ইস্তফা দিতেই হল খাড়সেকে, হবে তদন্তও

প্রধানমন্ত্রীর ‘দাবিপূরণ’ করতে সরানো হল মহারাষ্ট্রের রাজস্বমন্ত্রী একনাথ খাড়সেকে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৬ ০৩:৫৩
Share:

একনাথ খাড়সে

প্রধানমন্ত্রীর ‘দাবিপূরণ’ করতে সরানো হল মহারাষ্ট্রের রাজস্বমন্ত্রী একনাথ খাড়সেকে।

Advertisement

দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন দেওয়ার অঙ্গীকার করে আসছিলেন নরেন্দ্র মোদী, ‘‘না খায়ুঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’’ (না খাব, না খেতে দেব)। গত দু’বছরে বিরোধীরা বিজেপির কোনও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেননি এমন নয়। খোদ নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধেও গুজরাতের গ্যাস কেলেঙ্কারি নিয়ে সরব কংগ্রেস। কিন্তু এই প্রথম প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত রেখে মোদীর ভাবমূর্তি অটুট রাখতে মন্ত্রীপদ থেকে সরতে হল কাউকে। আজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীসের সঙ্গে দেখা করে ইস্তফা দেন খাড়সে।

সম্প্রতি জোড়া অভিযোগ ওঠে খাড়সের বিরুদ্ধে। ক’দিন আগে আম আদমি পার্টির তরফে অভিযোগ তোলা হয়, খাড়সের একটি মোবাইল নম্বর থেকে করাচিতে দাউদ ইব্রাহিমের নম্বরে কথা বলা হয়েছে। মহারাষ্ট্র পুলিশের সন্ত্রাস-দমন শাখা অবশ্য সে যাত্রায় খাড়সেকে ক্লিনচিট দিয়েছিল। কিন্তু তার ক’দিনের মাথায় যখন দুর্নীতির অভিযোগ উঠল, তখন তার ঝড় আছড়ে পড়ে দিল্লিতেও। বিরোধীদের দাবি, রাজস্বমন্ত্রী পদের অপব্যবহার করে নিজের স্ত্রী ও জামাইয়ের নামে একটি সরকারি জমি সস্তায় কিনেছেন খাড়সে। ওই জমির বাজারমূল্য ত্রিশ কোটি টাকা। কিন্তু খাড়সে তা চার কোটি টাকায় কিনেছেন। এতে সরাসরি মোদীর দিকেও আঙুল ওঠে।

Advertisement

কেন্দ্রীয় সরকারের দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী থেকে গোটা বিজেপি শিবির সাফল্যের তালিকার শীর্ষে রেখেছে দুর্নীতিমুক্ত সরকার দেওয়াকেই। তার মধ্যেই বিজেপি শাসিত রাজ্যে এমন একটি দুর্নীতির অভিযোগে নড়েচড়ে বসেন প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রিপোর্টও চাওয়া হয়। সে সব খতিয়ে দেখার পরেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে খাড়সেকে জানিয়ে দেওয়া হয়,

তাঁর ইস্তফা দেওয়া ছাড়া আর কোনও গতি নেই।

এর আগে মহারাষ্ট্রেই প্রয়াত গোপীনাথ মুণ্ডের কন্যা পঙ্কজার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু সে অভিযোগ ধোপে টেকেনি। বিরোধীরা ললিত মোদী কাণ্ডে সুষমা স্বরাজ, বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সংসদ অচল রেখেছিলেন। মধ্যপ্রদেশের ব্যপম কাণ্ড নিয়েও উত্তাল হয় সংসদ। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে তা মোকাবিলা করতে সমর্থ হয়েছিল বিজেপি। সুষমার বিরুদ্ধে সেই অর্থে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল না। তবে বিজেপি নেতারাই এ বারে মানছেন, প্রাথমিক ভাবে খাড়সের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা দেখা যাচ্ছে।

খাড়সের দিকে কিছু বিধায়ক আছেন। তাঁর জনভিত্তিও আছে। রাজস্বমন্ত্রীর সমর্থকরা যাতে বিদ্রোহী না হন, সেই চেষ্টাও করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাই আজ ইস্তফা দেওয়ার পরে খাড়সের সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি। ওই বৈঠকে খাড়সে দাবি করেন, তিনি কোনও ভুল করেননি। অচিরেই সেটি প্রমাণ হয়ে যাবে।

বিরোধীরা ইস্তফার পরও নিশানা করছে মোদীকে। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘ইস্তফার নাটক করে লাভ নেই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘খাড়সেকে দেশবিরোধী কাজের জন্য গ্রেফতার করতে হবে। দুর্নীতির তদন্ত করাতে হবে বিচারবিভাগীয় কমিশন দিয়ে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন