বছরের পর বছর কেটে যায়, মামলার নিষ্পত্তি হয় না। নাবালিকা ধর্ষণের ক্ষেত্রে অন্তত চেনা ছবিটা বদলাক— নির্ভয়া ধর্ষণ কাণ্ডের পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে এমনটাই আর্জি জানালেন দিল্লি মহিলা কমিশনের প্রধান স্বাতী মালিওয়াল। মোদীকে লেখা চিঠিতে আবেদন জানিয়েছেন তিনি, নাবালিকা ধর্ষণের ঘটনায় অন্তত ছ’মাসের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করে অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হোক।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের রাত। দক্ষিণ দিল্লিতে একটি চলন্ত বাসে নৃশংস ভাবে ধর্ষণ করা হয়েছিল এক প্যারা-মেডিক্যাল ছাত্রীকে। বন্ধুর সঙ্গে ফিল্ম দেখে ফিরছিলেন তরুণী। টানা ১৩ দিন লড়াইয়ের পরে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে মারা যান তিনি। যদিও সেই মামলায় এখনও শাস্তি পায়নি দোষীরা। ধর্ষণে জড়িত সন্দেহে ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরের বছর মার্চ মাসে অন্যতম অভিযুক্ত রাম সিংহের ঝুলন্ত দেহ মেলে জেলের ভিতরে। ঘটনার সময়ে আর এক অভিযুক্তের বয়স ১৮ নীচে ছিল। জুভেনাইল জাস্টিস কোর্টের বিচারে সর্বোচ্চ তিন বছর সাজা কাটিয়ে সংশোধনাগার থেকে মুক্তিও পেয়ে গিয়েছে নাবালক অপরাধী। ২০১৩-র সেপ্টেম্বরে দিল্লি হাইকোর্টে দোষী সাব্যস্ত হয় বাকি চার জন— অক্ষয়, বিনয় শর্মা, পবন ও মুকেশ। মৃত্যুদণ্ড হয় তাদের।
পরে শীর্ষ আদালতও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। কিন্তু অপরাধীদের শাস্তি এখনও হয়নি।
কেন এত ‘দেরি’? এ দিন সেই প্রশ্ন তোলেন মালিওয়াল। তাঁর কথায়, ‘‘এত দিন ধরে মামলা চলে বলেই অপরাধীরা মনে করে, ঠিক আইনের ফাঁক গলে বেঁচে যাবে তারা।’’ পুলিশ থেকে ফরেন্সিক বিভাগ, সকলেরই আরও একটু বেশি সক্রিয় হওয়া দরকার, মত তাঁর। সে কথা মোদীকে লেখা চিঠিতে জানিয়েছেন তিনি। আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক, মেয়ের অপরাধীদের শাস্তি দেখতে চেয়ে দোরে দোরে ঘুরছেন নির্ভয়ার মা। এখনও বেঁচে রয়েছে তারা।’’
এ দিনও, আরও এক ১৬ ডিসেম্বরেও একাধিক ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। তা-ও এই নয়ডাতেই। সেক্টর ৬৩তে মোটরবাইকে তুলে নিয়ে গিয়ে পরিত্যক্ত জায়গায় ধর্ষণ করা হয়েছে এক তরুণীকে। অভিযুক্ত দুই যুবকের মধ্যে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর এক জনের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। সেক্টর ৪৯-এ ১০ বছরের এক নাবালিকাকে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠেছে। শিশুটির বাবার অভিযোগ, তার মেয়েকে একা ঘরে পেয়ে যৌন হেনস্থা চালায় তাদেরই এক পরিচিত।
এ প্রসঙ্গও উঠে এসেছে মালিওয়ালের চিঠিতে। লিখেছেন— ‘‘নির্ভয়া ধর্ষণ কাণ্ডের পরে পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। এখনও এ দেশে কিছুই বদলায়নি। প্রতিদিন এখানে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।’’