পাক বাহিনীর নামানো সেই ড্রোন।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তাপ কমাতে পারল না খুশির ইদও। সেইসঙ্গে গুপ্তচর ড্রোন বিমান নিয়ে বিতর্কে প্যাঁচে পড়ল ইসলামাবাদ। অপ্রত্যাশিত ভাবেই ওই বিতর্কে ভারতের অবস্থানের সমর্থন পাওয়া গিয়েছে চিন থেকে।
সীমান্তে গত কয়েক দিন ধরেই চলছে গুলিবর্ষণ। দু’দিন আগে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতের একটি গুপ্তচর ড্রোন বিমানকে গুলি করে নামানোর দাবি করেছিল পাক বাহিনী। দিল্লির তরফে তখনই জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই ধরনের ড্রোন ভারতীয় সেনা ব্যবহার করে না। চিনে তৈরি ওই ড্রোন আসলে পাকিস্তানের পঞ্জাব পুলিশের। ভুল করে নিজেদের ড্রোনকেই গুলি করে এখন ভারতের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাইছে পাকিস্তান। চিন-পাকিস্তানের নিরাপত্তা সহযোগিতা গভীর। তাই এই ধরনের বহু চিনা অস্ত্র ও উপকরণ পাক বাহিনী ব্যবহার করে বলে দাবি ভারতীয় গোয়েন্দাদের।
আজ কার্যত ভারতের অবস্থানকেই সমর্থন করেছে চিনের সরকারি মুখপত্র ‘পিপলস ডেইলি’। তাতে বলা হয়েছে, ওই ধাঁচের ড্রোন কেবল চিনেই তৈরি হয়। সংবাদপত্রটির মতে, ফ্যান্টম-৩ নামে ওই ড্রোন এখনও পর্যন্ত তৈরি এই ধরনের বিমানগুলির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ও সহজলভ্য। এই ধরনের একটি ড্রোনের দাম ১,২০০ মার্কিন ডলার। স্বভাবতই চিনা সরকারি সংবাদপত্রের এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করেছে দিল্লি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘পাকিস্তান যে প্রতিটি পদে মিথ্যা কথা বলে তা আজ ফের প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। আর সেই প্রমাণ এসেছে এমন একটি দেশ থেকে যারা পাকিস্তানের মিত্র-রাষ্ট্র বলেই পরিচিত।’’
বাগযুদ্ধের পাশাপাশি আজ অব্যাহত থেকে ভারত-পাক সীমান্তে সংঘর্ষও। তার জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সৌজন্য। সাধারণত এই দিনে সীমান্তে মিষ্টি বিনিময় করে থাকে দু’দেশই। আজ ভারতের পক্ষ থেকে পাঠানো মিষ্টিই শুধু প্রত্যাখ্যান নয়, উল্টে জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে ভারতের একাধিক সেনা চৌকি লক্ষ্য করে দিনভর গুলি চালায় পাক রেঞ্জার্স। হামলা থেকে রক্ষা পায়নি সীমান্ত সংলগ্ন একাধিক গ্রামও। পুঞ্চ সেক্টরে পাক বাহিনীর মর্টার হামলায় শাহপুর কসবা গ্রামের পাঁচ জন গ্রামবাসী আহত হন। সেনা সূত্রে বলা হয়েছে, আহতেরা ইদের নমাজের পরে মধ্যাহ্নভোজনের আয়োজন করছিলেন। তখনই পাক বাহিনীর গোলা এসে পড়ে গ্রামের একটি মাজার চত্বরে। আহত হন পাঁচ জন। গুলি চলেছে জম্মুর কারনি সেক্টরেও। নয়াদিল্লির দাবি, গত বারো ঘণ্টায় মোট চার বার পাক বাহিনী সংঘর্ষবিরতি ভেঙে গুলি চালিয়েছে।
ইদের দিন হিংসা দেখেছে কাশ্মীরের অন্য এলাকাও। ইদের নমাজের পরে আজ কাশ্মীরে দফায় দফায় নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। শ্রীনগরের ইদগাহ এলাকায় নমাজের পরেই বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে এক দল যুবক। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়েন জওয়ানেরা। তাতে এক মহিলা, এক কিশোরী ও সাত বছরের এক বালক-সহ মোট চার জন আহত হয়েছেন। শ্রীনগরের অন্য অংশ এবং অনন্তনাগ-সহ রাজ্যের অন্যান্য এলাকাতেও পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। বহু জায়গায় দেখা গিয়েছে পাকিস্তানি ও জঙ্গি সংগঠন আইএস ও লস্করের পতাকা। ইদের দিনে পাক মদতেই ভূস্বর্গে উত্তেজনা বাড়ানোর চেষ্টা হয়েছে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।
রাশিয়ার উফায় দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর প্রথমে ভাবা হয়েছিল, দু’দেশের সীমান্তে উত্তেজনা এ বার কমে আসবে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে ঠিক উল্টো। সাউথ ব্লকের মতে, উফার যৌথ বিবৃতিতে কাশ্মীর প্রসঙ্গ না থাকায় চাপে পড়ে যায় নওয়াজ শরিফ সরকার। ফলে ঘরোয়া রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় ইসলামাবাদকে ভারত প্রশ্নে কড়া অবস্থান নিতে হয়। যে কারণে সীমান্তে আগ্রাসন দেখাতে শুরু করে পাক সেনা। প্রথমে চুপ থাকলেও, পরে পাক সেনার হামলার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে ভারতও।
এরই মধ্যে এসে পড়ে ইদ। সাধারণত প্রতি বছর এই দিনে সীমান্তে গুলি বিনিময় বন্ধ রাখে উভয় পক্ষই। জম্মু-কাশ্মীর ও পঞ্জাব সীমান্তে নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিনিময় করে সেনা ও আধাসেনা। এ বছর কী করা হবে তা ঠিক করতে গত কাল একটি শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক হয় নয়াদিল্লিতে। ঠিক হয়, জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে বিনা প্ররোচনায় পাক রেঞ্জার্স যে ভাবে গুলি চালাচ্ছে তার প্রতিবাদে ওই সীমান্তে মিষ্টি বিনিময় বন্ধ থাকবে। কিন্তু ওয়াঘা সীমান্তে পাক বাহিনীকে প্রথামাফিক মিষ্টি পাঠানো হবে।
সেই নির্দেশ মতোই আজ ওয়াঘা সীমান্তে পাক বাহিনীকে মিষ্টি উপহার দিতে গেলে তারা তা নিতে অস্বীকার করে। বিএসএফের ডিআইজি (অমৃতসর রেঞ্জ) এম এফ ফারুকি বলেন, ‘‘ইদের দিনে দু’পক্ষের মধ্যে মিষ্টি বিনিময় করাটা দীর্ঘদিনের প্রথা। কিন্তু এ বার আট্টারি-ওয়াঘা সীমান্তে মোতায়েন পাক রেঞ্জার্স তা নিতে অস্বীকার করে।’’ উপহার প্রত্যাখ্যানের কারণ অবশ্য কিছু জানায়নি পাক প্রশাসনও। উল্টে বিএসএফের বিরুদ্ধে কাশ্মীরের নেজাপির সেক্টরে গুলি চালানোর অভিযোগ এনেছে ইসলামাবাদ। ২০১৪-য় ভারত-পাক সীমান্ত সংঘর্ষের সময়েও ওয়াঘায় মিষ্টি বিনিময় বন্ধ ছিল।