধ থাকবে বিক্ষোভ। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি মেনেই বেসরকারি স্কুলগুলি খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রাইভেট স্কুলস অ্যাসোসিয়েশন অব কাশ্মীরের তরফে জানানো হয়েছে, ‘‘ছাত্র-ছাত্রীরা খুব খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। তাই আমরা ওদের দিকে সব রকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি। এর জন্য আমাদের সমস্ত কর্মী সপ্তাহান্তেও খেটে চলেছেন।’’

যদিও বেসরকারি স্কুলগুলোর মতো বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি মেনে চলছে না সরকারি স্কুলগুলো। কারণ সপ্তাহের অন্য দিনও খোলা রাখা হচ্ছে সরকারি স্কুলগুলি। আর সেখানে শিক্ষকরা হাজির থাকলেও দেখা মিলছে না ছাত্রছাত্রীদের।

আর সপ্তাহান্তে স্কুল খোলায় খানিকটা আশ্বস্ত কিছু অভিভাবক। অনেকেই এখন নিশ্চিন্তে স্কুলে পাঠাচ্ছেন ছেলেমেয়েদের। কিন্তু এর মধ্যেও থেকে যাচ্ছে ফের বিক্ষোভের আশঙ্কা। ফলে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভরসা পাচ্ছেন না কিছু অভিভাবক। এ রকমই এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘এখনও কিছু সমস্যা রয়েছে। যার জন্য বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারছি না। কারণ যানবাহন নেই, বাজার এলাকাও প্রায় ফাঁকা। আর সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, যে কোনও মুহূর্তে অশান্তি তৈরি হওয়ার আশঙ্কাটা রয়েই যাচ্ছে। তাই ছাড়ের দিনগুলোতেও ছেলেমেয়েকে পাঠানোর সাহস করে উঠতে পারছি না।’’

তবে এত অশান্তি পেরিয়ে স্কুলে ফিরতে পেরে উচ্ছ্বসিত পড়ুয়ারা। বেসরকারি স্কুলের এক ছাত্র জিয়া-উল-ইসলামের কথায়, ‘‘এত দিন বাড়িতে বসে বসে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। পড়াশোনার সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় চুকেই গিয়েছিল। তাই স্কুলে যেতে পেরে খুব আনন্দ হচ্ছে। আর এখন পড়াশোনাতেই মন দিতে চাই।’’

শুধু জিয়া-উলই নয়, তার মতো আরও অনেকেই এখন পড়াশোনা করে ফের ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন