বেশির ভাগ কমোড অচল, অনভ্যাসের বায়ো টয়লেট নিয়ে বিড়ম্বনায় রেল

এই বিড়ম্বনার মূলে আছে আধুনিক প্রযুক্তির জৈব শৌচাগার ব্যবহারের বিধি না-মানা। রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, নতুন ওই শৌচাগারের কমোডে কোনও জিনিস ফেললেই জলের সঙ্গে সেটি গিয়ে সাইফন পাইপে আটকে যায়। ফলে নোংরা ট্যাঙ্কের ভিতরে না-গিয়ে কমোডের উপরের দিকে উঠে আসে।

Advertisement

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৭ ১১:০০
Share:

অনভ্যাসের ফোঁটা কতটা চড়চড় করে, কয়েকটি ট্রেনে দূষণমুক্ত ‘বায়ো টয়লেট’ বা জৈব শৌচাগার চালু করে রেল সেটা বিলক্ষণ টের পাচ্ছে।

Advertisement

ওই শৌচাগার ব্যবহার করতে গিয়ে এক শ্রেণির যাত্রী যা করছেন, তাতে রেলকর্তাদের কেউ কেউ তিতিবিরক্ত। তাঁদের বক্তব্য, অনভ্যাসের দোহাই দেওয়ার থেকে কমোডে আজেবাজে জিনিস ফেলে শৌচাগার অচল করে দেওয়াটাকে বদভ্যাস বলাই ভাল!

ট্রেনের নিত্য-অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের অন্ত নেই। সেই অভিযোগের আংশিক সুরাহা করতে এবং দূষণ ঠেকাতে বছর দুয়েক হল কিছু ট্রেনের কামরায় দূষণমুক্ত ‘বায়ো টয়লেট’ বা জৈব শৌচাগার দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাতে শুরু হয়েছে এক নতুন বিপত্তি। ওই শৌচাগারের কমোডের ভিতরের নোংরা মাঝেমধ্যেই উপচে উঠে আসছে বাইরে। সেটা দেখে অনেকেই আর ওই শৌচাগারে যেতে চাইছেন না। কখনও কখনও অবস্থা এতটাই খারাপ হচ্ছে যে, অনেকে বলছেন, ‘অসুস্থ হওয়ার চেয়ে পুরনো শৌচাগার ব্যবহার করাই ভাল।’ অনেকে আবার ট্রেনের অন্য কামরার সাধারণ শৌচাগারই ব্যবহার করছেন।

Advertisement

এই বিড়ম্বনার মূলে আছে আধুনিক প্রযুক্তির জৈব শৌচাগার ব্যবহারের বিধি না-মানা। রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, নতুন ওই শৌচাগারের কমোডে কোনও জিনিস ফেললেই জলের সঙ্গে সেটি গিয়ে সাইফন পাইপে আটকে যায়। ফলে নোংরা ট্যাঙ্কের ভিতরে না-গিয়ে কমোডের উপরের দিকে উঠে আসে। এই বিপত্তি রোধে শৌচাগারের ভিতরে-বাইরে স্টিকার লাগিয়ে যাত্রীদের সতর্ক করছে রেল। তা সত্ত্বেও এক শ্রেণির যাত্রী গুটখা, পানমশলা, সিগারেটের প্যাকেট, স্যানিটারি ন্যাপকিন ফেলছেন কমোডে। এ-সব আবর্জনা সাইফনে আটকে বিপত্তি ডেকে আনছে। রেলকর্তাদের পর্যবেক্ষণ, জৈব শৌচাগারের বহুল ব্যবহার এখনও শুরু হয়নি। তাই সচেতনতার অভাবেই এক শ্রেণির যাত্রী কমোডে টুকিটাকি জিনিস ফেলে সমস্যা ডেকে আনছেন। আর এক শ্রেণির যাত্রী আছেন, যাঁরা সব জেনেও পানমশলার প্যাকেট, পোড়া সিগারেট ইত্যাদি ফেলছেন কমোডে।

ট্রেনের শৌচাগারের মলমূত্র এত দিন সরাসরি পড়ত রেললাইনের উপরে। তাতে দূষণ ছড়াত। পরিবেশ-দূষণ তো হতোই। সেই সঙ্গে ওই নোংরায় থাকা অ্যাসিড মাটির সঙ্গে মিশে গিয়ে তাকে ঝুরঝুরে করে দিচ্ছিল। তার ফলে মাঝেমধ্যে লাইনে ধস নামার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছিল। এই সব বিপত্তি ঠেকাতেই ট্রেনে বায়ো টয়লেট বসানোর পরিকল্পনা করে রেল মন্ত্রক। ওই টয়লেটে কমোডের পাইপের সঙ্গে ট্রেনে নীচে জোড়া রয়েছে একটি ট্যাঙ্ক। সেই ট্যাঙ্কে দু’টি খোপ। একটি খোপে রয়েছে এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া (অ্যানেরোবিক), যা জলের সব নোংরাকে খেয়ে ফেলে। তার পরে যে-জল পড়ে থাকে, তা নিয়ে যাওয়া হয় পাশের খোপে। সেখানে জলকে দূষণমুক্ত করে বাইরে বার করে দেওয়া হয়। ফলে এই টয়লেট থেকে দূষণ ছড়ায় না। বিমান থেকে শুরু করে সারা বিশ্বেই ট্রেন ও বিমানের শৌচাগারে এখন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

স্বচ্ছ ভারত কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে রেলকে পরিচ্ছন্ন করতে রাজধানী, শতাব্দী ও দুরন্ত এক্সপ্রেসের পরে সাধারণ মেল এবং এক্সপ্রেস ট্রেনেও বায়ো টয়লেট দেওয়া হচ্ছে। এ বছর বাজেটে বায়ো টয়লেট তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লক্ষ। কিন্তু ওই শৌচাগারের ঠিকঠাক ব্যবহার না-হওয়ায় সমস্যায় পড়ছেন আমযাত্রীরাই। ওই কমোডের সাইফন এক বার আটকে গেলে সেই শৌচাগার আর ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, এই নতুন প্রযুক্তির শৌচাগার সর্বত্র পরিষ্কার করাও সম্ভব নয়। যে-সব স্টেশনে পরিকাঠামো রয়েছে, শুধু সেখানেই ওগুলো সাফসুতরো করা যায়। ফলে কোনও ট্রেনের জৈব শৌচাগার সাফ করে ফের সুষ্ঠু ভাবে চালু করতে অনেক সময় লাগে। তাই যাত্রীদের সচেতনতা দরকার দু’দিক থেকে। প্রথমত, দূষণ রোধে যথাসম্ভব বেশি মাত্রায় এই শৌচাগার ব্যবহার করতে হবে পরিবেশের স্বার্থেই। দ্বিতীয়ত, অনভ্যাস বা বদভ্যাস থেকে কমোডে যে-ভাবে জিনিসপত্র ফেলা হচ্ছে, সেটা বন্ধ করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন