the essential commoditiesnact

অত্যাবশ্যক পণ্য সংশোধনী বিল পাশ হওয়ায় পর আমজনতার উপর কী প্রভাব পড়ল, জেনে নিন

এ বার থেকে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া খাদ্যশস্য মজুতে আর কোনও বিধিনিষেধ থাকবে না। আনাজের মতো পচনশীল খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে দাম বেড়ে দ্বিগুণ হলে তবেই তা অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বলে ধরা হবে।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:২৩
Share:
০১ ১৪

অত্যাবশ্যক পণ্য আইন সংশোধনী বিল সংসদে পাশ হয়ে গেল। লোকসভায় আগেই হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গলবার বিরোধীরা রাজ্যসভার অধিবেশন বয়কট করার পরে বিনা বাধায় মোদী সরকার এই বিল পাশ করিয়ে নেয়।

০২ ১৪

এর ফলে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, গম, ভোজ্যতেল, তৈলবীজ অত্যাবশ্যক পণ্যের আওতা থেকে বাদ পড়ল। এই পণ্যগুলির যত ইচ্ছে মজুতের ছাড়পত্রেও আর কোনও নিষেধ থাকল না।

Advertisement
০৩ ১৪

পাশাপাশি, এ বার থেকে যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া খাদ্যশস্য মজুতে আর কোনও বিধিনিষেধ থাকবে না। আনাজের মতো পচনশীল খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে দাম বেড়ে দ্বিগুণ হলে তবেই তা অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বলে ধরা হবে। তার আগে নয়।

০৪ ১৪

চাল-ডাল-গমের ক্ষেত্রে দেড় গুণ দাম বাড়লে তবেই সরকার হস্তক্ষেপ করবে। অর্থাৎ ১০০ টাকা কেজি দরের মুগ ডালের দাম বেড়ে অন্তত ১৫০ টাকা না-হলে কেন্দ্রীয় সরকার আর মাথা ঘামাবে না। পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকা কেজি থেকে দ্বিগুণ বেড়ে ৮০ টাকা হলে তবেই সরকার পদক্ষেপ করবে। এই হিসেবের ক্ষেত্রে গত ১২ মাসের গড় বাজারদর ও গত পাঁচ বছরের গড় বাজারদরের মধ্যে যেটি কম, তাকে স্বাভাবিক দাম ধরা হবে।

০৫ ১৪

সরকারের যুক্তি, কালোবাজারি, মজুতদারি রুখতে ১৯৫৫ সালে অত্যাবশ্যক পণ্য আইন চালু হলেও এখন তাতে সংশোধন দরকার। খাদ্য ও গণবণ্টন প্রতিমন্ত্রী দানভে দাদারাও বলেন, ‘‘এতে চাষিদেরও লাভ, ক্রেতাদেরও লাভ।’’

০৬ ১৪

ব্রিটিশ জমানায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রথম কালোবাজারি ও মজুতদারি রুখতে আইন জারি হয়। পরে তা উঠেও যায়। স্বাধীন ভারতে কালোবাজারি, বেআইনি মজুতদারি রুখতে ১৯৫৫-সালে অত্যাবশ্যক পণ্য আইন জারি হয়।

০৭ ১৪

২০১৯, ২০২০-তেও আইনের প্রয়োগ করা হয়েছে। আইনে যে কোনও পণ্যকে অত্যাবশ্যক হিসেবে চিহ্নিত করে সরকার তার মজুতের ঊর্ধ্বসীমা জারি করতে পারে। নিয়ন্ত্রণ জারি করতে পারে ওই পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ ও বণ্টনে।

০৮ ১৪

কেন্দ্রের যুক্তি— চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজের মতো খাদ্যশস্য বা আনাজের মজুতে ঊর্ধ্বসীমা থাকায় কৃষিপণ্যের ব্যবসা করা বা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থাগুলির কাজ করতে সমস্যা হচ্ছিল। এখন মজুতের উপর বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় বেসরকারি সংস্থাগুলি হিমঘর, গুদাম তৈরি করবে।

০৯ ১৪

চাষিদের মান্ডিতেই ফসল বেচার বাধ্যবাধকতা উঠে যাওয়ায় বড় সংস্থাগুলি সরাসরি চাষিদের থেকে ফসল কিনবে। অন্যদিকে, বিরোধী শিবির ও কৃষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, অম্বানী-আদানিদের সুবিধা করে দিতেই মোদী সরকার লকডাউনের মধ্যেই কৃষি ক্ষেত্রে তিন অধ্যাদেশ জারি করেছিল।

১০ ১৪

অন্যদিকে সরকারের যুক্তি, ১৯৫৫ সালে আইন প্রণয়নের সময় খাদ্য সঙ্কট ছিল দেশে। বিদেশ থেকে আমদানি করতে হত। কিন্তু এখন দেশে উৎপাদন বহু গুণ বেড়েছে। আমদানির বদলে এখন খাদ্যশস্য রফতানি করে ভারত। প্রতি বছর খাদ্য উদ্বৃত্ত থেকে যায়। কোনও মরসুমে উৎপাদন বেশি হলে মার খান চাষিরা। এই সব কারণেই অত্যবশ্যক পণ্য আইনে বদল আনা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পডে়ছিল।

১১ ১৪

সঙ্গে সরকারপক্ষের আরও বক্তব্য, এই সব খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সরকার এই সব পণ্যের মজুত, বিক্রি বা অন্যান্য বিষয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হিসেবে অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধি, যুদ্ধ,দুর্ভিক্ষ, ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে সংশোধনীতে।

১২ ১৪

সংশোধনীতে মজুতের ঊর্ধ্বসীমা তুলে নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের দাবি, এর ফলে ফসল উৎপাদনের পর যত সম্ভব মজুত করা যাবে। চাষিদের ফসল নষ্ট বা কম দামে বিক্রির সম্ভাবনা কমবে। এই সংশোধনীতে কৃষক ও উপভোক্তা, দু’পক্ষেরই সুবিধা হবে।

১৩ ১৪

সরকারের এই বক্তব্য বিরোধীদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তাদের বক্তব্য,বেসরকারি সংস্থা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি)-র থেকে কম দরে ফসল কিনতে পারবে না, এই মর্মে সরকার শর্ত বেঁধে দিক। বিরোধীদের আক্রমণ ভোঁতা করতে কেন্দ্র সোমবারই তড়িঘড়ি রবি ফসলের এমএসপি ঘোষণা করে দিয়েছিল। কিন্তু চাষিরা তাতে খুশি নন বলে জানিয়েছেন।

১৪ ১৪

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজকর্মীদের মত, সরকার চাইছেন কৃষিকাজ লাভজনক হোক এবং কৃষকের রোজগার দ্বিগুণ হোক। অন্যদিকে যাঁরা বিরোধিতা করছেন,তাঁদের আশঙ্কা, বিপণন যেহেতু সম্পূর্ণ লগ্নিভিত্তিক, এতে কৃষক কোথাও নেই, তাই এর লাভ পুরোটাই কর্পোরেটের ঘরে যাবে। এই শঙ্কা যদি সত্যি প্রমাণিত হয়, তা হলে কিন্তু সরকার যা করতে চাইছেন, বাস্তবে ঠিক তার উল্টোটি হবে এবং ব্যাপক জনরোষ সৃষ্টি হবে। সেরকমই ধারণা বিভিন্ন মহলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement