বিজেপির পোস্টারে অভিনন্দন বর্তমান। ছবি: টুইটার
ভোট ঘোষণার আগেই সকালে দিল্লির উপকণ্ঠে আধাসেনার অনুষ্ঠানে হাজির প্রধানমন্ত্রী। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বেশ কয়েক বার ব্যবহার করলেন ‘অভিনন্দন’ শব্দটি। পাকিস্তানের নাম নিলেন না, কিন্তু ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্র’, ‘যুদ্ধ’ এমন নানাবিধ শব্দের জাল বুনলেন নিজের বক্তৃতায়।
কে বলবে, সদ্য গত কাল রাতেই নির্বাচন কমিশন সেনা নিয়ে রাজনীতি বন্ধের নির্দেশিকা জারি করেছে! এমনকি আজ নির্বাচন ঘোষণা মাত্র নির্বাচনী আচরণ বিধি চালু হওয়ার পরেও প্রধানমন্ত্রী টুইটে সন্ত্রাসে মোক্ষম জবাব দেওয়ার জন্য নিজের সরকারের বড়াই করেছেন। কারণ, এ বারের লোকসভা ভোটে প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম প্রধান হাতিয়ারই জাতীয়তাবাদ। আর কমিশনের যে নির্দেশিকা জারি হয়েছে, তাতে বিস্তর ধোঁয়াশা রয়েছে।
পুলওয়ামায় সন্ত্রাস হামলার পর ভারতীয় বায়ুসেনার পাকিস্তানে অভিযান, উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই বিজেপির পোস্টার-ব্যানারে ছড়িয়ে পড়েছে অভিনন্দনের ছবি। কোথাও যুদ্ধবিমান, বন্দুক হাতে খোদ মোদীরই ছবি। বিরোধীরা তো আপত্তি তোলেনই, প্রাক্তন নৌসেনা প্রধান অ্যাডমিরাল এল রামদাসও লিখিত অভিযোগ জানান কমিশনকে।
মধ্যপ্রদেশে ২০১৩ সালের ভোটের আগে সেনার ছবি দিয়ে এমন প্রচার করেছিল বিজেপি। কংগ্রেসের আপত্তিতে তখন কমিশন নিষেধ করেছিল। কিন্তু বিধি ভাঙলে কী পদক্ষেপ করা হবে, তা সেই সময় বলা হয়নি। গত কাল রাতে কমিশন সেই পুরনো নির্দেশিকা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। এমনকি আজও মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা বিধি ভাঙলে ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কিন্তু শাস্তি কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আজ সকাল থেকেই বিজেপির কেউ কেউ যুক্তি সাজাচ্ছিলেন, অনেক সময় উৎসাহী কেউ যদি পোস্টার তৈরি করেন, তা হলে দলকে কেন খেসারত দিতে হবে? বিরোধী দলও তো বিজেপিকে ফাঁসাতে এটা করতে পারে? তাদের প্রশ্ন— সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সেনার বীরগাথা কি বিজেপি বলতে পারে না? জাতীয়তাবাদই এখন মোদীর হাতে বড় তাস, জানেন রাহুল গাঁধী। তাই আজ সকালেই মোদীর অস্ত্রেই মোদীকে ঘায়েল করতে তিনি টুইট করেছেন: ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদী দয়া করে ৪০ জন নিহত সিআরপি জওয়ানের পরিবারকে বলুন, কে তাঁদের হত্যাকারী মাসুদ আজহারকে মুক্তি দিয়েছিলেন? তাঁদের জানান, আপনার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাই কন্দহারে গিয়ে তাকে তুলে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের হাতে।’’ রাহুল নিজের টুইটের সঙ্গে কন্দহারে অজিত ডোভালের ছবিটিও তুলে দেন। বিজেপি টুইটেই রাহুলের জবাব দিয়েছে: যখন হাইজ্যাক হওয়া যাত্রীদের ফিরিয়ে আনা নিয়ে দেশ প্রার্থনা করছিল, সেই সময় আপনি বোধহয় ভিডিয়ো গেমস খেলতে ব্যস্ত ছিলেন। আপনি কী জানেন, সর্বদল বৈঠকেই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল? মনে আছে, পাঠানকোটের হ্যান্ডলার লতিফকে ইউপিএ সরকার ‘সৌজন্য’ দেখিয়ে ছেড়ে দিয়েছিল?
ডোভালকে আড়াল করতে সরকারি ‘সূত্র’ আর একটি যুক্তিও সামনে নিয়ে আসে। বলে, ‘‘সেই সময় ব্রজেশ মিশ্রর সঙ্গে ডোভালের বিস্তর মতান্তর ছিল। সে কথা লালকৃষ্ণ আডবাণীর আত্মজীবনীতেও আছে।’’ গত কাল কমিশনের নির্দেশিকার পরেই পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী অমরেন্দ্র সিংহ তাকে স্বাগত জানান। তাতেও মোদী থামছেন না দেখে আজ সন্ধ্যায় এআইসিসিতে অশোক গহলৌত বলেন, ‘‘সব বিষয়ে ব্যর্থতা ঢাকতেই মোদী জাতীয়তাবাদকে অস্ত্র করছেন। আর অভিযোগ করছেন, কংগ্রেস না কি সেনার মনোবল ভাঙছে? কিন্তু পুলওয়ামার ঘটনার পর রাহুল গাঁধীই প্রথম সরকারের পাশে দাঁড়ান।’’