চিহ্ন: পেটে যুদ্ধের ক্ষত দেখাচ্ছেন বিজয়। নিজস্ব চিত্র
দশ ফুট দূরত্বেই ঢাকা শহরের রাজপথে পাক গোলা এসে পড়েছিল। পেট ফুটো হয়ে শেলের টুকরো ঢুকে যায়। তীব্র শব্দের জেরে সেই থেকেই দুই কানের পর্দা ফেটে গিয়েছে। তাই কোনও শব্দ শুনতে পান না। পেটের ক্ষত শুকিয়ে গেলেও বধির হয়ে এ ভাবেই কেটে গিয়েছে বহু বছর। তবে যুদ্ধের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনও মনে রয়েছে। ডুয়ার্সের মেটেলি চা বাগানের মূর্তি ডিভিশনের ফ্যাক্টরি লাইনের বাড়িতে বসে শরীরী ভাষায় প্রশ্ন বুঝে নিয়েই তাই যুদ্ধের অভিজ্ঞতা শোনাতে শুরু করলেন বিজয়কুমার থাপা।
১৯৭১-এর যুদ্ধে ভারতীয় গোর্খা রেজিমেন্টের ৩১ নম্বর রেজিমেন্টে সিপাহী ছিলেন বিজয়। ১৯ বছরের সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ যুবক তখন তরতাজা। এখন ৬৮ বছর বয়সে পৌঁছেও সেই যুদ্ধের স্মৃতি বলতে গিয়ে বদলে যায় তাঁর শরীরী ভাষা। সেই যুদ্ধে পাকিস্তান যখন আত্মসমর্পণ করছে তখন তিনি সেনা হাসপাতালে শুয়ে যুদ্ধ জয়ের খবর পেয়েছিলেন। নিজে চিরজীবন শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেললেও সেনার উপরে বিশ্বাস এতটাই অটল ছিল যে বড় ছেলেকে অবসরের পর উদ্বুদ্ধ করে সেই সেনাতেই যোগ দেওয়ান বিজয়। ছেলে অমিতকুমার থাপা এখন শিমলাতে কর্তব্যরত।
টেলিভিশনে খবরের আওয়াজ শুনতে পান না। কিন্তু আত্মঘাতী হামলাতে জওয়ানদের মর্মান্তিক মৃত্যুর ছবি দেখেই চঞ্চল হয়েছিলেন। কাগজ পড়ে তিনি জানতে পেরেছেন যুদ্ধের জিগিরে ভেসে যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া। অনেকে যত্রতত্র দেশবিরোধী বার্তার অভিযোগ তুলে হামলাও চালাচ্ছে। কিন্তু প্রাক্তন সেনা জওয়ান বিজয় থাপা এমন প্রবণতার তীব্র বিরোধিতা করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘যারা কোমর বেঁধে লড়াইয়ের আবহ তৈরি করছে তাদের নিজের নিজের কাজের ক্ষেত্রে সেই জেদ বজায় থাকলে তবেই দেশের উপকার হবে।’’ যুদ্ধ নিয়ে সেনার কোনও উপদেশের প্রয়োজন নেই বলেও মনে করেন বিজয় থাপা। দেশ ডাকলে এই বয়সেও যে তিনি ফের লড়তে রাজি তাও জানাতে ভোলেননি তিনি।