পুজোর বাকি আর মাত্র কয়েকটা দিন। তোড়জোড় এখন তুঙ্গে। দিল্লির বাঙালি পাড়া চিত্তরঞ্জন পার্কেও (সি আর পার্ক) চলছে জোরকদমে পুজোর প্রস্তুতি। কিন্তু উদ্যোক্তারা চিন্তিত এলাকার যানজট নিয়ে। গাড়ি পার্কিং-এর বিষয়টি দীর্ঘ দিন ধরেই পুজোর সি আর পার্ক-এ একটি আতঙ্ক বিশেষ।
এই সমস্যা নিয়ে শুধু পুজো কমিটি চিন্তিত তাই নয়, যাঁরা চিত্তরঞ্জন পার্কে পুজো দেখতে যেতে চান ভাঁজ পড়েছে তাঁদের কপালেও। গাজিয়াবাদের বসুন্ধরার বাসিন্দা বছর সত্তরের ক্ষমা অধিকারী বললেন, ‘‘যাওয়ার তো ইচ্ছা আছে, কিন্তু জানি না যেতে পারবো কি না। গত বার গাড়ি নিয়ে গিয়ে খুব সমস্যায় পড়েছিলাম। কোথাও গাড়ি রাখতে না পেরে শেষ পর্যন্ত নেহরু প্লেসের মেট্রো স্টেশনে পার্কিং-এ রাখতে হয়েছিল। এ বছরে আর্থারাইটিসের সমস্যা বাড়ায় এত হাঁটতে পারব না। গাড়ি যদি পুজোমণ্ডপের সামনে রাখা যেত তা হলে আমাদের মতো বয়স্কদের একটু সুবিধা হতো।’’.
ক্ষমাদেবীর কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেল বছর ষাটের মীরাদেবীর কথাতেও। নয়ডার ২০ নম্বর সেক্টরে থাকেন তিনি, পুজো নিয়ে ভীষণ উৎসাহী। কলকাতা ছেড়েছেন প্রায় ১৫ বছর। তাঁর কথায়: ‘‘নয়ডা কালীবাড়ির পুজো নিয়ে ব্যস্ত থাকি পুজোর প্রতি দিন। কিন্তু এক দিন গাড়ি নিয়ে সবাই মিলে চিত্তরঞ্জন পার্কের পুজো দেখতে যাই। কিন্তু, প্রতি বারই গাড়ি রাখা নিয়ে সমস্যায় পড়ে জামাই। আমি হাঁটতে পারি না বলে আরও সমস্যা হয়।’’
শুধু ক্ষমাদেবী বা মীরাদেবী নন, গাড়ি পার্কিং নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে দূর থেকে আসা প্রায় সব দর্শনার্থীর মধ্যে। বৈশালীর মিডিয়া এনক্লেভের এস পি শ্রীবাস্তবের মন্তব্য: ‘‘মেয়ে কলকাতার পুজো কখনও দেখেনি। তাই, প্রতি বারই ভাবি চিত্তরঞ্জন পার্কের পুজো দেখতে নিয়ে যাব। কিন্তু গাড়ি রাখার সমস্যার জন্য যাই না। দিল্লির পুজোর ফ্লেভারটা কলকাতার পুজোর থেকে অনেকটাই আলাদা। তাই মাইলের পর মাইল হেঁটে পুজো দেখাটা কলকাতার দর্শনার্থীদের জন্য আনন্দের হলেও এখানকার বাঙালিরা কিন্তু পুজো দেখার জন্য এত পরিশ্রম করতে রাজি নয়, তার থেকে নিজেদের এলাকার পুজোতে আনন্দ করতেই তাঁরা বেশি পছন্দ করেন।’’
চিত্তরঞ্জন পার্কের পার্কিং সমস্যা শুধু পুজোতেই হয় তা নয়, এই সমস্যা বহু দিনের। এলাকায় জনসংখ্যা যত বেড়েছে এই সমস্যা ততই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। বেশির ভাগ বাড়িতেই গাড়ি রাখার জন্য গ্যারাজ নেই, ফলে গাড়িগুলিকে রাস্তার ওপরই রাখা হয়। একে বেহাল পার্কিং ব্যবস্থা, অন্য দিকে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো এক একটি পরিবারের একাধিক গাড়ি। এ ছাড়াও রয়েছে বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনদের গাড়ি, তাঁরাও গাড়ি রাস্তার ওপরেই রাখেন। এ ছাড়া কোনও উপায়ও নেই, পার্কিং-এর জন্য কোনও নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায়, রাস্তার ওপর খালি জায়গাতেই গাড়ি রাখা হয়। ফলে যাঁরা বেশি রাতে বাড়ি ফেরেন তাঁরা পড়েন সমস্যায়। তাঁদের বাড়ির সামনের জায়গা তত ক্ষণে জবরদখল হয়ে গিয়েছে। পকেট কে-ওয়ান-এর রেসিডেন্সিয়াল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন-এর সাধারণ সম্পাদক উৎপল ঘোষের বক্তব্য, এই সমস্যা সমাধানে দিল্লি সরকারের উচিত একটি কার্যকরী পার্কিং–আইন প্রণয়ন করা।
পার্কিং-এর পর্যাপ্ত সুবিধা নেই সি আর পার্কের বাজারগুলিতেও। ফলে যাঁরা দিল্লির অন্যান্য জায়গা থেকে এখানে আসেন বাজার করতে, তাঁরা সমস্যায় পড়েন গাড়ি রাখা নিয়ে। তাঁরা গাড়ি রাস্তার ওপর রেখেই বাজার করতে চলে যান। রাস্তার ওপর পার্কিং করার ফলে গাড়ি চলাচলের সমস্যা দেখা দেয়।
সঙ্কীর্ণ রাস্তা এবং রেড লাইটগুলিতে কোনও ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় সমস্যা সামলানো আরও কঠিন হয়ে পড়ে। বাসিন্দাদের দাবি, এই রেডলাইটগুলিতে ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েন করতে হবে। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই নিয়ন্ত্রণহীন যে, অদূর ভবিষ্যতেও এর সমাধানের কোনও আশা আছে বলে মনে করছেন না এলাকার মানুষ।