কুলভূষণ যাদব।
গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত জেলবন্দি কুলভূষণ যাদবের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী এবং মায়ের দেখা করিয়ে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করল পাকিস্তান। কিন্তু এর জন্য আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতে কুলভূষণ মামলায় ইসলামাবাদকেই পস্তাতে হবে বলে মনে করছে দিল্লি।
কাচের দেওয়ালের দু’দিকে বসে কুলভূষণ এবং তাঁর মা-স্ত্রীর এ দিনের সাক্ষাতের পরে দিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা ২১ বার পাক নেতৃত্বকে চিঠি লিখে কুলভূষণের কাছে কনস্যুলার অ্যাকসেস (দূতাবাসের প্রবেশাধিকার) চেয়েছি। কোনও সাড়া দেওয়া হয়নি। অথচ ভিয়েনা চুক্তির স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে পাকিস্তান বাধ্য তাদের দেশে জেলবন্দি ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে আমাদের কূটনীতিক এবং আইনজীবীদের দেখা করতে দিতে।’’
এই প্রবেশাধিকারের বিষয়টি নিয়ে আজ সকাল থেকে বিভ্রান্তি তৈরি করেছিল পাকিস্তান। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, যেটা ইচ্ছাকৃত। সকালে টুইট করে পাক বিদেশমন্ত্রী খাজা মহম্মদ আসিম জানান, কুলভূষণ যাদবের কাছে ভারতীয় কূটনীতিকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের জায়গায় ভারত থাকলে কিন্তু এই ধরনের সুযোগ আমাদের দিত না।’’ একই সঙ্গে ইসলামাবাদ জানায়, পাকিস্তানের জনক ‘কয়েদ-ই-আজম’ মহম্মদ আলি জিন্নার জন্মদিনে এ এক মানবিক পদক্ষেপ। ইসলাম শান্তি এবং বিশ্বাসে আস্থা রাখে। আজ পাকিস্তান সেটাই প্রমাণ করল।
আরও পড়ুন: বিরসা মুন্ডা জেলেও সকাল থেকেই ‘দরবার’ ভিভিআইপি বন্দির সেলে
পাক বিদেশমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পরেই শোরগোল বাধে কূটনৈতিক শিবির এবং প্রচারমাধ্যমে। প্রশ্ন ওঠে, তা হলে কি মা এবং স্ত্রীর পাশাপাশি ভারতীয় কূটনৈতিক কর্তাকেও কুলভূষণের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে? পরিস্থিতি বুঝে দ্রুত ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে পাক বিদেশ মন্ত্রক জানায়, কুলভূষণের মা ও স্ত্রীকে কথা বলতে দেওয়া হলেও ভারতীয় দূতাবাসের কাউকে সেখানে প্রবেশাধিকার দেওয়া হচ্ছে না।
পাকিস্তানের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ বিদেশ মন্ত্রক। মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘আজ যেটা হয়েছে সেটা তামাসা ছাড়া কিছু নয়। কাচের দেওয়ালের ওপার থেকে মাইক্রোফোনে দু’তরফের কথা হয়েছে। এমনকী ভারতীয় হাইকমিশনারকেও ঘরে থাকতে দেওয়া হয়নি। এই বিষয়টি তো স্কাইপ বা ভিডিও কনফারেন্স-এর মাধ্যমেও করা যেত। ছেলে তো মাকে এত দিন পরে প্রণামটুকুও করতে পারলেন না। মানবিকতার নামে অত্যন্ত নিষ্ঠুর এই আচরণ।’’
সূত্রের খবর, আন্তর্জাতিক আদালতের পরবর্তী শুনানিতে পাকিস্তানের এই আচরণ নিয়ে সরব হবে ভারত। পাশাপাশি ভিয়েনা কনভেনশন অমান্য করে পাকিস্তান যে আসলে চোখে ধুলো দিতে চাইছে, সেটাও সবিস্তার তুলে ধরা হবে। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে কুলভূষণের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুরোধকে ধামাচাপা দিতেই আজকের এই ‘নাটক’ করা হল বলে মনে করছে নয়াদিল্লি।
ভারত যখন আন্তর্জাতিক আদালতে নালিশ ঠোকার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন ইসলামাবাদও বসে নেই। আজ ফের কুলভূষণের তথাকথিত স্বীকারোক্তির একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে তারা। দিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, প্রযুক্তির যুগে কুলভূষণের আরও একটা মিথ্যে ভিডিও বাজারে আনল পাকিস্তান। তা ছাড়া, কুলভূষণের মা-ই তো ছেলের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে ভিসার আর্জি জানিয়েছিলেন। অথচ ভিডিও-য় কুলভূষণ বলেছেন, তাঁর অনুরোধ মেনে পাক সরকার তাঁর মা ও স্ত্রীকে দেখা করার সুযোগ দিয়েছে! পাকিস্তান নিজেদের মিথ্যের জালে নিজেরাই ফাঁসবে!