Coronavirus in India

অর্থনীতির হাল নিয়ে আবার প্রশ্ন কৌশিকদের

বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনীতিবিদ কৌশিকবাবুর তুলে ধরা পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০-র আর্থিক বৃদ্ধির হারে এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে ভারত সব থেকে পিছনে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২০ ০৫:১৯
Share:

কৌশিক বসু

কোভিড অতিমারি সামলে দেওয়ার সাফল্য দাবি করার পরে মোদী সরকার এখন রোজই বলছে, দ্রুত ফিরছে অর্থনীতির হাল। কিন্তু সেই দাবি নিয়ে ফের প্রশ্ন তুললেন অর্থনীতিবিদেরা।

Advertisement

এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে কোভিড মোকাবিলা এবং অর্থনীতির হাল— দু’দিকেই যে ভারত সব থেকে পিছনে তা দেখিয়ে অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর মন্তব্য, ‘‘দেশের মঙ্গলের জন্য আমাদের পরিসংখ্যানের দিকে তাকাতেই হবে। এশিয়ার দেশগুলির আর্থিক বৃদ্ধি ও কোভিডের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, আমরা বলতে পারি না যে ভারত কোভিড নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে অর্থনীতির গতি শ্লথ করে ফেলেছে।’’

বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনীতিবিদ কৌশিকবাবুর তুলে ধরা পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০-র আর্থিক বৃদ্ধির হারে এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে ভারত সব থেকে পিছনে। আবার করোনায় প্রতি দশ লক্ষ মানুষে মৃত্যুর সংখ্যাও ভারতে সবচেয়ে বেশি। চিন তো বটেই, এমনকি পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানও ভারতের থেকে এগিয়ে।

Advertisement

দিন কয়েক আগে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আরও এক দফা দাওয়াই ঘোষণার পরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, জিডিপি-র সঙ্কোচন আর বেশি দিন চলবে না। অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, ফের লকডাউন করতে না-হলে ২০২০-র শেষেই অর্থনীতি প্রাক-কোভিড স্তরে ফিরে যাবে। নয়া দাওয়াইয়ে মূলত কারখানায় উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহ ভাতা, নতুন রোজগার তৈরির চেষ্টায় প্রভিডেন্ট ফান্ডে ভর্তুকির ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু গরিবদের হাতে নগদ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়নি। কৌশিকবাবু আজ বলেন, ‘‘আমরা এমন এক পরিস্থিতিতে রয়েছি, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। আমাদের বাস্তবের মুখোমুখি হতে হবে। নীতির সংশোধন করতে হবে। গরিবদের আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন।’’

আরও পড়ুন: ৪ হাজারের বেশি দৈনিক সুস্থ, কমছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা

অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা অবশ্য এই অভিযোগ মানছেন না। তাঁদের যুক্তি, আগামী অর্থ-বছরেই আর্থিক বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের কাছে পৌঁছে যাবে। কেন্দ্রের প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ ভিরমানিও আজ বলেছেন, এ বছর জিডিপি-র ৭.৫ শতাংশ সঙ্কোচন হলেও আগামী বছরে বৃদ্ধি ১০ শতাংশের উপরে থাকবে। কিন্তু অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এ বছর জিডিপি তলানিতে ঠেকায় আগামী বছর সামান্য উন্নতিই অনেক বেশি দেখাবে।

বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, দেশের অর্থনীতির হাল যে খারাপ, তা একের পর এক ব্যাঙ্ক ডুবতে বসা থেকেই প্রমাণ। মঙ্গলবারই লক্ষ্মীবিলাস ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার উপরে বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক সমস্যায় পড়ছে মানে জিডিপি-ও সমস্যাপীড়িত। মূল্যবৃদ্ধি এত বেশি কোনওদিন ছিল না। বেকারত্বও না। জনতার মনোবল ভাঙছে। সামাজিক ন্যায়কেও রোজ দমন করা হচ্ছে। এটা বিকাশ না বিনাশ?’’

আরও পড়ুন: ন্যূনতম আয় নিশ্চিত করতে বলল রাষ্ট্রপুঞ্জও

অর্থনীতির হাল ফেরার দাবি থেকে না-সরলেও অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা মানছেন, মূল্যবৃদ্ধির হার সত্যিই চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে। অক্টোবর মাসে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ৭.৬১ শতাংশ ছুঁয়েছে। মোদী সরকারের ছয় বছরে মূল্যবৃদ্ধির হার এত চড়ায় ওঠেনি। মোদী প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার ঠিক আগে, ২০১৪-র মে মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার ৮.৩৩ শতাংশে পৌঁছেছিল। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দায়িত্ব মূল্যবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখা। তা খুব বেশি হলে ৬ শতাংশে যেতে পারে। কিন্তু সেই ঊর্ধ্বসীমাও ছাপিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে মূলত আনাজের দামকেই দায়ী করেছেন সীতারামন। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মনে করছে, পেট্রল-ডিজেলের উপর বাড়তি শুল্ক, আমদানি শুল্ক চাপানো এবং আনাজের জোগান ব্যবস্থায় ত্রুটিই এর কারণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন