রূপকুণ্ডের কঙ্কাল কি তবে ইউরোপীয়দের?

একটা-দু’টো নয়, কয়েকশো কঙ্কাল! হিমালয়ের কোলে পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতায় উত্তরাখণ্ডের রূপকুণ্ড হ্রদ ও তার চারপাশে দীর্ঘদিন ধরেই মানুষের কঙ্কাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৯ ০২:৫০
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

রহস্যের ঘোমটা খুলল রূপকুণ্ডের কঙ্কাল! জিন-পরীক্ষায় ধরা পড়েছে, আজ থেকে অন্তত ২২০ বছর আগে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে রূপকুণ্ডে এসে মৃত্যু হয়েছিল এক দল ভিন্‌দেশির। হ্রদের মধ্যে পাওয়া বেশ কিছু কঙ্কাল তাদেরই।

Advertisement

একটা-দু’টো নয়, কয়েকশো কঙ্কাল! হিমালয়ের কোলে পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতায় উত্তরাখণ্ডের রূপকুণ্ড হ্রদ ও তার চারপাশে দীর্ঘদিন ধরেই মানুষের কঙ্কাল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাই ‘কঙ্কাল-হ্রদ’ বা ‘রহস্য-হ্রদ’ নামেও এর পরিচিতি রয়েছে। এ নিয়ে বহু গবেষণা চলছে। এমনই একটি গবেষণায় যা জানা গিয়েছে, তা রোমহর্ষকই বটে। দাবি করা হয়েছে, রূপকুণ্ডে পাওয়া হাড়গুলির মধ্যে বেশ কিছু অন্তত ২২০ বছরের পুরনো। কোনও এক অজানা কারণে সে সময়ে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে এত দূরে ভারতের হিমালয়ের পার্বত্য এলাকায় এসে মৃত্যু হয়েছিল ভিন্‌দেশি দলটির। কেন, কী ভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছিল, কেনই বা তারা এখানে এসেছিল, তা অবশ্য এখনও অজানা। গবেষণাপত্রটি ‘নেচার কমিউনিকেশনস’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

তবে গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, রূপকুণ্ডে পাওয়া সব কঙ্কাল কোনও একটি নির্দিষ্ট সময়ের নয়। জিন-পরীক্ষাতে বেশ কিছু তফাত ধরা পড়েছে এদের মধ্যে। যা থেকে বিজ্ঞানীদের অনুমান, এরা সকলেই কোনও নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সদস্য ছিল না। এরা আলাদা-আলাদা গোষ্ঠীর। বিভিন্ন সময়ে রূপকুণ্ডের কাছে এসেছিলেন। এমন অন্তত দু’টি পর্বে মৃত্যুর বিষয়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন।

Advertisement

লখনউয়ের ‘বীরবল সাহনি ইনস্টিটিউট অব প্যালিয়োসায়েন্সেস’-এর নীরজ রাই বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই রূপকুণ্ড নিয়ে গবেষণা চলছে। কঙ্কালগুলো কাদের, তারা কোথা থেকে এসেছে, কী ভাবে মারা যায়, এ সব নিয়ে। কিন্তু বিভিন্ন গবেষণা থেকে যা জানা যাচ্ছে, তাতে এটুকু স্পষ্ট, সত্যিটা আমাদের কল্পনায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনেক বেশি জটিল।’’

রূপকুণ্ডের ওই সব কঙ্কাল থেকে পাওয়া ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ভারতে পাওয়া সব চেয়ে প্রাচীন মানুষের ডিএনএ সেগুলি। জিনগত ভাবে ভিন্ন অন্তত তিনটি গোষ্ঠীর। হায়দরাবাদের ‘সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি’-র কুমারস্বামী থঙ্গরাজ বলেন, ‘‘একাধিক গোষ্ঠীর কঙ্কাল যে রয়েছে, সেটা আমরা প্রথম জানতে পারি ৭২টি কঙ্কালের মাইটোকনড্রিয়াল ডিএনএ পরীক্ষা করে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ডিএনএগুলির সঙ্গে বর্তমান ভারতের মানুষের সঙ্গে অনেক মিল। আবার কিছু ডিএনএ-র সঙ্গে পশ্চিম ইউরেশিয়ার জনগোষ্ঠীর মিল প্রচুর।’’ পরীক্ষার জন্য বেছে নেওয়া কঙ্কালগুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথম ভাগের ২৩টি কঙ্কালের সঙ্গে ভারতের বর্তমান মানুষের জিনগত মিল পাওয়া গিয়েছে। দ্বিতীয় ভাগে ১৪টি কঙ্কালের সঙ্গে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার বাসিন্দাদের সাদৃশ্য রয়েছে। বিশেষ করে ক্রিট ও গ্রিসের। এবং শেষ তথা তৃতীয় ভাগের কঙ্কালগুলির সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাসিন্দাদের জিনগত মিল রয়েছে।’’

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়াডাওয়িন হার্নের কথায়, ‘‘আমরা সত্যি চমকে গিয়েছি। বিশেষ করে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার প্রাচীন বাসিন্দাদের কঙ্কালগুলি নিয়ে। এ ধাধা তা হলে আর ভারতে আটকে রইল না। প্রশ্ন তুলে দিল, তা হলে কি অত বছর আগেও পৃথিবীর সম্পূর্ণ অন্য প্রান্ত থেকে রূপকুণ্ড দর্শনে আসত মানুষ!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন