কলকাতার রাজপথেও

নজর লোকসভা ভোটে, বোঝালেন মমতা

লক্ষ্য, পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন। যন্তরমন্তরের জনসভা থেকে এ কথাই স্পষ্ট করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংসদে বিরোধী দলের ঐক্যবদ্ধ ধর্নার পরে দুপুরে তৃণমূলের মঞ্চে মমতা তাঁর বক্তৃতা শুরু করেছিলেন নোট-বাতিলের জেরে সাধারণ মানুষের দুর্দশার প্রসঙ্গ দিয়েই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০২:২৯
Share:

প্রতিবাদে মিছিল। বাঁ দিক থেকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং অরূপ বিশ্বাস। বুধবার কলকাতায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক ।

লক্ষ্য, পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন। যন্তরমন্তরের জনসভা থেকে এ কথাই স্পষ্ট করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

সংসদে বিরোধী দলের ঐক্যবদ্ধ ধর্নার পরে দুপুরে তৃণমূলের মঞ্চে মমতা তাঁর বক্তৃতা শুরু করেছিলেন নোট-বাতিলের জেরে সাধারণ মানুষের দুর্দশার প্রসঙ্গ দিয়েই। কিন্তু ক্রমশই তাঁর বক্তব্যে জায়গা করে নিল তীব্র মোদী-বিরোধিতা। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, আজ মমতার বক্তৃতার সারমর্ম থেকে স্পষ্ট, নোট-বাতিলের প্রসঙ্গ আসলে অনুঘটক। দেশ জুড়ে মানুষের সমস্যার প্রসঙ্গকে সামনে নিয়ে এসে তিনি বিরোধী দলগুলির মধ্যে ঐক্যকেই মজবুত করতে চাইছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ফির ভোট আ রাহা হ্যায়, মোদীজি যা রাহা হ্যায়!’’

পাশাপাশি তাঁর আক্রমণ, ‘‘উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাবে ভোট আসছে। মোদীজি আপনি দেখে নিন, কী হয়। আন্দোলন করতে আমরাও জানি। ভবিষ্যতের জন্য আমরা তৈরি হচ্ছি।’’ একা মমতাই নন। আজ তাঁর মঞ্চে উপস্থিত জেডি (ইউ) নেতা শরদ যাদব থেকে সমাজবাদী পার্টি নেতা ধর্মেন্দ্র যাদবেরা প্রকাশ্যেই বলে দিয়েঠেন, মোদীকে পরাস্ত করতে হলে মমতাকে প্রয়োজন।

Advertisement

তাঁর আন্দোলনের ভবিষ্যত প্রসঙ্গে তৃণমূল নেত্রী জানিয়েছেন, এর পরে ২৮ তারিখ দেশ জুড়ে নোট-বাতিল নিয়ে মানুষের দুর্দশার প্রতিবাদে বিরোধীরা যে ‘আক্রোশ দিবস’ কর্মসূচি নিয়েছে, রাজ্যে তাতে অংশ নেবে তাঁর দল। কলকাতায় নিজে উপস্থিত থেকে প্রতিবাদে সামিল হওয়ার পরে সেই রাতেই মমতার রওনা হওয়ার কথা লখনউ। সেখানে জনসভা ২৯ তারিখ। পরের দিন মমতার যাওয়ার কথা পটনা। পরবর্তী কালের সফরসূচিতে আছে বারানসী এবং পঞ্জাব।

বিজেপি অবশ্য মমতার এই দেশ জোড়া প্রতিবাদকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাদের মতে, যন্তর মন্তর থেকেই তৃণমূল নেত্রীর বুঝে নেওয়া উচিত যে, বাংলার বাইরে তাঁর জনসভা করার কোনও অর্থ নেই। যন্তরমন্তরে যেমন বেশি লোক হয়নি, তেমনই লখনউতে তাঁর বক্তৃতা শুনতে কি মায়াবতী-মুলায়মকে ছেড়ে মানুষ ভিড় জমাবে? তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা যদিও পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, ‘‘মায়াবতী কার্জন পার্কে সভা করলে একটি কোণও হয়তো ভরবে না! ভিড় জমা করাটা এই মুহুর্তে তৃণমূল নেত্রীর লক্ষ্য নয়। তা হলে তো ট্রেনে করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে দলে দলে লোক নিয়ে আসা যেত। তিনি চাইছেন কেন্দ্র-বিরোধী আন্দোলনকে জারি রেখে বিরোধী ঐক্যকে শক্তিশালী করতে।’’

দিল্লির পাশাপাশি তৃণমূলের প্রতিবাদ ছিল কলকাতাতেও। কিন্তু স্বয়ং মমতার অনুপস্থি্তিতে নোট বাতিলের প্রতিবাদে কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মন্ত্রী-বিধায়কেরা থাকলেও তেমন জমেনি তৃণমূলের মিছিল! দিল্লি যাওয়ার আগে তৃণমূল নেত্রী কলকাতা ও সংলগ্ন হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার নেতা-মন্ত্রীদের নিয়ে আজ রাজপথে ঝড় তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে এ দিন মিছিলে তেমন মেজাজ চোখে পড়েনি। অমিত মিত্র, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাদের নিয়ে কলেজ স্কোয়ার থেকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ হয়ে ডোরিনা ক্রসিংয়ে গিয়ে মিছিল শেষে জমায়েত হয়েছে। মিছিলে নোট-বাতিলের বিরুদ্ধে তেমন কোনও জোরালো স্লোগান ছিল না। কেন্দ্র-বিরোধী ব্যানার, প্ল্যাকার্ডও ছিল হাতে গোনা। বেশির ভাগ সমর্থকই মিছিলে হাঁটেননি। মিছিলের পিছনে তাঁরা এসেছিলেন জোড়া ফুলের পতাকা নিয়ে ম্যাটাডোর, মোটরবাইক, এমনকী বাসে চেপে। মিছিল শেষে
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এমন বলা হচ্ছে যেন, প্রতিবাদ করছি মানেই কালো টাকার দলের লোক হয়ে গিয়েছি! কিন্তু আমরা মানুষের দুর্দশা বুঝি বলেই তাঁদের নিয়ে পথে আছি।’’

তৃণমূল অবশ্য আগেই জানিয়েছিল, যন্তরমন্তরে উপস্থিত থাকার জন্য আলাদা করে করে কাউকে আমন্ত্রণ করা হয়নি। যাঁরা এসেছেন (আপ, সপা, এনসিপি ইত্যাদি), তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে হাজির হয়েছেন। ভিড় নিয়ে না ভেবে মমতাও বলেছেন, ‘‘প্রয়োজন শুধু একটা মঞ্চ আর একটা মাইক!’’ আজ যখন তাঁর মঞ্চে এক এক করে সপা-র ধর্মেন্দ্র যাদব, জয়া বচ্চন, জেডিইউ-র শরদ যাদবেরা এসেছেন, তখন ঠোঁটের ফাঁকে তৃপ্তির হাসি দেখা গিয়েছে তৃণমূল নেত্রীর। মমতার বক্তৃতা শুরু হওয়ার ঠিক আগে মঞ্চের সামনে স্লোগান দিতে থাকেন কয়েক জন গো-রক্ষা বাহিনীর কর্মী। হইচই শুরু হতে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনেন মমতাই। মোদী-বিরোধিতায় আরও অস্ত্র হাতে পেয়ে বলেন, ‘‘আমি লক্ষ্য করছি, আমাদের বৈঠক ভন্ডুল করার জন্য নানা রকম চেষ্টা হচ্ছে। মোদীজি এটা করবেন না! প্রতিবাদ করতে আমরাও জানি।’’

আজ সকাল থেকেই খবর ছড়িয়ে পড়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী মমতার সঙ্গে কথা বলতে চান। আগেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু জানিয়ে দিয়েছিলেন, নোট-বাতিলের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দরজা সমস্ত রাজনৈতিক দলের জন্যই খোলা রয়েছে। ফলে, দ্রুত সংবাদ ছড়িয়ে যায়, প্রধানমন্ত্রী-মমতার বৈঠক হতে পারে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই তৃণমূলের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, বিরোধী ঐক্যে ভাঙন ধরানোর জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এমন খবর ছড়ানো হচ্ছে!

এই ঘটনা থেকেই স্পষ্ট, মমতা যে ঐক্য গড়ে তুলতে চাইছেন, তাতে সামান্যতম চিড়ও ঠেকানোর জন্য তিনি সতর্ক। এমনকী, বিরোধীদের কিছু নেতাকে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার কাল যে বৈঠকে ডেকেছেন, সেটাকেও সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে! বিষয়টি নিয়ে মমতাও সন্ধ্যায় কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সরকারের সঙ্গে কাল মাত্র ৬ জন বিরোধী নেতার বৈঠকে যোগ দিতে গুলাম নবিও অনীহা প্রকাশ করেছেন বলে তৃণমূলের দাবি। কংগ্রেস ও তৃণমূলের আলোচনায় ঠিক হয়েছে, সব বিরোধী দলকে নিয়ে সরকার আলোচনায় বসতে রাজি থাকলে তবেই বৈঠক হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন