জেলাশাসককে কাছে পেয়ে রাস্তাঘাট, নালা-নর্দমা নিয়ে অভিযোগ জানাল ড্যাফোডিলস স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা।
তারা আসলে জেলাশাসকের অফিসে গিয়েছিল স্কুলের ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘এক্সপ্রেশন’-এর জন্য তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে। কত আর বয়স ওদের! অধিকাংশই অষ্টম-নবম শ্রেণির পড়ুয়া। শুরুতে জেলাশাসক এস বিশ্বনাথনের শৈশব, শিক্ষাদীক্ষা ইত্যাদি নিয়ে জানতে চায় তারা। পছন্দের ক্রিকেটার কে, পড়াশোনার বাইরে আরও কিছু করতেন কিনা, কার অনুপ্রেরণায় আজকের ‘চেয়ারে’ পৌঁছলেন ইত্যাদি কত জিজ্ঞাসা যে তাদের। হাসি মুখে সব প্রশ্নের জবাব দেন বিশ্বনাথন। বিই, এমবিএ, আইএএস হওয়ার নানা কথা শোনান তাদের। তিনি যে বরাবরই ক্লাশে প্রথম ছিলেন, কলেজে ক্রিকেটার হিসেবে বেশ নামডাক ছিল তাঁর, জানান তাও।
কথায় কথায় আসে তাঁর স্বচ্ছ শিলচর পরিকল্পনা, জেলাশাসকের কার্যালয়ের দেড়শো বছর উদ্যাপন ইত্যাদি নানা বিষয়। তখনই প্রশ্নটা ছুড়ে দেয় এক ছাত্র, কিন্তু রাস্তাঘাটের হাল কবে বদলাবে? বিশ্বনাথন জানান, জাতীয় সড়কে এরই মধ্যে স্থানে স্থানে কাজ চলছে। শহরের রাস্তাঘাটের কাজও কিছুদিনের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে। একটাই লক্ষ্য, বৃষ্টি নামার আগে কাজ শেষ করে নেওয়া।
কিন্তু এই টুকুতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি ছেলেমেয়েরা। বিটুমিনের প্রলেপ হারিয়ে যাওয়া রাস্তায় যে তাদের স্কুলে যেতে হয়! বর্ষার দুর্ভোগ সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে যায়! তাই তাদের স্কুলে যাতায়াতের রাস্তার কী হল, চেপে ধরেন জেলাশাসককে। একে একে সবাই বলতে থাকেন, বড় বাজে অবস্থায় বৃহত্তর মালুগ্রামের ওই রাস্তা। একে তো পাথর ছিটকে জখম হওয়ার আশঙ্কা। তার উপর প্রচুর ধুলোবালি। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে শ্বাস ফেলা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়।
অস্বস্তিতেই পড়েন জেলাশাসক। পূর্তমন্ত্রী থেকে শাসক দলের সাধারণ নেতারা কিছু দিন থেকে রাস্তা নিয়ে যে কোটি টাকার হিসেব শোনান, এই রাস্তা যে তার মধ্যে নেই। শহরের সমস্ত রাস্তার হাল-হকিকত জানিয়ে প্রকল্প প্রতিবেদন পাঠানোর সময়েই বাদ পড়ে যায় মালুগ্রাম। এলাকাবাসী আন্দোলনে নামলে জেলাশাসক হস্তক্ষেপ করে পূর্ত কমিশনার-সচিবের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর পরামর্শ মতো পূর্তবিভাগ পরে হিসেব নিকাশ করে প্রস্তাব পাঠালেও এখনও তা প্রক্রিয়াকরণের পর্যায়েই রয়েছে। কবে টেন্ডার ডাকা হবে, কবে-ই বা কাজ বণ্টন হতে পারে, সে সব উল্লেখের বদলে জেলাশাসক বলেন, ছাত্রছাত্রীদের উদ্বেগের কথা তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেবেন।
তাতেও মনে ভরেনি ড্যাফোডিলসের ছাত্রদের। শেষপর্যন্ত জেলাশাসক অনেকটা বাধ্য হয়েই ইঙ্গিত দেন যে জেলাশাসক শুধু সরকারের সিদ্ধান্তই কার্যকর করে। এই সব ব্যাপারে আসলে সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। মূল ক্ষমতা জনপ্রতিনিধিদেরই।
রাস্তার পরেই তারা তুলে ধরে শহরের জল জমার কথা। বিশ্বনাথন জানান, এই অবস্থা থেকে রেহাইয়ের জন্যই রাঙ্গিরখালে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। এতদিন রাঙ্গিরখাল দখল করে দোকানপাট, বাড়িঘর তৈরির দরুন শহরের জল যাওয়ার রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়েছিল। এ বার তাদের উচ্ছেদ করে রাঙ্গিরখালকে পুরনো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তাঁর আশা, আগামী বর্ষায় এর সুফল মিলবে। এই কাজ যে এখনও শেষ হয়নি, তাও জানান জেলাশাসক।
সব শেষে অবশ্য ছাত্রছাত্রীরা জীবনে সফল হওয়ার টিপস চান তাঁর কাছে। বিশ্বনাথন বলেন, পরীক্ষায় ভাল ফল করতে হলে পড়াশোনায় সময় দিতে হবে। শুধু আওড়ালে হবে না, পূর্ণ মনোযোগ খুব জরুরি।
আর সব সময় ভাবতে হবে, ভাল মানুষ হয়ে উঠব!