Film Festival

হলি-বলির মৌরসিপাট্টার বিরুদ্ধে সরব পরিচালকরা

লাতভিয়ার সিনেমা প্রযোজক আইজা বেরজিনা মনে করছেন, হলিউডের ছবির রমরমা ও একচ্ছত্র আধিপত্যের ফলেই ইউরোপের পরিচালকদের ভাল ছবি মার খাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে না মননশীল ছবির দর্শক।

Advertisement

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৭ ১৬:২১
Share:

অসমের অভিনেতা-গায়কদের সমবেত থিম সং।—নিজস্ব চিত্র।

ভারতীয় পরিচালক যেমন বলিউডের ছবির রমরমায় শিল্প কোণঠাসা বলে মনে করছেন, তেমনই ইউরোপের পরিচালক মনে করছেন হলিউডের আগ্রাসনেই মাথা তুলতে পারছে না ইউরোপের সিনেমা শিল্প। দেশ-বিদেশের পরিচালকদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে পাইরেসিও। ৩৫টি দেশের ৭৮টি সিনেমা প্রদর্শনের পাশাপাশি আলোচনা, তর্ক-বিতর্কে জমজমাট প্রথম গুয়াহাটি চলচ্চিত্র উৎসব বৃহস্পতিবার সমাপ্ত হচ্ছে। ইরানের ‘দ্য সেল্সম্যান’ দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়। এ দিন সন্ধ্যায় শেষ ছবি হিসেবে দেখানো হবে এস্টোনিয়ার ‘ফ্যামিলি লাইজ’।

Advertisement

লাতভিয়ার সিনেমা প্রযোজক আইজা বেরজিনা মনে করছেন, হলিউডের ছবির রমরমা ও একচ্ছত্র আধিপত্যের ফলেই ইউরোপের পরিচালকদের ভাল ছবি মার খাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে না মননশীল ছবির দর্শক। আইজার মতে, বড় বাজেট, ভরপুর মনোরঞ্জন, স্পেশ্যাল এফেক্ট থাকা হলিউডের ছবিগুলি বাস্তব থেকে মানুষকে সরিয়ে রাখে। সেই মায়াজাল কাটিয়ে মানুষকে চিন্তাশীল ছবির দিকে টেনে আনা কঠিন। ইউরোপের পরিচালকরা নিজের সিনেমা সংস্কৃতি তৈরি করতে চাইলেও হলিউডের সামনে টিঁকতে পারছেন না।

একই ভাবে বলিউডের ‘অবাস্তব মশালা ছবি’র ধাক্কায় আঞ্চলিক ও অর্থপূর্ণ ছবি তৈরি হচ্ছে না বলে আক্ষেপ করেন সংস্কৃত ছবি ‘ইস্টি’র পরিচালক জি প্রভা। তিনি বলেন, ‘‘ধামাকা বলিউডি ছবি ঝড়ের মতো আসে-যায়। নিম্নমানের বিনোদন দেওয়া ওই ছবিগুলি শুধুই বাণিজ্যস্বার্থ দেখে। ছবিতে সমাজের সমস্যা ফুটে ওঠে না।’’ তাঁর দাবি, সিনেমায় শিল্প ফেরাতে অর্থপূর্ণ ছবি তৈরির দায়িত্ব নিক সরকার।’’ গুয়াহাটির পাহাড়-মেঘের খেলায় মুগ্ধ প্রভা জানান, রাজ্য সরকার সাহায্য করলে, তিনি কালীদাসের মেঘদূত নিয়ে অসমের পটভূমিতে ছবি তৈরি করতে আগ্রহী।

Advertisement

আরও পড়ুন: ৪৪ বছর ধরে মাত্র ২ টাকায় রোগী দেখছেন এই চিকিত্সক

আরও পড়ুন: ট্রেনে বিনা টিকিটে এক হাজার যাত্রী! তবু ধরল না চেকার

চেক অভিনেত্রী সারা সানদিভা অবশ্য বলিউডের মশালা ছবির ভক্ত। ইচ্ছে, শাহরুখ খানের সঙ্গে ছবি করবেন। পছন্দের ছবি ‘কুইন’। স্পেনের পরিচালক ডেভিড ক্যানোভাসের বলিউড নিয়ে ধারণাই নেই। কিন্তু প্রথম দর্শনেই উত্তর-পূর্বের প্রেমে পড়ে যাওয়া পরিচালক এখানে ছবির শুটিং করার ছক কষতে শুরু করেছেন।

অসমের পরিচালক, অভিনেতারা বলিউডের দাপটে আঞ্চলিক ছবির কোণঠাসা অবস্থাকে তুলে ধরেন। প্রবীণ প্রযোজক শঙ্করলাল গোয়েন্কা মনে করেন, অসম আন্দোলন অসমীয়া ছবির উন্নয়নের ধারাকে ছিন্ন করে দিয়েছে। তাঁর আর্জি, সরকারি উদ্যোগে এমন হল তৈরি হোক, যেখানে ৫২ সপ্তাহ ধরেই অসমীয়া ছবি দেখানো হবে।

বলিউডের পরিচালক তিগমাংশু ঢুলিয়া অসমের নতুন পর্যটন নীতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘অসমে বলিউডের ছবির শুটিং হলে মোটা টাকা ছাড় দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে অসম সরকার। কিন্তু এ ভাবে অসমের ছবির কোনও উন্নতি হবে না। হলিউড-বলিউডে টাকার অভাব নেই। অসমে শুটিং করতে এলে তাদের সামান্য ছাড়ের প্রয়োজন পড়বে না। কিন্তু অসমের ছবি নির্মাতাদের সরকারি সাহায্য করলে তবেই অসমীয়া ছবির বিকাশ হবে।’’

শ্রীলঙ্কার পরিচালক প্রসন্ন বলেন, “অনলাইন প্ল্যাটফর্মের জন্য ছবি তৈরি হওয়া ও অনলাইনে ছবির মুক্তি নতুন প্রজন্ম ভাল ভাবেই গ্রহণ করেছে। কিন্তু ভারত বা শ্রীলঙ্কায় ছবি তৈরির মূল সমস্যা হল পাইরেসি। বেআইনি ভাবে সিনেমার কপি আপলোড-ডাউনলোড হওয়ার ধাক্কায় জর্জরিত দুই দেশেরই চলচ্চিত্র শিল্প।’’ ইরানের রাষ্ট্রদূত গোলাম রেজা আনসারি বেশি করে ভারত-ইরান যৌথ সিনেমা তৈরির উপরে জোর দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন