Delhi Assembly Election 2020

ভোটপ্রচারে শাহিন বাগের কথা কি আজ তুলবেন মোদী

অমিত শাহ-আদিত্যনাথেরা যে অবস্থানই নিন না কেন, সরকার কি ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’ মন্ত্রেই থাকবে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৩৯
Share:

নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

অমিত শাহ যখন রোজ জনসভায় শাহিন বাগের প্রসঙ্গ তুলছেন, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে শাহিন বাগেরই আশপাশে জনসভা করতে পাঠাচ্ছেন, তখন অন্য দিকে, মোদী সরকারের কয়েক জন মন্ত্রী একাধিক বার শাহিন বাগের প্রতিবাদীদের সঙ্গে আলোচনার বার্তাও দিয়ে চলেছেন। ফলে প্রশ্ন উঠছে, অমিত শাহ-আদিত্যনাথেরা যে অবস্থানই নিন না কেন, সরকার কি ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস’ মন্ত্রেই থাকবে! আর তার থেকেও বড় প্রশ্ন, কাল দিল্লির ভোটপ্রচারে নেমে কি অবশেষে শাহিন বাগ নিয়ে মুখ খুলবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী?

Advertisement

শনিবার বাজেট পেশের আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে যাওয়ার আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলে গেলেন, শাহিন বাগের প্রতিবাদীদের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি সরকার। যদি তাঁরা এক স্বরে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নেন সরকারের সঙ্গে। আর সে আলোচনা হবে যথাযথ ভাবে। কোনও হল্লার মধ্যে নয়। চব্বিশ ঘণ্টাও পেরোয়নি, প্রায় একই সুরে কথা বললেন আর
এক প্রবীণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। তিনি শুধু শাহিন বাগের প্রতিবাদ প্রত্যাহার করে আলোচনার আবেদন জানিয়েই ক্ষান্ত হলেন না। বরং অনুরাগ ঠাকুর-প্রবেশ বর্মার মতো বিজেপি নেতারা যে ভাবে উস্কানি ছড়ানোর মন্তব্য করেছেন, তাঁদেরও বিরত থাকার পরামর্শ দিলেন।

বিজেপি শিবিরের মতে, দলের প্রাক্তন সভাপতি নিতিন গডকড়ী বরাবরই সোজাসাপ্টা কথা বলেন। তবে দিল্লি ভোটের সময় শাহিন বাগকে কেন্দ্র করে যে মেরুকরণের রাজনীতি করা হবে, সে কৌশল রচনার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গডকড়ীও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, দলের নতুন সভাপতি জেপি নড্ডা ও রাজনাথ সিংহও ছিলেন। বিজেপি জানে, শাহিন বাগের প্রতিবাদীদের মধ্যেও মতপার্থক্য হচ্ছে। কয়েক দিন আগেই রাত সাড়ে এগারোটায় একটি সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছিলেন প্রতিবাদীরা। তাঁদের একটি অংশ চাইছিলেন, অন্তত এক দিকের রাস্তা খুলে দেওয়া হোক। কিন্তু প্রতিবাদীদেরই আর একটি অংশ তার ঘোরতর বিরোধিতা করেন। অবশেষে কোনও নতুন সিদ্ধান্ত না নিয়ে সেখানে বসে থাকারই সিদ্ধান্ত নেন সকলে। মাঝরাতের সাংবাদিক সম্মেলনও বাতিল করা হয়। বিজেপির এক নেতা বলেন, নিজেদের অন্তর্বিরোধের কারণেই শাহিন বাগের প্রতিবাদীরা এর স্বরে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। সে কারণে রবিশঙ্কর প্রসাদের ঘনিষ্ঠরা আজও প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘আমাদের মন্ত্রী গত দু’দিন ধরে আলোচনার ডাক দিয়েছেন। কিন্তু শাহিন বাগ থেকে কেউ কি এগিয়ে এসেছেন আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে?’’

Advertisement

৫০ দিনে পড়ল শাহিন বাগের সিএএ-বিরোধী আন্দোলন। গত কাল হিন্দু সেনা নামে এক সংগঠন ঘোষণা করেছিল, আজ তারা শাহিন বাগে রাস্তা খালি করতে যাবে। দিল্লি পুলিশের হস্তক্ষেপে তারা সেই অভিযান প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু আজ দুপুরেও সংগঠনের এক দল কর্মী শাহিন বাগে জড়ো হয়ে পুলিশকে সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের তুলে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে শুরু করেন। ‘গোলি মারো সালো কো’-র মতো নানা স্লোগানও দিতে থাকেন তাঁরা। পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়। শাহিন বাগ খালি না করলে ফল ভাল হবে না, এ রকম নানা হুমকি দেওয়া পোস্টারও সেঁটে গিয়েছিলেন তাঁরা। সেই সব পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে পুলিশ।

এ দিন স্থানীয়দের একটি দলও শাহিন বাগের বিক্ষোভকারীদের সামনে প্রতিবাদ-জমায়েত করেন। তাঁদের দাবি, নয়ডা থেকে কালিন্দী কুঞ্জের রাস্তাটি অবিলম্বে খুলে দিতে হবে। সেই স্থানীয়েরাও ‘জয় শ্রী রাম’, ‘বন্দে মাতরম’, ‘খালি করাও শাহিন বাগ-ওয়ালো কো’— এই ধরনের নানা স্লোগান দেন।

এ দিন শেষ হল ‘ইন্ডিয়া আর্ট ফেয়ার’। জানা গিয়েছে, এই শিল্প মেলার প্রথম দিন, ৩০ জানুয়ারি, বেশ কয়েক জন শিল্পী ও শাহিন বাগের কয়েক জন মহিলা মিলে ‘শাহিন’ নামে একটি ‘মুরাল’ তৈরি করছিলেন। প্রদর্শনীর তোড়জোড়ের সময়ে সেখানে হাজির হয় দিল্লি পুলিশ। জিজ্ঞাসা করে, ‘‘আপনাদের এই সব বিতর্কিত ছবির প্রদর্শনী করার অনুমতি কে দিয়েছে?’’ শিল্পীদের দাবি, পুলিশের সঙ্গে ছিলেন ‘ইন্ডিয়া আর্ট ফেয়ার’-এর ডিরেক্টর জগদীপ জগপাল। অভিযোগ, তিনি এই প্রদর্শনীর কিউরেটর ময়না মুখোপাধ্যায়কে বলেন, অনুমতি ছাড়া এই ধরনের প্রদর্শনী কী করে করছেন তাঁরা। ময়না তাঁকে জানান যে, চার দিনের এই প্রদর্শনীর জন্য সবিস্তার রিপোর্ট একাধিক বার জমা দিয়েছিলেন তাঁরা। তারা। কিন্তু পুলিশ প্রদর্শনী বন্ধে করে দিয়ে চলে যায়। আজ পুলিশ এসে ‘ভুল বোঝাবুঝির’ জন্য ক্ষমা চায়। কিন্তু মেলার শেষ দিনে আর মুরালটি সম্পূর্ণ করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন