গলা কাঠ, লজেন্স খেয়ে চেঁচাচ্ছে কংগ্রেস

যেন ক্লাসরুম! হেড দিদিমনি বসে রয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের ‘টাস্ক’ দেওয়া হয়েছে! ফাঁকি দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। ফাঁকি দিলে নম্বর তো কাটা যাবেই, কপালে জুটতে পারে কড়া বকুনিও! এ আসলে লোকসভার বিরোধী বেঞ্চের একাংশ। এক দশক পরে বিরোধী বেঞ্চে ফেরা কংগ্রেস শিবিরের ছবিটা ইদানীং এমনই।

Advertisement

শঙ্খদীপ দাস

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৫ ০০:৩৩
Share:

যেন ক্লাসরুম! হেড দিদিমনি বসে রয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের ‘টাস্ক’ দেওয়া হয়েছে! ফাঁকি দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। ফাঁকি দিলে নম্বর তো কাটা যাবেই, কপালে জুটতে পারে কড়া বকুনিও! এ আসলে লোকসভার বিরোধী বেঞ্চের একাংশ। এক দশক পরে বিরোধী বেঞ্চে ফেরা কংগ্রেস শিবিরের ছবিটা ইদানীং এমনই। অথচ গত দশ-বারো বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, সংসদে হাজির থাকার ব্যাপারে এত দিন অনেক কংগ্রেস সাংসদেরই বেজায় গা ছাড়া ভাব দেখা গিয়েছে এত দিন। হুইপ জারি করে, আগের রাতে মোবাইলে টেক্সট মেসেজ পাঠিয়েও সংসদে কোনও বিষয়ে ভোটাভুটির দিন দলের সব সাংসদকে পাওয়া যায়নি। ইউপিএ জমানায় সংসদে কোনও ভোটাভুটির পরে প্রায় প্রতি বারই গুনে গুনে কংগ্রেসের ১০-১২ জন সাংসদকে ডেকে অনুপস্থিতির কৈফিয়ত চাইতেন প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি বা পবন বনশল।

Advertisement

লোকসভায় কংগ্রেসের সেই ছবিটা আমূল বদলে গিয়েছে হালে। ললিত-কাণ্ডে সুষমা স্বরাজ, বসুন্ধরা রাজের ইস্তফা চেয়ে সভা অচল রেখেছে কংগ্রেস। দেখা যাচ্ছে, অমরেন্দ্র সিংহ বা কমল নাথের মতো কয়েক জনকে দেখা না গেলেও দলের সাংসদদের উপস্থিতির হার কখনও ৯০ শতাংশ, কখনও বা তারও চেয়েও বেশি!

কী কারণে এতটাই বদলে গেল ছবিটা? কংগ্রেস নেতারা জানাচ্ছেন, এর পিছনে কোনও রহস্য নেই। সনিয়া গাঁধীর সিধেসাপটা নির্দেশই এর কারণ। শুধু নির্দেশ বললেও কম বলা হবে। লোকসভার ওয়েলে নেমে কংগ্রেস সাংসদরা যখন স্লোগান তুলছেন, প্ল্যাকার্ড তুলে হল্লা করছেন, কংগ্রেস সভানেত্রী নিজে তখন বিরোধী বেঞ্চের প্রথম সারিতে ঠায় বসে থাকছেন। নজর রাখছেন। ১৬তম লোকসভায় দলের সাংসদ মাত্র ৪৪ জন। ফলে কে এসেছেন, আর কে গরহাজির, ঠাওর করতে মোটেই অসুবিধে হচ্ছে না। আবার হাজির থেকেও কে চুপচাপ বসে বা দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তাঁকে নিয়ে দলে মাপাঝোকা চলছে। যেমন শশী তারুর। সম্প্রতি দলীয় বৈঠকে আগ বাড়িয়ে তিনি মত দিয়েছিলেন, সংসদে হট্টগোল করা ঠিক হবে না। এ জন্য বিপাকে পড়তে হয় তাঁকে। ওই বৈঠকেই সনিয়া তাঁর প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ফলে ঠেলায় পড়ে তারুর এখন লোকসভায় বিক্ষোভে সামিল হচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু অন্যদের মতো একেবারে ওয়েলে না নেমে ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো বেঞ্চের ধারে দাঁড়িয়ে থাকছেন।

Advertisement

লোকসভায় কংগ্রেস শিবিরের ছবিটা আজও ছিল একই রকম। কংগ্রেস স্থির করে নিয়েছে, বিজেপির তৈরি করা নজিরকেই অস্ত্র করে যাবে তারা। মন্ত্রীরা ইস্তফা না দেওয়া পর্যন্ত সংসদ চলতে দেবে না। এমনকী, মন্ত্রীদের ইস্তফা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিলে তবেই সরকারের ডাকা সর্বদল বৈঠকে তারা যেতে পারে বলে আজ জানিয়ে দেয় কংগ্রেস। এবং এর পরে অধিবেশন শুরু হওয়া মাত্রই কংগ্রেস সাংসদরা ওয়েলে নেমে স্লোগান তুলতে শুরু করেন। স্পিকার সুমিত্রা মহাজন গত কালও বলেছিলেন, সভায় যেন প্ল্যাকার্ড দেখানো না হয়। কংগ্রেস সাংসদরা এ দিন গত কালের থেকেও বড় বড় প্ল্যাকার্ড নিয়ে সভায় উপস্থিত হন। স্লোগান তোলেন, ‘‘৫৬ ইঞ্চ কহা গয়া / পাঁচ ইঞ্চ হো গয়া’’, ‘‘কালাধন কহা গয়ে / ছোটে মোদী লে গয়ে।’’

এ ভাবেই চলছিল। কিন্তু স্পিকার আজ কৌশল বদলে ফেলায় কিছুটা মুশকিলেই পড়ে যান কংগ্রেস সাংসদরা। এ দিন হট্টগোলের মধ্যেই আজ সভার কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন স্পিকার। যাতে এক-দেড় ঘণ্টা স্লোগান তুলে বিরোধীরা হাঁপিয়ে গিয়ে রণে ভঙ্গ দেন। কিন্তু সনিয়া হাল ছাড়তে রাজি হননি। ফলে মাঝে দু’বার অধিবেশন মুলতবি হলেও কংগ্রেস সাংসদদের বিকেলে একটানা প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে গলা ফাটিয়ে স্লোগান দিতে হয়। নেতৃত্ব দেন মূলত অসমের দুই সাংসদ, গৌরব গগৈ ও সুস্মিতা দেব। পরে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, অধীর চৌধুরীকেও স্লোগান তোলায় নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। কিন্তু তাতে যে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে, সেই ছবিটাও বেশ বোঝা যাচ্ছিল। এই অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দেন দলের এক মহিলা সাংসদ। তিনি চট করে বাইরে বেরিয়ে কিছু লজেন্স নিয়ে ফিরে আসেন লোকসভায়। সেই লজেন্স দেন মল্লিকার্জুন খড়্গে ও দলের অন্য সাংসদদের। সনিয়া কখনও সংসদে স্লোগান তোলেন না। আজও তোলেননি। তবে তাঁকেও আজ লোকসভায় লজেন্স খেতে দেখা যায়।

বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন থেকেই সংসদের উভয় কক্ষ অচল রয়েছে কংগ্রেসের হট্টগোলে। তা নিয়ে চাপে রয়েছে সরকার ও বিজেপি। তার উপরে বিজেপির দুর্নীতি নিয়ে যে ভাবে সভায় স্লোগান তোলা হচ্ছে, সেটাও অস্বস্তি বাড়াচ্ছে শাসক দলের। লোকসভার দশর্কাসনে আজ ছিল স্কুল-পড়ুয়ারা। শেষমেষ তাদের দোহাই দিয়েও কংগ্রেসকে থামতে বলেন সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। ওই বলেন, ‘‘ছোট ছেলেমেয়েরা কী ভাববে বলুন তো! সংসদে এমন চিৎকার চেঁচামেচি হয়!’’

কিন্তু কে কার কথা শোনে! সনিয়ার হুকুম, মন্ত্রীরা ইস্তফা না দিলে সভা অচল করে রাখতে হবে! তা অমান্য করবে, এমন কে আছে কংগ্রেসে? তাই চেঁচিয়ে যেতে হচ্ছে তাঁদের। গলা কাঠ হয়ে এলে?

ল্যাবেঞ্চুস আছে না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন