(বাঁ দিক থেকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প, নরেন্দ্র মোদী এবং ভ্লাদিমির পুতিন। —ফাইল চিত্র।
রাশিয়া থেকে তেল এবং জ্বালানি আমদানির জন্য ভারতের উপর জরিমানা ধার্য করার কথা জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে পরিসংখ্যান বলছে, ট্রাম্পের এই ঘোষণার অনেক আগে থেকেই রাশিয়া থেকে তেল আমদানির পরিমাণ কমিয়েছে ভারতের সংস্থাগুলি। ভারতের আমদানি করা তেলের অধিকাংশই আসে জলপথে। জলপথে তেলের ট্যাঙ্কারগুলির উপর নজরদারি চালানো বিশ্লেষণকারী সংস্থা কেপলারের দেওয়া পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ জানিয়েছে, জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে রাশিয়া থেকে ২৪ শতাংশ কম তেল আমদানি করেছে ভারতের সংস্থাগুলি। গত বছরের জুলাই মাসের সঙ্গে তুলনা করলে তা ২৩.৫ শতাংশ কম।
জুলাই মাসে কত পরিমাণ তেল আমদানি করা হবে, তা মে কিংবা জুন মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত করে ফেলে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি সংস্থাগুলি। অর্থাৎ, ট্রাম্পের ঘোষণা, হুমকি-হুঁশিয়ারির আগেই ভারতের সংস্থাগুলি মস্কোর কাছ থেকে তেল কম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ থেকে খুব বেশি পরিমাণে তেল কেনার পথে হাঁটছে না সংস্থাগুলি।
অভ্যন্তরীণ বাজারে বিপুল চাহিদার জন্য ভারত ৮৫ শতাংশ তেল বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে থাকে। মোট চাহিদার ৩৫ শতাংশই আসে রাশিয়া থেকে। এই পরিসংখ্যান অবশ্য মে মাসের। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে রাশিয়ার উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলি। মস্কোকে ‘ভাতে মারতে’ অন্য দেশগুলিকেও রাশিয়া থেকে তেল না কেনার পরামর্শ দেয় তারা। তবে এই চাপের মুখেও ‘বিশ্বস্ত বন্ধু’ রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল কেনা অব্যাহত রেখে গিয়েছিল ভারত। কোণঠাসা রাশিয়ার তরফে ক্রেতাদের জন্য ছাড়ও দেওয়া হয়েছিল। তবে সেই ছাড়ের পরিমাণ সম্প্রতি কমিয়েছে রাশিয়া। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের তরফে তেমনটাই জানানো হয়েছে। এই কারণে ভারতের চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা (ইন্ডিয়ান অয়েল, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম, ভারত পেট্রোলিয়াম এবং ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারি পেট্রোকেমিক্যাল লিমিটেড) রাশিয়ার থেকে মুখ ফিরিয়ে পশ্চিম এশিয়া এবং পশ্চিম এশিয়ার দেশ থেকে অশোধিত তেল আমদানি করছে বলে জানিয়েছিল রয়টার্স।
‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর প্রতিবেদনে এক বিশেষজ্ঞকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, ট্রাম্পের জরিমানা চাপানোর ঘোষণার আগে থেকে ভারতের উপর একাধিক কূটনৈতিক চাপ তৈরি করছে আমেরিকা। পারিপার্শ্বিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি মাথায় রেখেই তাই ভারতের সংস্থাগুলি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি। মস্কো-নির্ভরতা কমানোর নেপথ্যে যত না বেশি অর্থনৈতিক কারণ, তার চেয়ে বেশি ভূরাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলেই দাবি তাঁর। তবে পশ্চিম এশিয়ার অন্তত তিনটি দেশ থেকে তেলের জোগান স্বাভাবিক রয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে সংবাদ সংস্থা এএনআই সরকারি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ভারতে আমেরিকার তেল আমদানি গত বছরের তুলনায় ৫১ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। তার জন্য নাকি খরচ হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ওই সরকারি সূত্রের দাবি, ২০২৪ সালের প্রথম ছ’মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন) আমেরিকা থেকে ভারত দিনপ্রতি ১.৮ লক্ষ ব্যারেল হিসাবে খনিজ তেল আমদানি করেছিল। ২০২৫ সালের ওই একই সময়ে আমদানি পৌঁছে গিয়েছে দিনে ২.৭১ লক্ষ ব্যারেল। আরও বিশদে পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখলে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন তেল আমদানি সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এপ্রিল থেকে।
ভারতের চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রাশিয়া থেকে খনিজ তেল কেনা স্থগিত রেখেছে— সূত্র মারফত খবর পেয়েই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘আমি বুঝতে পারছি, ভারত আর রাশিয়া থেকে তেল কিনবে না। আমি অন্তত সেটাই শুনেছি, সত্যি কি না জানি না। এটা একটা ভাল সিদ্ধান্ত। দেখা যাক কী হয়।’’ শুক্রবার অবশ্য এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল সাংবাদিকদের জানান, এমন কোনও পদক্ষেপ সম্পর্কে কেন্দ্র অবহিতই নয়। রাশিয়া থেকে তেল কেনার বিষয়ে পূর্বের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন রনধীর। বলেন, ‘‘বাজারে কে কী দাম নিচ্ছে এবং সার্বিক বিশ্ব পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে আমরা আমাদের জ্বালানির চাহিদা পূরণ করে থাকি।’’