Demonetization

গোলাপি নোটেই বাজারে তিন লক্ষ কোটি কালো টাকা, দাবি মোদী সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টার

মোদী সরকারের প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কে ভি সুব্রহ্মণ্যনের মতে, বাজারে এখন ৩.৬ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের ২০০০ টাকার নোট রয়েছে। বাজারে ২০০০ টাকায় লেনদেন কমে গিয়েছে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৩ ০৮:১৮
Share:

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ৩১ মার্চ পর্যন্ত হিসেবে, বাজারে ৩.৬২ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের ২০০০ টাকার নোট রয়েছে। ফাইল ছবি।

ছ’বছর আগে নোট বাতিল করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কালো টাকা মুছে ফেলার দাবি করলেও বাস্তবে ২০০০ টাকা চালুর ফলে কালো টাকা মজুত করে রাখার সুবিধে হয়ে গিয়েছিল বলে দাবি বিরোধীদের। তাঁদের মতে, সেই ব্যর্থতা ধামাচাপা দিতেই এ বার মোদী সরকার ভুল শুধরে ২০০০ টাকার নোট তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা মনে করছেন, এর ফলে ২০০০ টাকার গোলাপি নোটে মজুত করে রাখা কালো টাকা শেষ হবে। কিন্তু এ বারও সরকারের লক্ষ্য ব্যর্থ হবে বলে বিরোধীরা মনে করছেন। তাঁদের অভিযোগ, প্রথম বার নোট বাতিলের সময়ে সাধারণ মানুষের হেনস্থা হয়েছিল। এ বারও একই ভাবে সাধারণ মানুষের হেনস্থা হবে। কারণ এর ফলে কবে, কোন নোট বাতিল হয়ে যাবে, তা নিয়ে নতুন করে আশঙ্কা তৈরি হবে। আমজনতার মধ্যে যাঁদের কাছে ২০০০ টাকার নোট রয়ে গিয়েছে, তাঁরাও অনিশ্চয়তায় ভুগবেন।

Advertisement

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক শুক্রবার জানিয়েছিল, ২০০০ টাকার নোট থাকলে তা ব্যাঙ্কে গিয়ে ভাঙিয়ে নেওয়া যাবে। তবে এক লপ্তে ২০ হাজার টাকার বেশি বদলানো যাবে না। এই ‘এক লপ্তে’-র অর্থ এখনও স্পষ্ট হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, দিনে এক বারই ২০ হাজার টাকা বদলানো যাবে? না কি দিনে একাধিক বার যাওয়া যাবে? সরকারি সূত্র বলছে, কেউ চাইলে একাধিক বার ব্যাঙ্কে যেতে পারেন। কিন্তু খাতায়-কলমে কিছু বলা হয়নি।

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ৩১ মার্চ পর্যন্ত হিসেবে, বাজারে ৩.৬২ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের ২০০০ টাকার নোট রয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের সূত্র বলছে, এর মধ্যে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের ২০০০ টাকার নোট কালো টাকার মালিকদের কাছে রয়েছে। এই সব নোট যখন ব্যাঙ্কে জমা হবে, তখন সে দিকে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির নজর থাকবে। বিরোধীদের প্রশ্ন, যদি কারও কাছে ২০০০ টাকার নোটে বিপুল পরিমাণে কালো টাকা থাকে এবং তিনি একটু একটু করে ব্যাঙ্কে গিয়ে বদলে নিতে পারেন, তা হলে কালো টাকা ধরা পড়বে কী ভাবে?

Advertisement

মোদী সরকারের প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কে ভি সুব্রহ্মণ্যনের মতে, বাজারে এখন ৩.৬ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের ২০০০ টাকার নোট রয়েছে। বাজারে ২০০০ টাকায় লেনদেন কমে গিয়েছে। তিনিও মানছেন, এই নোটের বেশির ভাগটাই কালো টাকা ধরে রাখতে কাজে লাগছে। তাঁর মতে, ৮০ শতাংশ গোলাপি নোটই কালো টাকা মজুত রাখতে কাজে লাগানো হচ্ছে। যার মূল্য প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা।

আজ কর্নাটকে কংগ্রেস সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে অভিযোগ তুলেছেন, এটা আরও এক ‘নোট বাতিল’। এতে ফের সাধারণ মানুষের হেনস্থা হবে। প্রথম বারের নোট বাতিলের ব্যর্থতা ধামাচাপা দিতেই এই সিদ্ধান্ত। খড়্গে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যখনই জাপান যান, তার আগে নোট বাতিলের ফরমান জারি করেন। গত বারও ১ হাজার টাকার নোট বাতিল করে জাপানে চলে গিয়েছিলেন। এ বারও জাপান যাওয়ার আগে ২০০০ হাজার নোট বন্দি করেছেন।’’

কালো টাকা মুছে যাবে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৫০০, ১০০০ টাকার নোট বাতিল করেছিলেন। তার পরে বাজারে নগদের হাহাকার মেটাতে ২০০০ টাকার নোট চালু হয়। তখনই রাহুল গান্ধী প্রশ্ন তুলেছিলেন, ১০০০ টাকার নোট তুলে দিয়ে ২০০০ টাকার নোট চালু করে কী ভাবে কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই হয়? বাস্তবে আয়কর দফতর-সহ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিও বুঝতে পারে, মূলত কালো টাকা নগদে জমিয়ে রাখতেই ২ হাজার টাকার গোলাপি নোট ব্যবহার হচ্ছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবীর ঠিকানা থেকে শুরু করে যে কোনও তল্লাশিতেই কালো টাকা উদ্ধার হলে সেখানে ২ হাজার নোট মিলেছে।

রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠেছে, নোট বদল বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গোলাপি নোট জমার জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। তার পরে ওই নোট বাতিল হবে কি না স্পষ্ট নয়। সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমস্ত গোলাপি নোট তুলে নিয়ে মোদী সরকার কি আসলে বিরোধী শিবিরের কাছে মজুত রাখা নগদে হাত দিতে চাইছে? কারণ তার পরেই একে একে রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, তেলঙ্গানার বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। কংগ্রেস সভাপতির অভিযোগ, মোদীর নোট বাতিলের ফলে ছোট-মাঝারি শিল্প, অসংগঠিত ক্ষেত্রের কোমর ভেঙে গিয়ে অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে। কালো টাকা বা দুর্নীতি দূর হয়নি। এখন মোদী নিজেই কেঁচে গণ্ডুষ করছেন। গোটা বিষয়ে তদন্তের দাবি করেছেন তিনি। নীতি আয়োগের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ অরবিন্দ পানাগড়িয়া বা প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গের মতে, এ বার ২০০০ টাকার নোট তুলে নেওয়ার অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে না। কারণ বাজারে মোট নগদের মাত্র ১০.৮ শতাংশ ২০০০ টাকার নোটে রয়েছে। রাজ্যসভার সাংসদ কপিল সিব্বলের যুক্তি, প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি ছিল নগদ বাড়লেই দুর্নীতি বাড়ে। ২০১৬-র পর থেকে নগদের পরিমাণ বেড়েছে। তা হলে মোদী জমানায় দুর্নীতিও বেড়েছে বলতে হয়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবারই টুইটারে বলেন, ‘‘২ হাজার টাকার নোটবন্দির খামেখেয়ালি ও তুঘলকি সিদ্ধান্তে ফের প্রবল হেনস্থার মধ্যে পড়বেন সাধারণ মানুষ।’’ বিজেপি নেতা অমিত মালব্য, শুভেন্দু অধিকারীর যুক্তি, মমতার ঘনিষ্ঠ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বান্ধবীর বাড়ি থেকে ২০০০ টাকার নোটে কালো টাকা উদ্ধার হয়েছিল বলেই তিনি ক্ষুব্ধ। তৃণমূল শিবিরের পাল্টা যুক্তি, বিজেপি আসলে নিজেই মেনে নিচ্ছে মোদী সরকারের চালু করা ২০০০ টাকার নোটে কালো টাকা মজুত করা হচ্ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন