National News

কুশলী পিকে-র চালে বাজিমাত, বলছে আপ-ই

বছরের গোড়ায় প্রশান্ত কিশোরের হাতে দিল্লির তখ্‌ত বাঁচানোর দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন কেজরীবাল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৬:০৮
Share:

প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে অরবিন্দ কেজরীবাল। মঙ্গলবার দিল্লিতে দলের সদর দফতরে। ছবি: পিটিআই

গত বারের মতোই বিজেপিকে গো-হারা হারিয়ে ক্ষমতায় ফিরলেন অরবিন্দ কেজরীবাল। কিন্তু জয়ের নেপথ্য কারিগর হিসেবে ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন আপ নেতৃত্ব। অন্যান্য বারের মতোই এ বারও অন্তরালে রইলেন তিনি। কেবল সারা দিনে একটি টুইট করে রাজধানীবাসীকে ধন্যবাদ দিয়ে প্রশান্ত কিশোর জানালেন, ‘‘ভারতের আত্মাকে রক্ষার করার জন্য দিল্লিবাসীকে ধন্যবাদ।’’ তবে রাজনীতির অনেকেই মনে করছেন, সদ্য নীতীশ কুমারের দল থেকে বহিষ্কৃত প্রশান্তের আজকের জয় এ বছর বিহার নির্বাচনের আগে এনডিএ-শিবিরে আশঙ্কা ছড়ানোর জন্য যথেষ্ট।

Advertisement

বছরের গোড়ায় প্রশান্ত কিশোরের হাতে দিল্লির তখ্‌ত বাঁচানোর দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন কেজরীবাল। আপ সূত্রের মতে, দায়িত্ব পেয়েই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর যে কেন্দ্র-বিরোধী, সংঘাতমূলক ভাবমূর্তি রয়েছে, তা পরিবর্তন করার উপরে জোর দেন তিনি। প্রশান্ত কিশোরের বার্তা ছিল, বিজেপি তাঁকে আক্রমণ করলেও তিনি যেন তা উপেক্ষা করার নীতি নেন। পরিবর্তে তিনি যেন নিজের উন্নয়নের ছবি তুলে ধরার উপরে জোর দেন। সেই পথ ধরেই এগোন কেজরীবাল।

আরও পড়ুন: ফোর্বস তাঁকে বলছে ভারতের প্রথম ২০ প্রভাবশালী ব্যক্তির অন্যতম - এক নজরে ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোর

Advertisement

নির্বাচনী প্রচারেও প্রশান্তের ঠিক করা রাস্তাতেই এগিয়েছে কেজরীবালের দল। আপের এক নেতার মতে, ‘‘বিজেপি যত আমাদের আক্রমণ শানিয়েছে, আমরা তত বিনয়ী হয়েছি। মানুষের সহানুভূতি যাতে আমাদের সঙ্গে থাকে, তা নিশ্চিত করতে চেয়েছি।’’ একই সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের কাজ সহজ করে দেয় বিজেপির উন্নয়নের পরিবর্তে মেরুকরণের রাজনীতিতে জোর।

প্রচারের কৌশল

• বিজেপিকে আক্রমণের বদলে উন্নয়নের ছবি
তুলে ধরা
• ২৫ হাজার পরিবারের কাছে কাজের রিপোর্ট কার্ড
• ১৫ হাজার ব্যক্তিগত চিঠি
• বাড়ি বাড়ি প্রচার
• নরম হিন্দুত্ব
• হনুমান মন্দির দর্শন
• পারিবারিক কেজরীকে তুলে ধরা

যত বিজেপি মেরুকরণের রাস্তায় হেঁটেছে, তত আপ শিবির জোর দিয়েছে তাদের জনমুখী পরিকল্পনাকে আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার। সেই লক্ষ্যে কেজরীবালের কাজের ফিরিস্তি দেওয়া রিপোর্ট কার্ড ভোটের ঠিক আগে পৌঁছে দেওয়া হয় দিল্লির ২৫ হাজার পরিবারের কাছে। আলাদা করে ১৫ হাজার ব্যক্তিগত চিঠি পাঠানো হয় প্রভাবশালী ভোটারদের। দলের নিচু তলার ক্যাডারদের বাড়ি-বাড়ি পাঠিয়ে জোর দেওয়া হয় ব্যক্তিগত স্তরে প্রচারের কাজেও।

প্রচারে নেমে বিজেপি যখন তীব্র মেরুকরণের রাস্তায় হাঁটতে শুরু করে, তখন জবাবে নরম হিন্দুত্বের আশ্রয় নেন কেজরীবাল। প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ মতো শুরুতে শাহিন বাগ নিয়ে দূরত্ব বজায় রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন। এতে মুসলিম ভোট বিরূপ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলে তিনি নিজে না মুখ খুলে উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়াকে এ নিয়ে সরব হওয়ার নির্দেশ দেন। হিন্দু ভোটারদের পাল্টা বার্তা দিতে কেজরীবাল সস্ত্রীক পৌঁছে যান হনুমান মন্দিরে। প্রচারের মঞ্চ থেকে পাঠ করেন হনুমান চল্লিশা। ভগবানের কাছে সকলের সঙ্গে বিজেপির জন্যও আশীর্বাদ চান তিনি। একই সঙ্গে ফলাও করে প্রচার করা হয় দিল্লির কয়েক হাজার বয়স্ক মানুষকে নিখরচায় তীর্থ করানোর বিষয়টি। আপ নেতৃত্বের মতে, ‘‘হিন্দুত্ব যে কেবল বিজেপির একার সম্পত্তি নয়, তা বোঝাতে দলও তৎপর ছিল। তবে কৌশলে।’’

আরও পড়ুন: নিখরচার সুবিধা দিয়েই বাজিমাত কেজরীর

আজ ভোটে জেতার পরে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে যখন কেজরীবাল প্রথম সাক্ষাৎ করতে আসেন, তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ও পুত্র-কন্যা। নিজের বক্তব্যের শেষে স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে সামনে নিয়ে আসেন কেজরীবাল। উপস্থিত জনতাকে অভিনন্দন জানায় কেজরীবাল পরিবার। এমন দৃশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হামেশাই দেখা যায়। যেখানে প্রেসিডেন্টের পরিবারকে সুখী পরিবার হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা হয়। আজ সেই দৃশ্য দেখা গেল ভারতীয় রাজনীতিতেও। আপ সূত্র জানাচ্ছে, এই কৌশলের পিছনেও রয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। তিনিই কেজরীবালকে পরিবার নিয়ে সামনে আসার জন্য রাজি করান। যাতে দিল্লিবাসীর কাছে বার্তা যায়— কেজরীবাল আসলে ‘তাঁদেরই’ লোক। তিনি দিল্লিবাসীরই একজন। সেই নীতি মেনেই আজ নিজের বক্তব্যে কেজরীবাল দিল্লিবাসীকে বারংবার ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন, ‘‘তাঁদের ঘরের ছেলের উপরে ভরসা রাখার জন্য দিল্লির দু’কোটি মানুষকে ধন্যবাদ।’’

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

একটি দায়িত্ব শেষ। সামনে পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ু নির্বাচন। ওই দুই রাজ্যেও দায়িত্বে ভোটকুশলী প্রশান্ত। আজ আপ-এর বিপুল জয়ের পরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, পিকে-র কৌশলে কি সেখানেও হারবে বিজেপি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন