National News

‘ভয় কী, এই মহল্লা তো তোমাদেরই’

দিল্লির ব্রিজ পুরী এলাকায় হিন্দু-মুসলমানদের যৌথ মিছিলও হয়েছে কাল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৫২
Share:

ছবি: পিটিআই।

তিন দিনের টানা হিংসার মধ্যেও রুপোলি রেখা দেখতে পাচ্ছে রাজধানী। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে চেষ্টা করছেন শান্তি ফিরিয়ে আনার। কোথাও বা সংঘর্ষে বিপদে পড়া ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর জন্যও বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সাহায্যের হাত। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে চলছে এই প্রয়াসকে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা।

Advertisement

মৌজপুরের বজরংবলী মহল্লায় দেখা গিয়েছে এমনই উদ্যোগ। হিন্দুপ্রধান ওই এলাকায় মুসলমান নারী-পুরুষ এবং বাচ্চাদের সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বজরংবলী মন্দিরে। তঁদের বলা হয়েছে, ‘ভয় কী তোমাদের? এটা তো তোমাদেরই মহল্লা। আমরা কি ওদের মত অসভ্য, যারা সাম্প্রদায়িক হিংসা চালিয়ে যাচ্ছে!’ গোটা বিষয়টির ভিডিয়ো করে ইনস্টাগ্রামে দেওয়া হয়েছে।

দিল্লির ব্রিজ পুরী এলাকায় হিন্দু-মুসলমানদের যৌথ মিছিলও হয়েছে কাল। সৈয়দ আবদাহু কাসাফ নামে এক ব্যক্তি টুইটারে তার ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন। সঙ্গে লিখেছেন, ‘‘ব্রিজ পুরীতে হিন্দু-মুসলমানের যৌথ মিছিল হয়েছে। কিন্তু দেশের রাজধানীর পুড়ে যাওয়া রুখতে ব্যর্থ দিল্লি পুলিশ। সবাই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে থাকুন। কপিল মিশ্রর মতো ঘৃণা ছড়াচ্ছে যারা, তাদের অবজ্ঞা করুন।’’ ‘ইউনাইটেড উই স্ট্যান্ড’ এই হ্যাশট্যাগে বিষয়টি পোস্ট করেছেন তিনি।

Advertisement

আরও পড়ুন: ভুয়ো ভিডিয়ো নয়, মিনারে তোলা হল গেরুয়া পতাকা

সাম্প্রদায়িক অশান্তি পীড়িত চাঁদ বাগেও আওয়াজ উঠেছে সম্প্রীতির। সেখানে সম্মিলিত স্বরে ঘোষণা শোনা গিয়েছে— হিন্দু বা মুসলমান নয়। হিংসা যারা ছড়িয়েছে, তারা দাঙ্গাবাজ। তাদের কোনও ধর্ম নেই। ওখানেই পাথরবাজদের আক্রমণ থেকে এক হিন্দু বালককে বাঁচিয়েছেন এলাকার মুসলমানরা। যত্নও নিয়েছেন তার। পরে ছেলেটিকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ছেলেটির মা সুনীতা ওই মুসলমান ব্যক্তিদের ধন্যবাদ দিয়েছেন ছেলের প্রাণ বাঁচানোর জন্য। প্রার্থনাও করেছেন তাঁদের জন্য।

দিল্লিতে ১৯৮৪-র হিংসা দেখেছে শিখ সমাজ। হিংসার চলতি পর্বে রাজধানীর ৮টি গুরুদ্বার ২৪ ঘণ্টার জন্য খুলে রাখা হয়েছে। হিংসা পীড়িতদের সাহায্য করার জন্য। তার মধ্যে রয়েছে বাংলা সাহিব, রাকাবগঞ্জ সাহিব, মজনু কা টিলা, দমদমা সাহিবের মতো গুরুদ্বারগুলি।

ব্যক্তিগত ভাবেও অনেকে এবং বেশ কিছু সংগঠনের লোকজন বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের নাম এবং নম্বর পোস্ট করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, দিল্লিতে কোনও সমস্যা হলে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে যোগাযোগ করার জন্য। গাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্স, খাদ্য এবং আশ্রয়ের জন্য ২৪ ঘণ্টা সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সেখানে। দিল্লি পুলিশের তরফেও জোড়া হেল্পলাইন নম্বর দেওয়া হয়েছে— ০১১-২২৮২৯৩৩৪ এবং ০১১-২২৮২৯৩৩৫

দেশের নানা প্রান্ত থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসছে এমন উদ্যোগের প্রতি বহু মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন। তাঁদের মূল সুর একটাই, হুমকিকে ছুট দিতে ও হিংসাকে বেলাগাম হতে দেখে সাংবিধানিক আদালতও যখন ‘যন্ত্রণাবিদ্ধ’, তার মধ্যেও ভরসা আছে ভালবাসায়, মানুষের পাশে মানুষ। কালো মেঘের ফাঁকে সেটাই আশার রুপোলি ঝিলিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন