শেষ পর্যন্ত চ্যালেঞ্জের দিনক্ষণ ঘোষণা করেই দিল নির্বাচন কমিশন। চ্যালেঞ্জ— ইভিএম হ্যাক করার। কমিশন জানিয়েছে, ইলেকট্রনিক ভোটযন্ত্রে কারচুপি করা সম্ভব বলে যে রাজনৈতিক দলগুলি বিশ্বাস করে, তারা যেন আগামী ৩ জুন কমিশনের সদর দফতরে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। তিন সদস্যের এক-একটি দল ইভিএমে কারচুপি করার জন্য চার ঘণ্টা করে সময় পাবে। আজ মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী অবশ্য ফের বলেছেন, ‘‘ইভিএম হ্যাকিং অসম্ভব। ভাইরাস দিয়ে বা বাইরে থেকে কোনও ভাবেই এতে কারচুপি করা যায় নয়। এ সব কারচুপির চেষ্টা হলেই ইভিএম বিকল হয়ে যায়।’’
উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন হওয়া ইস্তক ইভিএমে কারচুপির অভিযোগে সরব বিরোধীরা। এমনকী তার পরেও অসমে সর্বসমক্ষে ইভিএম নিয়ে ‘মক’ ভোটের সময়ে বিজেপির ঘরে ভোট পড়তে দেখা গিয়েছে। ফলে এক সময়ে টি এন শেষনের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়ানো নির্বাচন কমিশনই গত বেশ কিছু দিন ধরে বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণে একাধিক বিবৃতি দিয়েছে, সর্বদলীয় বৈঠক করেছে। আজ অবশ্য বিরোধীদের দু’দফা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে কমিশন—
চ্যালেঞ্জ ১: ‘ভোট’ শুরুর আগে বা ভোট চলাকালীন ইভিএমে কারচুপি করে দেখাতে হবে প্রতিযোগীকে। বাস্তবে যে ভাবে পাহারা ও নজরদারির মধ্যে ভোট হয়, কমিশনের প্রতিযোগিতার দিনে সে ভাবেই নকল ভোট হবে। ইভিএম এবং তার কন্ট্রোল ইউনিটের বোতাম ইচ্ছেমতো ব্যবহার করতে পারবে প্রতিযোগীরা। মোবাইল, ব্লু-টুথ বা অন্য কোনও
যন্ত্র ব্যবহারেও ছাড় রয়েছে।
চ্যালেঞ্জ ২: ভোট হয়ে যাওয়ার পরে ইভিএম ও কন্ট্রোল ইউনিটে কারচুপি করে ফল পাল্টে দেখাতে হবে। ভোটগ্রহণের পরে পাসওয়ার্ড দিয়ে ইভিএম লক করে দেওয়া হয়। প্রতিযোগীদের বলা হয়েছে, পাসওয়ার্ড ভেঙে ইভিএমের বোতাম বা যে কোনও রকম যন্ত্র ব্যবহার করে ফল পাল্টাতে হবে তাঁদের।
উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন ঘিরে যে হেতু অভিযোগ, তাই ওই রাজ্যগুলিতে ব্যবহৃত ইভিএম-গুলিকেই এই প্রতিযোগিতায় কাজে লাগানো হবে। প্রতিটি টিমকে চারটি করে ইভিএম ও কন্ট্রোল ইউনিট দেওয়া হবে। বেছে নেওয়া যাবে পছন্দসই রাজ্য, বিধানসভা বা এলাকার ইভিএম। আগামী ২৬ মে-র মধ্যে নাম লেখানো যাবে প্রতিযোগিতায়। কোনও বিদেশি প্রযুক্তিবিদকে দলে নেওয়া যাবে না। আর কোনও ভাবেই ইভিএম ও কন্ট্রোল ইউনিটের মাদারবোর্ড পাল্টানো বা নতুন যন্ত্র লাগানো যাবে না। জৈদীর কথায়, ‘‘যে মুহূর্তে মাদারবোর্ড পাল্টানো হচ্ছে বা অন্য কোনও যন্ত্র বসানো হচ্ছে, তখনই সেটি আর কমিশনের নিয়ম মেনে তৈরি হওয়া ইভিএম থাকছে না। ফলে তার দায়ও কমিশনের নয়।’’
সম্প্রতি দিল্লি বিধানসভায় নকল ইভিএম হ্যাক করে দেখান আপ বিধায়ক সৌরভ ভরদ্বাজ। আজ আপ নেতা সঞ্জয় সিংহ বলেছেন, ‘‘কমিশনের উচিত, প্রতিযোগীদের ইভিএম যন্ত্রগুলি খুলতে দেওয়া। চ্যালেঞ্জ যখন, তখন সব রকম ছাড় থাকা উচিত।’’ সত্যিই যদি কেউ ইভিএম হ্যাক করে ফেলে? এই প্রশ্নের জবাবে কমিশন বলেছে, প্রতিযোগিতার থেকেও এটি আসলে নির্বাচনী ব্যবস্থা মজবুত করার লড়াই।