ক্রিকেট-রায়ে ক্ষোভ, তবু দোলাচল

বিদ্রোহ করছে মন। অথচ মাথায় রাখতে হচ্ছে জনতার আবেগ। তাই ভারতীয় ক্রিকেটের সংস্কার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী রায়কে এখনই চ্যালেঞ্জ জানাতে চাইছেন না কেউ।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪০
Share:

ব্যাটসম্যান জেটলি। — ফাইল চিত্র।

বিদ্রোহ করছে মন। অথচ মাথায় রাখতে হচ্ছে জনতার আবেগ। তাই ভারতীয় ক্রিকেটের সংস্কার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী রায়কে এখনই চ্যালেঞ্জ জানাতে চাইছেন না কেউ।

Advertisement

হয় মন্ত্রিত্ব, নয় ক্রিকেট প্রশাসন। সত্তর বছরের বেশি বয়স হলে ক্রিকেট পদাধিকারী হওয়ার পথ চিরতরে বন্ধ। এক পদে সর্বাধিক তিন বছর কাটানোর পরেই যেতে হবে সাময়িক স্বেচ্ছাবসরে। লোঢা কমিটির সুপারিশ মেনে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি তীর্থ সিংহ ঠাকুরের বেঞ্চ গত কাল এই রায় দেওয়ার পরেই তীব্র আলোড়ন দিল্লিতে। অরুণ জেটলি থেকে অনুরাগ ঠাকুর, শরদ পওয়ার থেকে কপিল সিব্বল— কমবেশি ক্ষুব্ধ সকলেই।

রায়ের পর্যালোচনা চেয়ে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে ‘কিউরেটিভ পিটিশন’ দায়ের করার পক্ষপাতী বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট তথা বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর। কোর্টের রায়ের জেরে হিমাচল ক্রিকেট সংস্থার পদ তাঁকে এখনই ছাড়তে হবে, সেই সঙ্গে আগামী বছর ছেড়ে দিতে হবে প্রেসিডেন্ট পদও। হিমাচলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রেমকুমার ধুমলের পুত্র অনুরাগ এ-ও বুঝছেন, মন্ত্রী হলে আর কোনও দিনই ক্রিকেট প্রশাসনে ফিরতে পারবেন না।

Advertisement

কিন্তু সমস্যা হল, অনুরাগ নিজে রায় পর্যালোচনার পক্ষে হলেও বোর্ড কর্তাদের একাংশ এখনই পাল্টা মামলা ঠুকতে ইতস্তত করছেন। তাঁরা মনে করছেন, আইপিএল স্পট ফিক্সিং কাণ্ডের পাশাপাশি ললিত মোদী ও বিজয় মাল্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ (দু’জনেরই আইপিএল-যোগ যথেষ্ট) ঘিরে ক্রিকেটপ্রেমীরা এমনিতেই যথেষ্ট বীতশ্রদ্ধ ছিলেন। বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়ে আইপিএলে নিজের টিম নামানোর মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল এন শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে। ক্রিকেটে নেতাদের হস্তক্ষেপ নিয়েও ক্ষোভ ছিল যথেষ্ট। এই অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ক্রিকেটের শুদ্ধকরণ হিসেবেই দেখছেন ক্রিকেটপ্রেমীদের একটা বড় অংশ। বোর্ড কর্তাদের একাংশ তাই মনে করছেন, এখনই রায়ের পুনর্বিবেচনা চাইলে জনমতই তাঁদের বিরুদ্ধে চলে যাবে। এবং নেতা-মন্ত্রীদের ভাবনাটাও এর থেকে খুব আলাদা নয়।

সত্তরোর্ধ্ব পওয়ারের যেমন ক্রিকেট প্রশাসন থেকে চিরবিদায় ঘটিয়ে দিয়েছে গত কালের রায়। ৬৩ বছরের জেটলি যত দিন মন্ত্রী থাকবেন, ক্রিকেট পদাধিকারী হতে পারবেন না। কিন্তু রায়ের বিরুদ্ধে সরব হননি কেউই। জেটলি প্রকাশ্যে বলছেন, তিনি কোনও ভাবেই আর ক্রিকেটের পদ নেবেন না। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কথায়, ‘‘খুব ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটের নেশা ছিল। ধীরে ধীরে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছি। একটা সময়ের পর দেখলাম, ক্রিকেট নিয়ে এমন সব কাণ্ড চলছে তাতে রাজনীতি আর ক্রিকেট দু’টো একসঙ্গে করা যাবে না। তাই ক্রিকেটকে বাদ দিয়ে রাজনীতিকে বেছে নিয়েছি।’’ দিল্লি ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট ছিলেন দীর্ঘদিন। পুরনো অ্যালবামে ব্যাট হাতে ছবিও রয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলছেন, ‘‘ক্রিকেট কেন, লন্ডনে টেনিসও তো দেখতে যাই আমি। এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।’’

জেটলিদের দিল্লি ক্রিকেট সংস্থার বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করেছিলেন কীর্তি আজাদ। এই ক্রিকেটার-সাংসদ জানাচ্ছেন আইনসভায় বিচারব্যবস্থার হস্তক্ষেপের তিনি বিরোধী ঠিকই। কিন্তু গত কালের রায় দীর্ঘদিনের দুর্নীতির অভিযোগ থেকে বোর্ডের মুক্তির একটা পথ খুলে দিয়েছে। কীর্তির বক্তব্য, ‘‘আমি মন্ত্রী নই। সাংসদ। ক্রিকেট কর্তা হতে আমার আইনগত বাধা নেই। কিন্তু আমি ক্রিকেটকে রাজনীতি-মুক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন লড়াই চালাচ্ছি। বিসিসিআইয়ের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দরজায় গিয়েছি। দল থেকেও সাসপেন্ড হয়েছি।’’ বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী আবার বরাবরের মতোই বিস্ফোরক। তাঁর হুমকি, ‘‘বিসিসিআই ও ক্রিকেট দুর্নীতির বহু অপ্রকাশিত কাগজপত্র আমার কাছে রয়েছে। যথাসময়ে সেগুলো ফাঁস করব।’’

নেতারা যা-ই বলুন, অসন্তোষের চোরাস্রোত এতটাই যে, ‘ক্রিকেট বনাম মন্ত্রিত্ব’ বিতর্কের পাল্টা বিতর্কও তৈরি। তা হল, ‘বিনোদন ও মন্ত্রিত্ব’! কপিল সিব্বল থেকে রাম জেঠমলানীর মতো দুঁদে আইনজীবী নেতাদের অনেকেই ঘনিষ্ঠ মহলে প্রশ্ন তুলেছেন, শুধু ক্রিকেট নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যদি এমন রায় দেয় তা হলে প্রশ্ন ওঠে, ফিল্ম বা নাট্যসংস্থা থেকে কি মন্ত্রী হওয়া যায়? নায়ক বা বা গায়কেরা মন্ত্রী হলেও তো স্বার্থের সঙ্ঘাতের প্রশ্ন ওঠা উচিত।

এই প্রসঙ্গে সর্বোচ্চ আদালত সূত্রের বক্তব্য, প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এই রায় দিয়েছে লোঢা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে। সেলুলয়েডের রাজনীতি-যোগ নিয়ে যদি কখনও সুপ্রিম কোর্টের রায় দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়, সে ক্ষেত্রে আইনের যথাযথ পথ ধরেই পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন