Karnataka Bus Fire

কর্নাটকে বাসে অগ্নিকাণ্ড: বিকল হয়ে গিয়েছিল স্বয়ংক্রিয় দরজা! জানলা ভেঙে কেউ বার হলেন, কেউ পারলেন না, ঝলসে গেলেন

বৃহস্পতিবার সকালে যখন বাসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয় তত ক্ষণে পুরো বাসটিই ঝলসে তালগোল পাকিয়ে গিয়েছিল। দমকলকর্মী এবং উদ্ধারকারীরা বাসের ভিতর থেকে ঝলসে যাওয়া দেহগুলি উদ্ধার করেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:১৫
Share:

কর্নাটকের দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই বাস। বৃহস্পতিবার সকালে চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: পিটিআই।

হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি। ছিটকে পড়লাম নীচে। ঘুম চোখেই দেখলাম বাসের বাইরে আগুন জ্বলছে। তত ক্ষণে বাসের ভিতরে যাত্রীদের মধ্যে কান্নাকাটি, চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়ে গিয়েছিল। প্রতি মুহূর্তে আগুনের তেজ বাড়ছিল। দরজার দিকে হুড়মুড়িয়ে এগিয়ে যান যাত্রীরা। কিন্তু দরজা কিছুতেই খুলছিল না। শেষমেশ হাতের সামনে যে যা পেলেন, তাই দিয়েই শুরু হল বাসের জানলা ভাঙার কাজ। দুর্ঘটনায় বেঁচে ফেরা আদিত্য এক সংবাদসংস্থাকে শোনালেন তাঁর ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।

Advertisement

কর্নাটকের চিত্রদুর্গে বৃহস্পতিবার ভোরে একটি বাতানুকূল বাসে আগুন ধরে যায়। ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কার পরই বাসে আগুন ধরে গিয়েছিল। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ন’জনের মৃত্যু হয়েছে। ঝলসে গিয়েছেন আরও অনেকে। কর্নাটকের এই ঘটনাই মাসখানেক আগে রাজস্থানের জয়সলমেরের বাস দুর্ঘটনার ভয়ঙ্কর স্মৃতি উস্কে দিয়েছে। ঘটনাচক্রে, সেটিও ছিল বাতানুকূল বাস। সেই ঘটনায় ২০ জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল।

বুধবার রাতে বেঙ্গালুরু থেকে সফর শুরু করেছিল বাসটি। ৩২ জন যাত্রী নিয়ে সেটি শিবমোগায় যাচ্ছিল। ৪৮ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ছুটছিল বাতানুকূল সেই বাস। আদিত্য বলেন, ‘‘বাসযাত্রীরা সকলেই ঘুমোচ্ছিলেন। একটা বিকট শব্দ, তার পর ঝাঁকুনি। স্লিপার আসন থেকে ছিটকে পড়লাম। বাসে তখন আগুন ধরে গিয়েছিল। স্বয়ংক্রিয় দরজা বিকল হয়ে গিয়েছিল। বাচ্চা, বয়স্ক এবং মহিলারা আতঙ্কে কান্নাকাটি আর চিৎকার করছিলেন। ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে আসছিল।’’

Advertisement

আদিত্য আরও জানান, বাসের চারপাশে তখন আগুনের হলকা। কী ভাবে বাস থেকে বার হওয়া যায়, তখন সেই চেষ্টাই চলছিল। বাসের জানলার কাচ ভাঙা শুরু হল। কোনওটা ভাঙল, কোনওটা ভাঙল না। যে ক’টি ভাঙল সেখান দিয়েই যাত্রীরা রাস্তায় লাফিয়ে পড়লেন। তাঁরা নেমে বাকিদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু অনেকেই বার হতে পারলেন না। আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল যে, আটকে থাকা যাত্রীদের আর বার করা সম্ভব হয়নি। আদিত্য বলেন, ‘‘চোখের সামনে কয়েক জনকে ঝলসে যেতে দেখলাম। অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে তা দেখতে হল। এ দৃশ্য কখনও ভোলার নয়।’’

এক প্রত্যক্ষদর্শী সচিন জানিয়েছেন, যে সময় দুর্ঘটনা ঘটে, সেই সময় ওই সড়ক ধরেই যাচ্ছিলেন তিনি। সচিন নিজের গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘স্লিপার বাস আমার গাড়িকে ওভারটেক করল। তার পরই দেখলাম উল্টো দিকে লেন দিয়ে যাওয়া একটি ট্রাক ডিভাইডার টপকে বাসের পেটে ধাক্কা মারল। ঠিক যেখানে জ্বালানির ট্যাঙ্ক ছিল সেই জায়গায় ধাক্কা লাগতেই আগুন ধরে যায় বাসটিতে।’’ তদন্তকারীদেরও ধারণা, বাসের জ্বালানি ট্যাঙ্কে ধাক্কা লাগায় আগুন ধরে যায়।

মাসখানেক আগে ঠিক একই রকম ঘটনা ঘটেছিল রাজস্থেনের জয়সলমেরে। চলন্ত বাসে আগুন ধরে ঝলসে মৃত্যু হয়েছিল ২০ জনের। সে ক্ষেত্রেই বাতানুকূল বাসের স্বয়ংক্রিয় দরজা আটকে গিয়েছিল। ফলে যাত্রীরা বার হওয়ার সুযোগ পাননি।

বৃহস্পতিবার সকালে যখন বাসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয় তত ক্ষণে পুরো বাসটিই ঝলসে তালগোল পাকিয়ে গিয়েছিল। দমকলকর্মী এবং উদ্ধারকারীরা বাসের ভিতর থেকে ঝলসে যাওয়া দেহগুলি উদ্ধার করেন। উদ্ধারকারী দলের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, দেহগুলি এমন ভাবে ঝলসে গিয়েছে যে, চেনার উপায় নেই। ঘটনার পর থেকেই পলাতক বাসের চালক এবং খালাসি। তবে এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ট্রাকচালকের। তাঁর দেহও ঝলসে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন। তিনি মৃতদের পরিবারের জন্য দু’লক্ষ টাকা এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement