নির্বাচন কমিশনে মুলায়ম

সাইকেল দিন, ছেলেকেই দেব

বৃদ্ধের মুখে কথাটা শুনে চমকে গিয়েছিলেন সকলেই— সাইকেলটা আমাকে দিন, আমি তো ওটা টিপুকেই দেব!উত্তরপ্রদেশের যাদব-কুলপতি গত তিন সপ্তাহে যত বার ডিগবাজি খেয়েছেন, তার হিসেব রাখতে পারছেন না তাঁর অতি-ঘনিষ্ঠেরাও! এমনিতেই রাজনীতির ময়দানে ডিগবাজির জন্য খ্যাতি রয়েছে মুলায়ম সিংহ যাদবের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২০
Share:

নির্বাচন কমিশন থেকে বেরিয়ে আসছেন মুলায়ম সিংহ যাদব। শুক্রবার দিল্লিতে। ছবি: প্রেম সিংহ।

বৃদ্ধের মুখে কথাটা শুনে চমকে গিয়েছিলেন সকলেই— সাইকেলটা আমাকে দিন, আমি তো ওটা টিপুকেই দেব!

Advertisement

উত্তরপ্রদেশের যাদব-কুলপতি গত তিন সপ্তাহে যত বার ডিগবাজি খেয়েছেন, তার হিসেব রাখতে পারছেন না তাঁর অতি-ঘনিষ্ঠেরাও! এমনিতেই রাজনীতির ময়দানে ডিগবাজির জন্য খ্যাতি রয়েছে মুলায়ম সিংহ যাদবের। শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের সামনে ফের নিজের ‘সুনাম’ বজায় রাখলেন তিনি! যদিও তাতে লাভ হল না। কমিশন জানিয়েছে, ১৭ জানুয়ারি থেকে উত্তরপ্রদেশে প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তার আগেই, অর্থাৎ আগামী তিন দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাবে কমিশন।

সমাজবাদী পার্টির প্রতীক ‘সাইকেল’ কার দখল থাকবে, তা নিয়ে ছেলে অখিলেশ যাদবের দাবি ওড়াতে এ দিন নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত শুনানিতে নিজেই এসেছিলেন মুলায়ম। সেখানেই কমিশনকে তিনি জানান, তাঁর সঙ্গে ছেলের কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু তিনি যে হেতু দলের মার্গদর্শক, তাই তাঁর হাতেই তুলে দেওয়া হোক দলের প্রতীক। যা তিনি তুলে দেবেন ছেলের হাতে।

Advertisement

মুলায়ম এই কথা বলে আসলে এই লড়াই থেকে পিছিয়ে এসেছেন এবং সমস্যা মিটে গেছে বলে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেছেন। কিন্তু অখিলেশ-শিবিরের বক্তব্য, মুলায়মের এই ডিগবাজি আসলে প্রতীক হাতে রাখার কৌশলী চাল। ১ জানুয়ারি অখিলেশ বাবাকে সরিয়ে সর্বভারতীয় সভাপতির দায়িত্ব নেন। মুলায়মকে দলের মার্গদর্শক মণ্ডলীর সদস্য করেন তিনি। অখিলেশের সেই অস্ত্রেই তাঁকে মাত করতে চেয়েছেন মুলায়ম।

মধ্যাহ্নভোজনের পরে ফের শুনানি শুরু হলে অখিলেশ-শিবিরের তরফে কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী কপিল সিব্বল কমিশনকে জানান, মুলায়ম দলের প্রতিষ্ঠাতা হলেও এই মুহূর্তে দলের কোনও প্রশাসনিক পদে নেই। তাঁর পরিবর্তে সর্বভারতীয় সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছেন অখিলেশ। তাই মুলায়মের ওই প্রতীক পাওয়ার কোনও অধিকার নেই। অখিলেশই যে এখন সপা’র সর্বগ্রাহ্য নেতা, তার প্রমাণ হিসেবে দলের অধিকাংশ বিধায়ক, সাংসদ ও নেতাদের দেওয়া হলফনামা কমিশনের সামনে ফের তুলে ধরা হয়। সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার বৈঠক শেষে সিব্বল বলেন, ‘‘অখিলেশের কেন সাইকেল প্রতীক পাওয়া উচিত, তা কমিশনের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এখন কমিশন কী করে, দেখা যাক।’’

এ দিনের শুনানিতে আসেননি অখিলেশ। ভরসা রেখেছিলেন রামগোপাল যাদব, নরেশ অগ্রবাল, কিরণময় নন্দের উপরে। মুলায়ম কিন্তু অসুস্থতা সত্ত্বেও কমিশনে পৌঁছে যান সকাল সকাল। মুলায়ম-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, অখিলেশ তাঁর সেনাপতিদের উপর ভরসা করলেও শিবপাল-অমর সিংহের উপরে মুলায়মের ভরসা নেই। সপা-র একটি মহলের বক্তব্য, মুলায়ম যতই স্মৃতিভ্রংশের শিকার হলেও দিব্যি বুঝতে পারছেন যে, শিবপাল-অমর সিংহদের হাতে বিষয়টা ছেড়ে দিলে ছেলের সঙ্গে বাকি সম্পর্কটুকুও ঘুচে যাবে! তাই আজ চূড়ান্ত শুনানিতে নিজে উপস্থিত হয়ে এই বার্তা দিতে ভোলেননি যে, ছেলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে ফাটল নেই। সমস্যা যা আছে, তা প্রশাসনিক স্তরে। তিনি যে ছেলেকেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে দেখতে চান, সেই বার্তাও আজ ফের দিয়েছেন মুলায়ম।

কমিশন সূত্র বলছে, দু’পক্ষ নিজেদের পক্ষে যে যুক্তি দিয়েছে, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত ন্যায্য বিচার কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয়ে অখিলেশ-শিবির। তাঁদের আশঙ্কা, শেষ পর্যন্ত কমিশন সাইকেল প্রতীক কারও হাতে না দিয়ে সাময়িক ভাবে বাজেয়াপ্ত করবে। ওই সিদ্ধান্তকে বিজেপি প্রভাবিত করতে পারে বলেও আশঙ্কা অখিলেশ শিবিরের। তাই সড়কে ‘মোটর সাইকেল’ ছোটানোর প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছেন অখিলেশ-রামগোপালেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন