নেই টাকা ও বিদ্যুৎ, মোদীর ই-শিক্ষা শিকেয়

আক্ষরিক অর্থেই প্রাথমিক স্তরে। কম্পিউটারের হাত  ধরে গ্রামীণ ভারতের সঙ্গে গোটা বিশ্বের সংযুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন মোদী। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, দেশের প্রায় ৯০% গ্রামীণ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা এখনও কম্পিউটারের মাউসে হাত দেওয়ার সৌভাগ্য হয়নি।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৮ ০৩:৩৮
Share:

নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের ডিজিটাল ইন্ডিয়া মুখ থুবড়ে পড়েছে একেবারে প্রাথমিকেই।

Advertisement

আক্ষরিক অর্থেই প্রাথমিক স্তরে। কম্পিউটারের হাত ধরে গ্রামীণ ভারতের সঙ্গে গোটা বিশ্বের সংযুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন মোদী। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, দেশের প্রায় ৯০% গ্রামীণ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা এখনও কম্পিউটারের মাউসে হাত দেওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। পশ্চিমবঙ্গেরও অবস্থাও তথৈবচ। কম্পিউটার ব্যবহারে জাতীয় গড় যেখানে ১১%, সেখানে রাজ্যের মাত্র ৫% গ্রামীণ স্কুলে কম্পিউটার রয়েছে।

ক্ষমতায় এসেই ডিজিটাল ইন্ডিয়া পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন মোদী। দেশের শিক্ষা-স্বাস্থ্য, আর্থিক লেনদেন থেকে যাবতীয় সরকারি পরিষেবাকে ডিজিটাল পরিকাঠামোর আওতায় নিয়ে আসার স্বপ্ন দেখান তিনি। লক্ষ্য ছিল, গোটা বিশ্বের সঙ্গে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার ডিজিটাল সম্পর্ক গড়ে তোলা। স্বপ্ন বাস্তবায়নে মূলত গ্রামীণ স্কুলগুলিতে কম্পিউটার শিক্ষা ও পঞ্চায়েতগুলিকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত করার উপরে জোর দেয় তাঁর সরকার। কিন্তু চার বছরের মাথায় দেখা যাচ্ছে দেশের মাত্র ১১.০৮% স্কুলে কম্পিউটারের মাধ্যমে পঠন-পাঠন চালু হয়েছে। ২০১৪ সালে ওই পরিসংখ্যান ছিল ৮%-এর কাছাকাছি। বড় রাজ্যগুলির মধ্যে সব থেকে এগিয়ে কেরল। সেখানে ৭০% গ্রামীণ স্কুলেই কম্পিউটার রয়েছে। সবচেয়ে করুণ চিত্র ছত্তীসগঢ়, ওডিশা ও উত্তরপ্রদেশের। কম্পিউটার ব্যবহারের প্রশ্নে ৩%-এর গণ্ডি টপকাতেও ব্যর্থ ওই রাজ্যগুলি।

Advertisement

মোদীর সাধের ডিজিটাল ভারতের এই করুণ ছবির জন্য মূলত দু’টি কারণকে দায়ী করছে কেন্দ্র। প্রথমত, বিদ্যুতের অভাব। দ্বিতীয়ত, অর্থসঙ্কট। কেন্দ্রের সমীক্ষা অনুযায়ী এখনও দেশের প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি গ্রামীণ স্কুলে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। সমীক্ষা বলছে, দেশে এখনও ৪৪.২% গ্রামীণ স্কুলে বিদ্যুৎ নেই। ফলে কম্পিউটার ব্যবহারেরও প্রশ্ন ওঠে না। এ ক্ষেত্রে অবশ্য জাতীয় গড়ের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের ৭৭.১৪% গ্রামীণ স্কুলে বিদ্যুৎ রয়েছে।

সমস্যা রয়েছে অর্থের জোগানেরও। বর্তমানে সর্বশিক্ষা অভিযানের আওতায় ফি বছর জেলা পিছু ৫০ লক্ষ টাকা কম্পিউটার ও প্রযুক্তি শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা হয়। লক্ষ্য হল, কম্পিউটারের মাধ্যমে উচ্চ প্রাথমিক শ্রেণির পড়ুয়াদের অঙ্ক ও বিজ্ঞানকে সহজ ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া। সফ্‌টওয়্যারের দাম, হার্ডওয়ারের রক্ষণাবেক্ষণে সেই টাকার বড় অংশ বেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে ফি বছর স্কুলগুলিতে নতুন কম্পিউটার কেনার সংখ্যাও ক্রমশ কমছে। তাই ওই খাতে অর্থ বরাদ্দ দ্রুত বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রের কাছে দরবার করেছে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। এ ছাড়া কম্পিউটার ঠিক করার দক্ষ কর্মীর অভাব, নতুন প্রযুক্তি শিখতে শিক্ষকদের অনাগ্রহ, গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেটের কম স্পিড-সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

অথচ, শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও আকর্ষঁণীয় ভাবে উপস্থাপন করতে আগামী দিনে দেশের সমস্ত স্কুলে ব্ল্যাকবোর্ডের পরিবর্তে ‘ই-বোর্ড’ চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। কিন্তু গ্রামের যে করুণ ছবি সামনে এসেছে, তাতে ওই পরিকল্পনা আদৌও কতটা সফল হবে তা নিয়ে ঘোর সংশয়ে মন্ত্রকের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন