এক টার্মিনাল বা প্রান্তিক স্টেশনে ওঠা এবং শেষ টার্মিনালে নামা। এই ছিল বাড়তি গতির এক্সপ্রেস ট্রেন ‘দুরন্ত’-এর বৈশিষ্ট্য। এ বার সেই বৈশিষ্ট্য মুছে যাচ্ছে। নতুন ব্যবস্থায় মাঝপথেও কিছু স্টেশনে যাত্রীরা ওঠানামা করতে পারবেন দুরন্ত এক্সপ্রেসে।
যাত্রীদের চাহিদা। রেলের আয় বাড়ানো। মূলত এই দু’টি বিষয়ের দিকে নজর রেখেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল বোর্ড। এই ব্যবস্থা চালু হবে নতুন বছরের গোড়ায়। তবে মোট ১১ জোড়া দুরন্তের মধ্যে আটটিতে এই বন্দোবস্ত হচ্ছে। হাওড়া-দিঘা, হাওড়া-বিশাখাপত্তনম এবং হাওড়া-পটনা দুরন্তকে এর বাইরে রাখা হচ্ছে যাত্রাপথ তুলনায় কম বলেই।
যাত্রীদের একাংশের প্রশ্ন, একটানা দ্রুত সফরে কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্যই তো দুরন্তের টিকিট কাটা। সেই বিশেষ এক্সপ্রেসও যদি অন্যান্য ট্রেনের মতো স্টেশনে স্টেশনে থামতে থামতে যায়, তা হলে আর দুরন্তে ভ্রমণ করা হবে কেন?
রেল সূত্রের খবর, বাড়তি কোনও স্টেশনে দুরন্ত থামানোর ব্যবস্থা হচ্ছে না। রেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, দুরন্তের যাত্রাপথে যে-দু’টি বা তিনটি স্টেশনে রেলের নিজস্ব কাজকর্মের জন্য ‘অপারেশনাল স্টপ’ দেওয়া হয়, এখন সেখানে যাত্রীরা নামতে বা উঠতে পারেন না। নতুন ব্যবস্থায় যাত্রীরা টিকিট কেটে আপাতত সেই ক’টি স্টেশনেই ওঠানামা করতে পারবেন। এতে সামান্য বাড়তি সময় লাগবে। সেটা নগণ্য। পথেই তা পুষিয়ে দেবে ট্রেন।
২০০৭ সালে নয়াদিল্লি থেকে জম্মু ও নয়াদিল্লি থেকে লখনউ, এই দু’টি ‘নন স্টপ’ (প্রান্তিক স্টেশন ছাড়া কোথাও থামবে না) ট্রেন চালু করা হয়েছিল উত্তর রেলে। ৫-৭ ঘণ্টার দূরত্বের ওই দু’টি ট্রেনে যাত্রীদের ভিড় উপচে পড়ে। তার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী হয়ে চালু করেন ওই ধরনের ‘নন স্টপ’ ট্রেন। তারই নাম দেওয়া হয় দুরন্ত এক্সপ্রেস। তবে দুরন্তের যাত্রাপথ অনেকটা বেশি হওয়ায় রেলের নিজস্ব কাজকর্মের জন্য মাঝপথে দু’টি বা তিনটি স্টেশনে ট্রেনটি থামানোর ব্যবস্থা হয়। তবে সেই সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ওই সব স্টেশনে যাত্রীরা ওঠানামা করতে পারবেন না।
কিন্তু তখন থেকেই যাত্রীদের একটি অংশের তরফে বারবার আবেদন করা হচ্ছিল, যাত্রাপথের মাঝখানে ট্রেনটি তো থামাতেই হচ্ছে। তাই সেখান থেকেও যাত্রীদের ওঠানামা করারও ব্যবস্থা চালু হোক। প্রায় ১১ বছর ধরে ভাবনাচিন্তা করার পরে রেলকর্তারা এ বার যাত্রীদের সেই আবেদনে সাড়া দিলেন।
প্রশ্ন উঠছে, সিদ্ধান্ত যদি হয়ে গিয়েই থাকে, তা হলে সেটা রূপায়ণ করতে চার মাস লাগবে কেন?
রেলকর্তারা জানান, এখন ট্রেনে আসন সংরক্ষণ করা যায় চার মাস আগে থেকে। সুতরাং নোটিস দেওয়ার পরে যাত্রীরা নতুন বছরের (জানুয়ারি) টিকিট পাবেন। তাই দুরন্ত এক্সপ্রেসেও মাঝপথে যাত্রীদের ওঠানামা শুরু হবে চার মাস পরেই।