ডক্টর ডেথ। ফাইল চিত্র।
তাঁকে গ্রেফতার করে তাঁর অপরাধের পর্দা ফাঁস করার জন্য মুম্বই পুলিশকে স্যালুট করলেন ‘ডক্টর ডেথ’ ওরফে সন্তোষ গুলাবরাও পল। পুলিশ সুপার সন্দীপ পাটিলকে একটি চিঠি লেখেন পল। তিনি বলেন, “প্রথমেই আমার তরফ থেকে আপনাকে স্যালুট জানাই।” চিঠিতে তিনি আরও লেখেন, “যদি প্রশ্ন করেন, কেন আমি এই অপরাধ করেছি, তা হলে সবার আগে আপনার ডিপার্টমেন্টের দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ অফিসারদের প্রশ্ন করুন। প্রশ্ন করুন সমাজের মানুষগুলোকেও যাঁরা ২০০৩-০৬ পর্যন্ত ঘুমিয়েছিল।” চিঠির শেষে পল নিজে হস্তাক্ষর করেন।
পলের এই চিঠি মুম্বই পুলিশকে বেশ অবাক করেছে। ছ’জনকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে ধরা পড়ার পর কী ভাবে এতটা নির্বিকার রয়েছেন পল! তবে তাঁর চিঠি নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্যই করতে চায়নি পুলিশ।
এক মহিলার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা নিয়ে তদন্ত করতে গিয়েই ডক্টর ডেথ-এর কর্মকাণ্ড সামনে আসে। পলের শেষ শিকার ছিলেন মঙ্গল জেধে এক মহিলা। ওই মহিলাই নাকি পলের সমস্ত কর্মকাণ্ড ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকেও রেয়াত করেননি পল।
গত বুধবারেই নিখোঁজ ব্যক্তিদের একটি তালিকা আসে মুম্বই পুলিশের হাতে। পুলিশ সুপার সন্দীপ পাটিলের নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয় এ বিষয়ে তদন্তের জন্য। নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বিলাস বিষ্ণু ধাগে (৪৫)। তিনি ২০০১ থেকে নিখোঁজ। দিপালী কৃষ্ণা সানাস (২১) ২০০১ থেকে নিখোঁজ এবং মহাদেও সোনু চিকানে (৪৭)। তিনি নিখোঁজ ২০১২ থেকে। এই তিন জনই ওয়াই-এর বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনাচক্রে সন্তোষ গুলাবরাও পলও মহারাষ্টের মহাবলাশ্বরের ছোট শহর ওয়াইতেই চিকিত্সকের কাজ করতেন।
পলের গ্রেফতারের পর থেকেই ওয়াইয়ের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা তাঁদের নিখোঁজ আত্মীয়দের নিয়ে নতুন করে তদন্তের দাবি জানান।
পুলিশ জানিয়েছে, ডক্টর পলের আরও এক শিকার বনিতা নরহরি গায়কোয়াড়ের দেহ খোঁজার চেষ্টা চলছে। অভিযোগ, তাঁকে বিষ ইঞ্জেকশন দিয়ে হত্যা করেছিলেন পল। তার পর তাঁর দেহ কৃষ্ণা নদীর ধারে কোথাও পুঁতে দিয়েছিলেন। ওই দেহ উদ্ধার হলে আরও অনেক নতুন তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আসা মুম্বই পুলিশের।
মহারাষ্ট্রের ছোট্ট শহর ওয়াইতে চিকিত্সা করতেন ডক্টর ডেথ ওরফে সন্তোষ গুলাবরাও পল। রোগীদের একাকীত্বের সুযোগ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে তাঁদের থেকে মূল্যবান গয়না হাতিয়ে নিতেন তিনি। তার পর প্রমাণ লোপাট করতে মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে খুব সন্তর্পণে সেই দেহ গর্তে পুঁতে দিতেন। খুনের প্রথম ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৩ সালে। তার পর একের পর রোগীকে তাঁর শিকার বানান। পাঁচ মহিলা এবং এক পুরুষকে খুন করেন পল। এ কাজে তাঁকে সাহায্য করতেন তাঁরই প্রেমিকা জ্যোতি মান্দ্রে নামে এক নার্স। পলের গ্রেফতারের পর জানা যায়, আসলে তিনি কোনও ডিগ্রিধারী চিকিত্সকই ছিলেন না। একটি ক্লিনিকে অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসাবে কাজ করতেন।
আরও খবর...